২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দুর্যোগে ক্ষতির কারণেই চাল আমদানি?

দুর্যোগে ক্ষতির কারণেই চাল আমদানি? - ফাইল ছবি

সরকারের নীতিনির্ধারকেরা প্রতিনিয়তই বলছেন, ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে৷ তাহলে প্রতি বছর কেন এত চাল আমদানি করতে হচ্ছে? গত অর্থ বছরে তো বাংলাদেশ চাল আমদানিতে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল।

ধান-চাল নিয়ে যারা কাজ করেন তারা বলছেন, দুর্যোগে ক্ষতি আর মজুদ শক্ত করতেই চাল আমদানি করতে হয়৷ এ বছরও ৩ লাখ টন ধান দুর্যোগে নষ্ট হয়েছে৷ পাশাপাশি মানুষের জন্য যেটুকু প্রয়োজন সেটা এখানে উৎপাদন হচ্ছে৷ কিন্তু গবাদি পশু আর পোল্ট্রির জন্য বছরে লাগে ৩৬ লাখ টন চাল৷ সেটা সামাল দিতেই আমদানি করতে হচ্ছে৷ এবার গমের সঙ্কটের কারণে ধানের উৎপাদন বাড়লেও চাল আমদানিও বাড়তে পারে৷ কারণ নিম্নবিত্ত মানুষ অনেকেই রুটির পরিবর্তে এখন ভাত খাচ্ছেন৷

ধান উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের কথা বললেও এত চাল কেন আমদানি করতে হচ্ছে? জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, বাংলাদেশের একজন মানুষও না খেয়ে থাকবে না৷ দুর্যোগ আর গমের সঙ্কটের কারণে এবার কি চালের আমদানি বাড়তে পারে? এ প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি মন্ত্রী, আর কোনো মন্তব্যও করতে চাননি৷

প্রতি বছরই বাংলাদেশ চাল আমদানি করে৷ এর মধ্যে আবার রফতানিও হচ্ছে৷ গত এক যুগে সুগন্ধি চালের রফতানি বেড়েছে ১০ গুণের বেশি৷ গত দুই বছরে যা ছুঁয়েছে ১০ হাজার টনের মাইলফলক৷

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ উইংয়ের তথ্য বলছে, দেশ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর ৯ হাজার ৫১৭ টন সুগন্ধি চাল বিদেশে রফতানি হয়েছে৷ আগের অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ৮৭৯ টন। এছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৫ হাজার ৮০৫ টন এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৮ হাজার ২১০ টন চাল রফতানি হয়। অথচ ২০০৯-১০ অর্থবছরে মাত্র ৬৬৩ টন সুগন্ধি চাল রফতানি করেছিলেন ব্যবসায়ীরা। যেটা বেড়ে প্রায় ১১ হাজার টন ছুঁয়েছে৷

এ বছর দুর্যোগের কারণে কী পরিমাণ ধান নষ্ট হয়েছে তা জানা গেছে কিনা জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো: বেনজীর আলম বলেন, প্রতি বছরই দুর্যোগের কারণে কিছু না কিছু ধান নষ্ট হয়, সেই প্রস্তুতিও আমাদের থাকে৷ তবে গত বছর ৪০ লাখ ৯২ হাজার বর্গ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ হয়েছিল৷ এ বছর ৪৯ লাখ ৬৩ হাজার বর্গ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে৷ এবার দুর্যোগের কারণে ১৮ হাজার হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়েছে৷ এতে ৩ লাখ টনের মতো ফলন কম হবে। গত বছর আমাদের উৎপাদন ছিল ২ কোটি ১৬ টন৷ আর এবার উৎপাদন হবে ২ কোটি ৮ লাখ টন৷ এ বছর আমাদের উৎপাদন বাড়বে৷ তবে বছর শেষ হলে হিসাবটা বোঝা যাবে৷

আমাদের চাহিদার তুলনায় এই উৎপাদন কম না বেশি? জানতে চাইলে আলম বলেন, আমাদের নিজেদের খাওয়ার জন্য যে চাল প্রয়োজন সেটা এই উৎপাদন দিয়ে হয়ে যায়৷ কিন্তু সরকারকে তো আপদকালীন বড় ধরনের মজুদ রাখতে হয়৷ সেটাই আমদানি করা হয়৷ এর বাইরে ৩৬ লাখ টন চাল লাগে পোল্ট্রি আর গবাদি পশুর খাবারের জন্য৷ এই দুই সেক্টরই আমাদের এখানে বেড়েছে৷ ফলে সব মিলিয়ে তো কিছু চাল আমদানি করতেই হয়৷ এবারও আমাদের সেই প্রস্তুতি আছে, কোনো সমস্যা হবে না৷

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, গত কয়েক বছরে দেশে আমদানি নির্ভরতা বেড়েছে৷ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আমদানি নির্ভরতার হার ছিল ১৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ৷ তবে এ নির্ভরতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে৷ ওই বছর দেশে খাদ্যশস্যের আমদানি নির্ভরতার হার দাঁড়ায় ২৬ দশমিক ১৪ শতাংশে৷ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ওই সময় দেশে প্রায় ১ কোটি টন খাদ্যশস্য আমদানি করতে হয়েছিল৷ এর আগে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আমদানি নির্ভরতার হার ছিল ১৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ৷ তার আগের অর্থবছরে (২০১৫-১৬) এ হার ছিল ১২ দশমিক ৮২ শতাংশ৷ ২০২০-২১ বাণিজ্য বছরে বাংলাদেশ ২৬ লাখ ৫০ হাজার টন চাল আমদানি করেছে৷ যা বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ৷
সূত্র : ডয়চে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement