২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ডিম ও পোল্ট্রির দাম হঠাৎ বৃদ্ধির জন্য মধ্যস্বত্বভোগীদের দায়ী করলো বিপিআইসিসি

শক্তিশালী মনিটরিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং খামারিদের সুরক্ষায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন দাবি
- ছবি : সংগৃহীত

সাম্প্রতিক সময়ে খোলা বাজারে ডিম ও মুরগির হঠাৎ মূল্য বৃদ্ধিতে ভোক্তাদের ভোগান্তি বাড়ায় একই সাথে উদ্বেগ ও দুঃখ প্রকাশ করেছে পোল্ট্রি শিল্পের কেন্দ্রীয় সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি)। এ অনাকাঙ্ক্ষিত মূল্য বৃদ্ধির কারণ হিসেবে ডিমান্ড-সাপ্লাই গ্যাপ ও সুযোগসন্ধানী মধ্যস্বত্বভোগীদের মুনাফা লোটার অপপ্রয়াসকে দায়ী করেছে সংগঠনটি।

সেই সাথে ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে প্রাণিসম্পদ অধিদফতর ও বিপিআইসিসি’র সমন্বয়ে শক্তিশালী মনিটরিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং তৃণমূল খামারিদের সুরক্ষায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তার সঠিক বাস্তবায়নের উপর গুরুত্বারোপ করেছে বিপিআইসিসি।

শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমন মতামত প্রকাশ করেছে সংগঠনটি।

এতে আরো বলা হয়, গত ১৬ আগস্ট বিপিআইসিসি’র জরুরি বৈঠকে হঠাৎ মূল্য বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধান বিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৬ আগস্ট পাইকারি বাজারে মুরগির কেজি প্রতি দর ছিল ১৩৬ টাকা। বাদামি ডিমের দর ছিল ৯.১০ টাকা ও সাদা ডিমের দর ছিল ৮.৭০ টাকা কিন্তু ওইদিন রাত ১২টার পর থেকে ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন ও কেরোসিনের নতুন বর্ধিত দর কার্যকর হওয়ার ঘোষণা এলে পরদিন অর্থাৎ ৭ অক্টোবর থেকে বাস-ট্রাক-পিকআপসহ পরিবহন সংকট দেখা দেয়। অনেক মালিক পরিবহন বন্ধ করে রাখে, অনেকে আবার অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে। যেহেতু ডিম ও মুরগির ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশের যোগান দেয় গ্রামীণ তৃণমূল খামারিরা, তাই পরিবহন সংকটে সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন সৃষ্টি হওয়ায় ঢাকাসহ অন্যান্য জেলা ও বিভাগীয় শহরে ডিম ও মুরগির সরবরাহ কমে যায়, বাড়ে দাম। ১৩ ও ১৪ আগস্ট মধ্যস্বত্বভোগীদের কারসাজিতে দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে। পাইকারি পর্যায়ে বাদামি ডিম ১০.৯০ টাকায় এবং ব্রয়লার মুরগির দর ১৭০-১৭৫ টাকায় উঠে; টিসিবি’র তথ্য অনুযায়ী খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম ১৩.৭৫ টাকা এবং ব্রয়লার মুরগির দাম কেজি প্রতি ২০০ টাকায় উন্নীত হয়। এ দাম বৃদ্ধিতে সাধারন খামারিদের কোনো হাত নেই। পরিবহন ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়ে এলে ১৫ আগস্ট থেকে দর পুনরায় কমতে শুরু করে।

সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার ব্রয়লার মুরগির পাইকারি দর প্রতি কেজিতে প্রায় ৪০-৪৫ টাকা কমে ১৩০-১৩৫ টাকায় এবং প্রতি এক শ’ বাদামি ডিমের দর ১৩০ টাকা কমে ৯৬০ টাকায় (প্রতিটি ৯.৬০ টাকা) ও সাদা ডিম ১৪০ টাকা হ্রাস পেয়ে ৯৫০ টাকায় (প্রতিটি ৯.৫০ টাকা) বিক্রি হয়েছে।

বিপিআইসিসি সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, বর্তমান সময়ে এক কেজি ওজনের ব্রয়লার মুরগি উৎপাদনে খামারির খরচ পড়ে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা এবং ডিমের খরচ ন্যূনতম ৯.৫০ টাকা। আন্তর্জাতিক বাজারে ফিড তৈরির কাঁচামালের দামের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, ডলারের বিপরীতে টাকার ব্যাপক দরপতন, পণ্য আমদানিতে মাত্রাতিরিক্ত জাহাজ ভাড়া, লোডশেডিং, ইত্যাদি কারণে ডিম ও মুরগির মাংসের উৎপাদন খরচ ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে উদ্বেগের বিষয়টি হচ্ছে খামারিরা লোকসান গুনলেও মধ্যস্বত্বভোগীরা অনায্য মুনাফা লুটছে ফলে খামারি ও ভোক্তা উভয়েই প্রত্যাশিত প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

মসিউর বলেন, গত ৬ আগস্টের আগে খামারিরা ব্রয়লার মুরগি কেজি প্রতি গড়ে ১২৮-১৩১ টাকায় অর্থাৎ প্রতি কেজিতে ১২-১৪ টাকা লোকসানে বিক্রি করলেও মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভ করেছে কেজিতে ২৭-৩২ টাকা।

তিনি বলেন, বাজার ব্যবস্থায় মধ্যস্বত্বভোগীরা থাকবেই তবে লাভের পরিমাণটা যৌক্তিক হতে হবে। প্রান্তিক খামারিরা নায্যমূল্য না পেলে উৎপাদন ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। তাই প্রান্তিক খামারিদের সুরক্ষায় সরকারকে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

