২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

বন্যায় ১৫ জেলায় ৬৬৬২ খামার ক্ষতিগ্রস্ত, আর্থিক ক্ষতি ৩৩১ কোটি টাকা

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। - ছবি : নয়া দিগন্ত

এবারের বন্যায় সিলেটসহ ১৫ জেলায় ৬ হাজার ৬৬২টি খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার আর্থিক মূল্য ৩৩১ কোটি ৪৩ হাজার ৭৫০ টাকা। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিলেট বিভাগের ৪ জেলায় ৫৫৯০টি খামার।

বন্যায় আক্রান্ত জেলাগুলোতে গবাদিপশু নিয়ে বিপদে পড়েছেন খামারিরা। বেড়ে গেছে পশুখাদ্যের দামও। ফলে কোরবানির ঈদে গবাদি পশুর দাম বাড়তে পারে।

শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘পদ্মা সেতুর সম্ভাবনা : দেশীয় পশুতে কোরবানি, খামারিদের সমস্যা ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে এ তথ্য জানানো হয়। বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সহায়তায় সেমিনারের আয়োজন করে ফিশারিজ অ্যান্ড লাইভস্টক জার্নালিস্টস ফোরাম (এফএলজেএফ)।

এফএলজেএফ’র সভাপতি এম এ জলিল মুন্না রায়হানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা: মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, কেন্দ্রীয় ভেটেরিনারি হাসপাতালের পরিচালক ডা: মো: শফিউল আহাদ সরদার, বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন, এফএলজেএফ’র সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম সুমন ও বিডিএফএ’র সাধারণ সম্পাদক শাহ মোহাম্মদ এমরান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এফএলজেএফ’র অর্থ সম্পাদক কাওসার আজম।

এছাড়া সেমিনারে পাবনার খামারী ও চাটমোহর উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ, সিলেটের মো: আনোয়ার হোসেন, বরিশালের ফেরদৌস বক্তব্য রাখেন এবং তাদের সমস্যা ও দাবি দাওয়া তুলে ধরেন।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, গত বছর (২০২১) দেশে কোরবানিযোগ্য গরু, ছাগল, মহিষসহ অন্যান্য পশু প্রস্তুত ছিল ১ কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৫টি। গতবার কোরবানি হয়েছিল ৯০ লাখ ৯৩ হাজার ২৪২টি। অর্থাৎ ২৮ হাজারেরও বেশি কোরবানির পশু অবিক্রিতই থেকে যায়। যেহেতু করোনা পরিস্থিতি গত বছরের চেয়ে উন্নত, তাই এবার বেশি কোরবানি হবে।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতর জানিয়েছে, এবার কোরবানির পশুর চাহিদা ধরা হয়েছে ৯৭ লাখ ৭৫ হাজার ২৩৫টি। চাহিদার বিপরীতে দেশের আট বিভাগে মোট ১ কোটি ২১ লাখ ৩৮৯টি কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু মজুদ আছে। কোরবানির চাহিদা ও প্রাপ্যতার হিসাব করলে দেখা যায়, এ বছর প্রায় সাড়ে ২৩ লাখ গবাদিপশু অবিক্রিতই থেকে যাবে।

মূল্য প্রবন্ধে আরো বলা হয়, দেশে কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর অভাব নেই। কিন্তু অঞ্চলভেদে কোরবানির পশুর প্রাপ্যতা ও চাহিদার মধ্যে ফারাক রয়েছে। অতিরিক্ত মজুদ থাকা অঞ্চল থেকে ঘাটতিতে থাকা অঞ্চলের হাটে গবাদিপশু নিয়ে যাওয়া সহজ করতে হবে। এ জন্য সড়ক যানজট ও চাঁদাবাজমুক্ত করার সুপারিশ করা হয়।

অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, পদ্মা সেতুর কারণে এবার ঈদে খামারিরা লাভবান হবেন। কোরবানির পশু নিয়ে এক সময় ঘাটে এসে দুই-তিন দিনও অপেক্ষা করতে হতো। পদ্মা সেতু দিয়ে যারা ঢাকা ও দেশের অন্যান্য জায়গায় কোরবানির পশু নিয়ে আসবেন তাদের জন্য পশু পরিবহনের ক্ষেত্রে অভাবনীয় সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এতে একদিকে যেমন কোরবানির জন্য সম্প্রসারিত জায়গা হচ্ছে, অপরদিকে রাস্তা-ঘাটে ভয়ঙ্কর অবস্থা তৈরি হচ্ছে না।

মন্ত্রী বলেন, এ বছর আমরা নিয়ম করে দিয়েছি, যিনি কোরবানির পশু নিয়ে আসবেন তিনি পশু ঢাকায় না সিলেটে কোথায় বিক্রি করবেন সেটা তার ব্যাপার। পথে কোনো বাজারে তাকে পশু নামাতে জোর করা যাবে না। খামারিদের আরেকটি সুযোগ করে দেয়া হয়েছে, বাড়িতে বা রাস্তায় পশু বিক্রি করলে তাদের কোনো হাসিল দিতে হবে না। কেউ খামারিদের বাজারে এনে পশু বিক্রিতে বাধ্য করতে পারবে না। কোরবানির পশু বাড়িতে বিক্রি করলে নিকটবর্তী বাজার ইজারাদার চাঁদা আদায়ের কথা বলতে পারবে না।

শ ম রেজাউল করিম বলেন, রাস্তাঘাট অথবা যেখানে যান চলাচলে বিব্রতকর অবস্থা সৃষ্টি হয় সেখানে কোনো পশুর হাট বসতে পারবে না। নির্ধারিত জায়গায় হাট বসবে। প্রতিটি স্বীকৃত হাটে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের ভেটেরিনারি মেডিক্যাল ব্যবস্থাপনা থাকবে, যাতে অস্বাস্থ্যকর ও রোগগ্রস্ত পশু কেউ যেন সামনে নিয়ে না আসে অথবা সেটা বিক্রি যেন না হয়। হাটে বিনামূল্যে পশু পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়াও এবারের হাটে আর্থিক লেনদেনের জন্য স্মার্ট ব্যাংকিং ব্যবস্থা থাকবে। এভাবে ক্রেতা-বিক্রেতা ও ভোক্তার জন্য একটি নিরাপদ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত হবে।

ক্রান্তিকালে খামারিরা যাতে টিকে থাকতে পারে সেজন্য রাষ্ট্র পদক্ষেপ নিয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী এ সময় বলেন, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। এবার বৃহত্তর সিলেট ও ঢাকার একটি অংশে প্রাণিসম্পদ খাতে যে বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে, সেটা নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ করা হয়েছে। প্রণোদনা দিয়ে খামারিরা যাতে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারে এবং এ খাত যাতে ঘুরে দাঁড়াতে পারে সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। বৃহত্তর সিলেটে স্মরণাতীতকালের বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস হলেও পশু মৃত্যুর সংখ্যা বিশাল নয়। তারপরও ওই অঞ্চলের ক্ষতির বিষয়টি মাথায় রেখে বরিশালসহ দেশের অন্যান্য এলাকার উদ্বৃত্ত পশু এসব ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বিপণনের জন্য উৎপাদকদের নিয়ে মেতে হবে। পশু পরিবহনে পথে কোনো বাধা থাকবে না। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের কারণে দ্রুততার সাথে এক অঞ্চলের পশু অন্য অঞ্চলে নিয়ে যাওয়া এখন সহজ। এক্ষেত্রে খামারিদের এগিয়ে আসতে হবে।

গবাদিপশুর খাদ্য নিয়ে মন্ত্রী বলেন, পশু খাদ্য তৈরির অন্যতম উপাদান প্রোটিন বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এ আমদানিতে উৎসে করসহ অন্যান্য কর সরকার শিথিল করে দিয়েছে। দেশে পশু খাদ্য উৎপাদনের জন্য সরকার এ কর অব্যাহতি দিয়েছে। গুড়া দুধ উৎপাদনে দেশে খামারিরা কারখানা স্থাপন করলে বিদেশ থেকে যন্ত্রপাতিসহ অন্যান্য আমদানিতে কর মওকুফের ব্যবস্থা সরকার করবে।

ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের সমস্যা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে বলেও এ সময় জানান মন্ত্রী। এ সমস্যা সমাধানের উপায় বের করতে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে যাওয়ার বিষয়টিও আশ্বস্ত করেন তিনি।

বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন ডেইরি উন্নয়ন বোর্ড গঠন, গোখাদ্যের মূল্য কমানো, উন্নত জাতের পশু আমদানির সুযোগ ও বিদ্যুৎ বিল কমানোসহ নানা দাবি তুলে ধরেন।

গোখাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও বন্যায় প্রাণিসম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় কোরবানির ঈদে গবাদি পশুর দাম বাড়তে পারে বলে মনে করেন তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement