১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

টানা পতনের বৃত্ত ভাঙল শেয়ারবাজার

টানা পতনের বৃত্ত ভাঙল শেয়ারবাজার - ছবি : সংগৃহীত

পরপর দ্বিতীয় দিন ব্যাংক খাতে উত্থান সচরাচর দেখা না গেলেও সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে তা-ই দেখা গেল। এক মাসের বেশি সময় ধরে পতনের মধ্যে থাকা বস্ত্র খাতও ঘুরে দাঁড়াল। বেশির ভাগ শেয়ারের দর বাড়ল বিমা খাতেও। আর্থিক খাতেও দিনটি ভালোই গেছে।

তিন বড় মূলধনি কোম্পানির শেয়ারের দরপতনের কারণে সূচকে ভাটা পড়লেও প্রধানত এই চার খাতে ভর করে পরপর তিন দিন উত্থান হলো পুঁজিবাজারে।

গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া দর সংশোধন চলতি সপ্তাহের প্রথম দুই দিন ঢালাও পতনে রূপ নেয়ার পর এই ঘটনাটি বিনিয়োগকারীদের আরো আস্থাশীল করে ‍তুলবে।

চলতি সপ্তাহের প্রথম দুই দিন রবি ও সোমবার সূচক পড়েছে ১৯০ পয়েন্ট। তবে মঙ্গলবার ঘুরে দাঁড়িয়ে সূচক বাড়ে ১২০ পয়েন্ট। পরের দিন ৬ পয়েন্টের পর তৃতীয় দিন বৃস্পতিবার বাড়ল ৫০ পয়েন্ট। অর্থাৎ তিন দিনে বাড়ল ১৭৬ পয়েন্ট।

এই উত্থানটা খুবই জরুরি ছিল বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাসের জন্য। এর কারণ সংশোধনের পঞ্চম ও ষষ্ঠ সপ্তাহে বাজার ধসের পর্যায়ে চলে যাওয়া, সূচক ৭ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে যাওয়ার পর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সেই আতঙ্ক কাটতে শুরু করেছে।

বিনিয়োগকারীরা যে আস্থাশীল হয়ে উঠছেন, তার প্রমাণ লেনদেনেই। আগের দিন ৩৭টি কোম্পানি লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ১৩টি কোম্পানি ল্যভাংশ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার পরও শেয়ার কেনাবেচা বেড়েছে। লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৭২৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন ছিল ১ হাজার ৪৯৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা।

এই লেনদেন গত ১৩ অক্টোবরের পর সর্বোচ্চ।

শেয়ারপ্রতি ১৭ টাকা লভ্যাংশ ঘোষণার পর ইউনাইটেড পাওয়ারের শেয়ার দর কমে গেছে। শেয়ারপ্রতি সাড়ে ১২ টাকা অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ দেয়া ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানির পরপর দ্বিতীয় দিনের দরপতন হয়েছে। প্রথম প্রান্তিকে আগের বছরের তুলনায় আয় কমে যাওয়া ওয়ালটন ইন্ডাস্ট্রিজেরও দরপতন হয়েছে। কেবল এই তিনটি কোম্পানি দর ধরে রাখতে পারলেই বড় উত্থান দেখত পুঁজিবাজার।

বস্ত্র খাতের জয় জয়কার

বৃহস্পতিবার লেনদেনে দিনের সর্বোচ্চ দর বৃদ্ধি পাওয়া প্রথম সারির নয়টির সবকটি ছিল বস্ত্র খাতের। এছাড়া সর্বোচ্চ ৮ শতাংশ পর্যন্ত দর বৃদ্ধি পাওয়া ২৮টি কোম্পানিগুলোর মধ্যে বস্ত্র খাতের ছিল ২১টি। বস্ত্র খাতের কোম্পানির অর্থবছর শেষ হয় জুনে। ফলে বিনিয়োগকারীরাও এই সময়ে অপেক্ষা থাকেন এ খাতের ভালো মুনাফার খবরের। আর বিনিয়োগও করেন সেই সময়।

এখন মুনাফার বিপরীতে লভ্যাংশ ঘোষণার মাধ্যমে শেয়ারের দর ‍বৃদ্ধি এখাতে যারা আগে বিনিয়োগ করেছেন তারা অনেকটাই খুশি।লেনদেনে হামিদ ফেব্রিক্সের দর বেড়েছে ৬৭.২০ শতাংশ, মালেক স্পিনিংয়ের বেড়েছে ২৩.৭২ শতাংশ। আরগন ডেনিমের ১২.৬৫, তসরিফার ১১.৯৫ এবং এইচআর টেক্সটাইলের ১০.৫৩ শতাংশ।

এ ছাড়া সায়হাম কটনের শেয়ারের দর ১০ শতাংশ, এস্কোয়ার নিটের ৯.৯৬ শতাংশ, সায়হাম টেক্সটাইলের ৯.৯৪ শতাংশ, সিমটেক্সের ৯.৮৮ শতাংশ, মতিন স্পিনিংয়ের ৯.৮২ শতাংশ, পিডিএলের ৯.৭৯ শতাংশ দর বেড়েছে।

