২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মধ্যবিত্তরা বিনিয়োগ করবে কোথায়

- ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশে মধ্যবিত্তের নিরাপদ বিনিয়োগের জায়গা হলো সঞ্চয়পত্র। কিন্তু সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার দিন দিন কমতে থাকায় তারা অনেকটা হতাশ। নিরাপদ বিকল্প বিনিয়োগেরও কোনো জায়গা নেই।

রিনি রেজা একজন গৃহিণী। তিনি অনেক দিন ধরেই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছেন। তার কথা, এটা পেনশনের মতো নিরাপদ। মাস শেষে বা তিন মাস পর পর লভ্যাংশ ব্যাংকেই জমা হয়। আর এটা দিয়ে তার সংসার খরচের বড় একটি অংশ মেটানো হয়। স্বামীর জমানো ও নিজের জমানো টাকা দিয়ে তিনি এই স্কিম খুলেছেন। তবে এখন সুদের হার কমে যাওয়ায় তিনি বিচলিত। কারণ ব্যাংকে টাকা রাখলে এখন শতকরা ছয় ভাগের বেশি সুদ পাওয়া যায় না।

আরিফুর রহমান অপু একজন পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা। তার সঞ্চয়পত্র আছে। পরিকল্পনা ছিল অবসরে যাওয়ার সময় এককালীন যে টাকা পাবেন তা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করবেন। তার হিসেবে তিনি দেড় কোটি টাকার মত এককালীন পাবেন। এটা দিয়ে সঞ্চয়পত্র কিনলে তাকে সংসার খরচের কথা আর ভাবতে হত না।

তিনি বলেন, ‘শেয়ার বাজারে রিটার্ন বেশি। কিন্তু আস্থার সঙ্কটের কারণে আমরা সাহস পাই না। আবার ব্যাংকও শতকরা ৬ ভাগের বেশি সুদ দেয় না। আর তেমন কোনো বিনিয়োগের জায়গা নেই। আমরা তো আর সরাসরি ব্যবসা করতে পারব না।’

সঞ্চয়পত্রে আরেকজন প্রবীণ বিনিয়োগকারী আলমগীর রেজা চৌধুরী বলেন, ‘সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমার কারণে প্রতারকরা সুযোগ নেয়। তারা নানা ধরনের অফার দিয়ে বেশি লাভের কথা বলে মানুষের টাকা হাতিয়ে নেয়।’

সরকার বাংলাদেশের পাঁচ ধরনের সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশে যে সঞ্চয়পত্রগুলো আছে তারমধ্যে রয়েছে পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, তিন মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক, পেনশনার সঞ্চয়পত্র, পরিবার সঞ্চয়পত্র ও ডাকঘর সঞ্চয়পত্র।

প্রতিটি সঞ্চয়পত্রের মুনাফাই কমানো হয়েছে। যেমন পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে বর্তমানে মেয়াদ শেষে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যায়। এখন নতুন নিয়মে যাদের এই সঞ্চয়পত্রে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ আছে, তারা মেয়াদ শেষে মুনাফা পাবেন ১০ দশমিক ৩ শতাংশ হারে। আর ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ থাকলে মুনাফার হার হবে ৯ দশমিক ৩ শতাংশ। ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগে চলতি মুনাফাই বহাল থাকছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘১৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ হলে তো আগের মতোই মুনাফা দেবে সরকার। কিন্তু এর বেশি হলে মুনাফা কমবে। তারপরও ব্যাংক রেট দেখলে সঞ্চয়পত্রই এখনো বিনিয়োগের লাভজনক ও নিরাপদ জায়গা। শেয়ারবাজার আরেকটি ভালো জায়গা হতে পারত। এখানে মুনাফাও বেশি। কিন্তু অনিশ্চিত। শেয়ার বাজারে বারবার নানা ঘটনা ঘটায় মধ্যবিত্ত পুঁজি হারানোর ভয়ে সেখানে বিনিয়োগে সাহস পাচ্ছে না।’

বাংলাদেশে বন্ডে বিনিয়োগ করা যায়। প্রবাসীদের জন্য বন্ডে সীমাহীন বিনিয়োগের সুযোগ আছে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের শরিয়াহ বন্ডে বিনিয়োগের ব্যবস্থা আছে। এইসব বিনিয়োগে ব্যাংক রেটের চেয়ে বেশি মুনাফা পাওয়া যায়। ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগের একটি সুযোগ তৈরি হতে পারে। তবে তারা এখনো সাধারণ মানুষের অর্থ নেয়ার অনুমতি পায়নি সরকারের কাছ থেকে।

ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘সরকারকে নিশ্চয়ই বিকল্প বিনিয়োগের পথ তৈরি করে দিতে হবে। সরকার গ্রিন বন্ড ছাড়তে পারে। তবে শেয়ার বাজার যদি সঠিক মনিটরিংয়ের আওতায় আসে ও আস্থা ফিরে পায় তাহলে এটাই হতে পারে সবচেয়ে বড় ক্ষেত্র।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন মনে করেন, ‘সরকার বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি করে দেবে। বিনিয়োগের খাত তৈরি করা তার কাজ নয়। শেয়ারবাজার ঠিকমতো কাজ করলে ব্যাংকের সাথে তাদের প্রতিযোগিতা হতো। মানুষ বেশি মুনাফার জন্য শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করত। ব্যাংক রেটও তখন বাড়ত। এখন মানুষ নিরাপত্তার জন্য কম রেটে ব্যাংকে টাকা রাখতে বাধ্য হচ্ছে। শেয়ারবাজারের মিউচুয়্যাল ফান্ডও বিনিয়োগের একটি বড় জায়গা হতো। কিন্তু তা হয়নি।

তার কথায়, ‘করোনার কারণে সরকার আর্থিক চাপে আছে। তাই সঞ্চয়পত্রে মুনাফা কমানো হয়েছে। এর একটি যুক্তিও আছে। যারা এই করোনার সময়ও ৫০ লাখ বা এক কোটি টাকা সঞ্চয়পত্রে রাখতে পারেন তাদের সরকার কেন সাবসিডি দেবে। সরকার সঞ্চয়পত্রে যে উচ্চ হারে সুদ দেয় তা তো সাবসিডি।’

তারপরও যাদের কম বিনিয়োগ বা যারা এটার ওপর নির্ভরশীল তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তার মতে, ‘বয়ষ্ক বা অবসরপ্রাপ্তদের জন্য একটি সিলিং বেধে দিয়ে তাদের উচ্চহারে মুনাফা দেয়া যেতে পারে। কিন্তু সবার জন্য নয়। সমস্যা হলো, সেটা চিহ্নিত করা হবে কিভাবে?’

বিনিয়োগের জায়গাগুলো সঙ্কুচিত হওয়ায় প্রতারকরা নানা ধরনের লোভনীয় অফার দেয়। ই-কমার্সের নামে প্রতারণা করে। অনেক বেশি মুনাফার লোভে মানুষ তাদের ফাঁদে পা দেয়। তবে ড. আতিউর মনে করেন, ‘লোভের কারণেই মানুষ বেশি প্রতারিত হয়। তাদের তো বোঝা উচিত অল্প সময়ে দুই-তিনগুণ মুনাফা পাওয়া যায় না। আর উৎপাদন খরচের অর্ধেক দামে কিভাবে একটি পণ্য বিক্রি হয়!’

সূত্র : ডয়েচে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement
তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে ১২ উপজেলায় মানববন্ধন রোববারই খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শনিবার ক্লাসসহ ৪ নির্দেশনা ময়মনসিংহ ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের ঈদ পুনর্মিলনী বাস্তবায়নের আহ্বান ৩ গণকবরে ৩৯২ লাশ, ২০ ফিলিস্তিনিকে জীবন্ত কবর দিয়েছে ইসরাইল! মৌলভীবাজারে বিএনপি ও যুবদল নেতাসহ ১৪ জন কারাগারে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট কারীদের চিহ্নিতকরণ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি ১২ দলীয় জোটের কলিং ভিসায় প্রতারণার শিকার হয়ে দেশে ফেরার সময় মারা গেল মালয়েশিয়া প্রবাসী নারায়ণগঞ্জ যুবদলের সদস্য সচিবকে আটকের অভিযোগ হাতিয়া-সন্দ্বীপ চ্যানেলে কার্গো জাহাজডুবি : একজন নিখোঁজ, ১১ জন উদ্ধার হঠাৎ অবসরের ঘোষণা পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়কের বগুড়ায় গ্যাসের চুলার আগুনে বৃদ্ধা নিহত

সকল