মসিউর বলেন, সরকারের যতগুলো দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা তৈরি হয়েছে সেখানে মূলত ডেইরি ও মৎস্য খাতই প্রাধান্য পেয়েছে অথচ আমিষের চাহিদা পূরণে ৪০-৫০ শতাংশ অবদানই পোল্ট্রিখাতের।

ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (বিএবি) সভাপতি কাজী জাহিন হাসান বলেন, পোল্ট্রির সাপ্লাই সাইড দুর্বল হয়ে পড়ছে কারণ লোকসানের ভয়ে অনেক খামারি এ পেশা ছেড়ে চলে গেছেন।

তিনি বলেন, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে এক দিন বয়সী সাদা ব্রয়লার বাচ্চার সাপ্তাহিক উৎপাদন যেখানে ছিল ১ কোটি ৮০ লাখের ওপরে বর্তমানে তা ১ কোটি ৩০-৩৫ লাখে নেমে এসেছে।

জাহিন বলেন, গত মে মাসে ব্রয়লার বাচ্চা গড়ে ১৬.৬৫ টাকা ও লেয়ার বাচ্চা ২০.৭৪ টাকায়, জুন মাসে ব্রয়লার বাচ্চা গড়ে ৮.০৭ টাকা ও লেয়ার বাচ্চা ১৩ টাকায়, জুলাই মাসে ব্রয়লার বাচ্চা ১৮.৭১ টাকা ও লেয়ার বাচ্চা ১৩.৯৫ টাকায় এবং আগস্ট মাসে এ পর্যন্ত ব্রয়লার বাচ্চা গড়ে ২৮.০৬ টাকা ও লেয়ার বাচ্চা ৩১.৫৩ টাকায় বিক্রি হয়েছে- যেখানে গড় উৎপাদন খরচ ১৪০-১৪৫ টাকা।

কাজেই দেখা যাচ্ছে ব্রিডার খামারগুলো লোকসানে বাচ্চা বিক্রি করার পরও খামারিরা বাচ্চা কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন না। এটা উদ্বেগজনক।

ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (এফআইএবি) সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ বলেন, কোভিড মহামারির ধকল যখন কিছুটা সহনীয় হতে শুরু করেছে ঠিক তখনই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হলে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে ফিড তৈরির কাঁচামালের দাম হু হু করে বাড়তে থাকে। যেহেতু ফিড তৈরির অত্যাবশ্যকীয় কাঁচামাল ভুট্টা, সয়াবিনসহ অধিকাংশ উপকরণই আমদানি-নির্ভর তাই কাঁচামালের দর বৃদ্ধি ছাড়াও জাহাজ ভাড়া ও ডলারের দর বৃদ্ধির কারণে উৎপাদন খরচে কোনভাবেই লাগাম টানা যাচ্ছে না।

খালেদ বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বজুড়েই একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। খাদ্য রফতানিকারক দেশগুলোও রফতানিতে মাঝে-মধ্যেই রাশ টেনে ধরছেন। তাই নিজেদের খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে মনোযোগী হতে হবে; ভর্তুকী দিয়ে হলেও চাষি ও খামারিদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে।

বিপিআইসিসি সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, পোল্ট্রির উপর সাধারণ মানুষের আস্থা ও নির্ভরশীলতা বেড়েছে কারণ তুলনামূলক কম দামে এ খাতটি উন্নতমানের প্রাণিজ আমিষ সরবরাহ করে আসছে। তিনি বলেন, উৎপাদন খরচ কমিয়ে এনে কিভাবে আরো সাশ্রয়ীমূল্যে ডিম ও মুরগি ভোক্তার কাছে পৌঁছানো যায় সে চেষ্টাই তারা করছেন। সরকার আন্তরিকভাবেই সহযোগিতা করছেন তবে তা আরো বাড়াতে হবে।

মসিউর বলেন, এমন কোনো কিছু করা ঠিক হবে না যাতে খামারি ও সরবরাহকারীদের মাঝে আতংক তৈরি হয়। তিনি বলেন, আমরা সকলেই এখন একটি সংকটকালীন সময়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। কাঁচামালের দাম কমলে, ডলারের দর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলে পরিস্থিতি আপনাআপনি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। এ সংকটকালীন পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারসহ সকলের সহযোগিতা চান মসিউর।


আরো সংবাদ



premium cement
ঈদের ছুটিতে ঢাকায় কোনো সমস্যা হলে কল করুন ৯৯৯ নম্বরে : আইজিপি সিরাজগঞ্জে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের নৈশ প্রহরীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার ৬ দাবিতে উত্তাল বুয়েট, ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন মোরেলগঞ্জে মাছ ধরতে গিয়ে নদীতে ডুবে কিশোরের মৃত্যু আল-আকসায় কোনো ধরণের সহিংসতা ছাড়াই অনুষ্ঠিত হলো তৃতীয় জুমআর জামাত ‘পেশাগত স্বার্থে সাংবাদিকদের ঐক্যবব্ধ হতে হবে’ গাজাবাসীর প্রধান কথা- ‘আমাদের খাবার চাই’ অধিকার প্রতিষ্ঠায় দেশপ্রেমিক জনতার ঐক্যের বিকল্প নেই : ডা: শফিকুর রহমান সোনাগাজীতে জামাতে নামাজ পড়ে বাইসাইকেল পুরস্কার পেল ২২ কিশোর গফরগাঁওয়ে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা : আমিনুল

সকল