এদিন এ খাতের লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ৪৫টি, কমেছে কমেছে ১০টির, অপরিবর্তিত ছিল তিনটির। এই খাতে লেনদেন হয়েছে মোট ২৮৪ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন ছিল ১০১ কোটি ৩০ লাখ টাকা।

এদিন সূচক বাড়ানোয় প্রধান ভূমিকায় থাকা ১০টি কোম্পানির মধ্যে বস্ত্র খাতের ছিল দুটি। এগুলো হলো মালেক স্পিনিং ও হামিদ ফেব্রিক্স।

ব্যাংকে টানা দ্বিতীয় দিন দর বৃদ্ধি

পুঁজিবাজারে অবমূল্যায়িত হিসেবেই ধরা হয় এই খাতটিকে। বছর বছর লভ্যাংশ আসে আকর্ষণীয়, কিন্তু শেয়ারদর থাকে তলানিতেই। এ নিয়ে নানা আলোচনার মধ্যে সম্প্রতি বিনিয়োগকারীদের খাতটির প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠার প্রবণতা স্পষ্ট হয়েছে। এর মধ্যে টানা দুই দিন দল বেঁধে প্রায় সব শেয়ারের দর বাড়তে দেখা গেল, যা পুঁজিবাজারে বিরলই বলা যায়।

গত কয়েক মাসে কোনো কোনো দিন ব্যাংক খাতে ব্যাপক উত্থান দেখা গেলেও দ্বিতীয় দিনই পতন দেখা গেছে। টানা পতনের বৃত্তে থাকা পুঁজিবাজার মঙ্গলবার থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর যে আভাস দিয়েছে, তার ছোঁয়া ব্যাংক খাতে লাগে বুধবার। সেদিন ৩২টি ব্যাংকের মধ্যে দর বাড়ে ২৯টির, কমে ২টির।

পরদিন প্রায় একই ধরনের চিত্র দেখা গেল। এবার দাম বেড়েছে ২৮টির, কমেছে তিনটির, একটির দর ছিল অপরিবর্তিত।

তবে লেনদেন কিছুটা কমেছে। আগের দিন হাতবদল হয়েছিল ২৭৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা, আজ হয়েছে ২৬০ কোটি ৯০ লাখ টাকা।

সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া ব্যাংকের তালিকায় আছে পূবালী ব্যাংক, যার দর বেড়েছে ৭.৮০ শতাংশ। রূপালী ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে ৬.১২ শতাংশ, সাউথইস্ট ব্যাংকের ৪.৩৪ শতাংশ।

অন্যদিকে সকালে বেড়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত এনআরবিসি দর হারিয়েছে ৪.৬৯ শতাংশ। সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে ২.৩০ শতাংশ। ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে দশমিক ৪২ শতাংশ।

ব্যাংকের মতো আর্থিক খাতেও দিনটি ভালো গেছে। এই খাতের ২৩টি কোম্পানির মধ্যে একটির লেনদেন স্থগিত। বাকিগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ১৭টির, কমেছে ৪টির। একটির দর ছিল অপরিবর্তিত। লেনদেন হয়েছে ৮৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা, যা আগের দিন ছিল ৮১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।

আরেক আলোচিত খাত বিমা খাতেও শেয়ারদর বেড়েছে। ৫১টি কোম্পানির মধ্যে বেড়েছে ৩৭টির দর। কমেছে ১৪টির। লেনদেন হয়েছে ১৭২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আগের দিন এই খাতে দাম বেড়েছেল ৪৬টি কোম্পনির, কমেছিল ৫টির। লেনদেন ছিল ১৭৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

সূচক বাড়াতে প্রধান ভূমিকায় থাকা ১০টি কোম্পানির মধ্যে চারটিই ছিল ব্যাংক খাতের। এগুলো হলো পূবালী, রূপালী, সিটি ও সাউথইস্ট।

বিবিধ খাতের রাজা এখনো বেক্সিমকো

তালিকাভুক্ত বিবিধ খাতে এখনো রাজত্ব বেক্সিমকো লিমিটেডের। ১৯০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হওয়া এ খাতের বেক্সিমকো লিমিটেডের একক লেনদেন হয়েছে ১৭৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা।

কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ২.১১ শতাংশ। শেয়ার দর ১৬০ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৬৪ টাকা ১০ পয়সা।

এ খাতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে ন্যাশনাল ফিড মিলসের ৪ কোটি ৮২ লাখ টাকা। শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ১ টাকা ৪০ পয়সা। এছাড়া বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের শেয়ার দর বেড়েছে ৩.০৭ শতাংশ। শেয়ার দর ৪৫ টাকা ৫০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৬ টাকা ৯০ পয়সা।

লেনদেনে এ খাতের ছয়টি কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে। কমেছে ও ছয়টির। দিনে সূচক বাড়াতে প্রধান ভূমিকায় ছিল বেক্সিমকো লিমিটেড। এই একটি কোম্পানিই সূচকে যোগ করেছে ৫৩.৪৭ পয়েন্ট।

সূচক ও লেনদেন

ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৫০ দশমিক ৪৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৬২ পয়েন্টে। শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ২ দশমিক ০৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৭৯ পয়েন্টে। বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ৫.৪১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৩৮ পয়েন্টে।

লেনদেন হয়েছে মোট ১ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা।

 


আরো সংবাদ



premium cement