১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সৌদি আরব যেতে গৃহকর্মীদের বীমায় কতটা লাভ হবে

সৌদি আরব থেকে ফিরত আসা কয়েকজন নারী। - ছবি : বিবিসি

সৌদি আরবের মিনিস্ট্রি অফ হিউম্যান রিসোর্সেস অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্টের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেখানে থাকা গৃহকর্মী ও তাদের নিয়োগদাতাদের মধ্যকার চুক্তিতে ইন্স্যুরেন্স বা বীমার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং খুব শিগগিরই সরকারের তরফ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়ার প্রক্রিয়া এখন চলছে।

দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন আল আকবারিয়াতে প্রচারিত একটি অনুষ্ঠানে এ তথ্য দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সৌদি গ্যাজেট পত্রিকা।

জেদ্দায় বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মো: নাজমুল হক বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ইন্স্যুরেন্সের বিষয়টি খুবই ভালো একটি সিদ্ধান্ত যা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চলছে। এর বাস্তবায়ন হলে নিয়োগকর্তা ও গৃহকর্মী- দু’পক্ষই সুরক্ষা পাবে।

বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সৌদি আরবে প্রায় তিন লাখের মতো গৃহকর্মী এখন কাজ করছে।

কিন্তু এখন এ ধরনের গৃহকর্মীদের জন্য বিশেষ কোনো সুরক্ষার ব্যবস্থা নেই। অর্থাৎ কেউ যদি সেখানে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করার সময় অসুস্থ হয় বা মারা যায় তার জন্য নিয়োগদাতা বা রিক্রুটকারী প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো অর্থ পাওয়া যায় না।

অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশে আসার পর এখানকার কল্যাণ তহবিল থেকে মারা যাওয়া বা অসুস্থ ব্যক্তি ও তাদের পরিবারকে সহায়তা করা হয়।

নাজমুল হক বলছেন, ইন্স্যুরেন্স সিস্টেম চালু হলে এসব ক্ষেত্রে গৃহকর্মীরা যেমন উপকৃত হবেন তেমনি নিয়োগদাতাদের জন্যও এতে সুরক্ষার ব্যবস্থা থাকবে।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে গৃহকর্মী নেয়ার জন্য চুক্তি হয়েছিল। এর মাধ্যমে সাত বছর বন্ধ থাকার পর বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে জনশক্তি রফতানি শুরু হয়েছিল।

সৌদি সরকার তখন দুই লাখের বেশি নারীকর্মীর চাহিদা জানিয়েছিল। বিপরীতে বাংলাদেশ প্রতি মাসে ১০ হাজার নারী গৃহকর্মী হিসেবে কাজের জন্য পাঠানোর কথা বলেছিল।

এখন সব মিলিয়ে তিন লাখের মতো বাংলাদেশী গৃহকর্মী সেদেশে কাজ করছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছে।

কী আছে নতুন পরিকল্পনায়
সৌদি আরবে মূলত নিয়োগদাতা ও গৃহকর্মীর মধ্যে যে চুক্তি হয় সেটি করা হয় দেশটির নিয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে।

নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ঘোষণা আসার পর ওই চুক্তিতেই ইন্স্যুরেন্সের বিষয়টি উল্লেখ করা হবে এবং নিয়োগদাতা ওই ইনস্যুরেন্সের প্রিমিয়াম শোধ করবেন।

এর ফলে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে কোনো গৃহকর্মী চলে গেলে সেখান থেকে ক্ষতিপূরণ নিয়োগদাতাকে দেয়া হবে।

আবার কাজ করার সময় কোনো গৃহকর্মী মারা গেলে বা অসুস্থ হলে ইন্স্যুরেন্সের অর্থ থেকেই এককালীন টাকা ও চিকিৎসা সহায়তা বাবদ অর্থ পাবে।

সৌদি আরবের এখনকার নিয়ম অনুযায়ী একজন গৃহকর্মী কাজ শুরুর তিন মাসের মধ্যে চলে গেলেই কেবল তিনি রিক্রুটমেন্ট প্রতিষ্ঠান থেকে আরেকজন গৃহকর্মী পেয়ে থাকেন নতুন করে কোনো অর্থ দেয়া ছাড়াই।

কিন্তু গৃহকর্মী তিন মাস পরে যদি কাজ ছেড়ে দেন তাহলে নিয়োগদাতাকে কোনো বিকল্প দেয়া হয় না। আবার এজন্য কোনো ক্ষতিপূরণও তিনি পান না। যদিও একজন গৃহকর্মীর জন্য সৌদি নিয়োগদাতাকে যথেষ্ট অর্থ ব্যয় করতে হয়।

নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার পর এসব ক্ষেত্রে নিয়োগদাতা ক্ষতিপূরণ পাবেন ইন্স্যুরেন্সের টাকা থেকেই।

অন্যদিকে কোনো নিয়োগদাতা চুক্তি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা গৃহকর্মীকে না দিলে গৃহকর্মী যদি অভিযোগ করে সেটি প্রমাণ করতে পারেন তাহলে তিনি এই ইন্স্যুরেন্সের টাকা থেকে ক্ষতিপূরণ পাবেন।

গৃহকর্মী বিষয়ে ইন্স্যুরেন্সের এ পরিকল্পনা চূড়ান্ত হচ্ছে সৌদি আরবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহযোগিতায়।

ঢাকায় কর্মকর্তারা বলছেন, এক বছর আগেই এমন একটি পরিকল্পনা করা হলেও শেষ পর্যন্ত সেটি চূড়ান্ত করা হয়নি। কিন্তু এবার সৌদি কর্তৃপক্ষ এটি চূড়ান্ত করে এনেছেন এবং যেকোনো সময়ই এর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হবে।

এটি হলে যে রিক্রুটমেন্ট অফিসের মাধ্যমে নিয়োগকর্তা ও গৃহকর্মীর চুক্তি হয় তারাই ইন্স্যুরেন্সের জন্য নিয়োগদাতাকে প্রতি মাসে কী পরিমাণ অর্থ জমা দিতে হবে সেটি জানিয়ে দেয়া হবে।

একই সাথে ইন্স্যুরেন্স সম্পর্কিত তথ্যগুলো চুক্তিপত্রেও সংযোজিত থাকবে। যাতে করে নিয়োগদাতা ও গৃহকর্মী- উভয়ের স্বার্থই রক্ষিত হতে পারে।

উল্লেখ্য, সৌদি আরবে যাওয়ার ক্ষেত্রে নারীকর্মীদের সমস্ত খরচ বহন করে সৌদি নিয়োগকারী সংস্থা।

কিন্তু গৃহকর্মীদের নির্যাতনসহ নানা ধরনের অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছিল ফেরত আসা কিছু কর্মীদের দিক থেকে।

যদিও গৃহকর্মীর কাজের প্রতি বাংলাদেশী নারীদের আকৃষ্ট করতে সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে বিনা খরচে এক মাসের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এছাড়া নারীকর্মীদের বিদেশে পাঠানোর আগে স্বল্প খরচে বাংলাদেশে সরকারি ২৬টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আরবি ভাষা, গৃহস্থালীর কাজকর্ম এবং সৌদি নিয়মকানুন শেখানো হয়।

এরপরেও সৌদি আরবে কাজের সময়ে মারা গেলে বা কেউ অসুস্থ হলে তাদের জন্য ইন্স্যুরেন্স প্রথা দারুণ উপকারী হবে বলে বলছেন কর্মকর্তারা।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement