২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ক্রিপ্টোকারেন্সির বৈধতা নিয়ে যা জানাল বাংলাদেশ ব্যাংক

ক্রিপ্টোকারেন্সির বৈধতা নিয়ে যা জানাল বাংলাদেশ ব্যাংক - ছবি : সংগৃহীত

দেশে কোনো প্রকার ভার্চুয়াল মুদ্রা বা ক্রিপ্টোকারেন্সি অনুমোদিত নয় বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে সম্ভাব্য আর্থিক ও আইনগত ঝুঁকি এড়াতে যে কোনো ধরনের ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ভার্চুয়াল মুদ্রায় লেনদেন অথবা এধরনের কাজে সহায়তা করা থেকে সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে বিরত থাকতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের কমিউনিকেশন্স অ্যান্ড পাবলিকেশন্স বিভাগের মহাব্যবস্থাপক (সহকারী মুখপাত্র) জী. এম আবুল কালাম আজাদ স্বাক্ষরিত জনস্বার্থে জারি করা এক সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়।

উল্লেখ্য, ভার্চুয়াল মুদ্রা ক্রিপ্টোকারেন্সির মালিকানা, সংরক্ষণ এবং লেনদেন করা অপরাধ কিংবা অবৈধ নয় সম্প্রতি এই মর্মে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ একটি চিঠি পাঠায়। ওই চিঠির সূত্র ধরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেশে ভার্চুয়াল মুদ্রা ক্রিপ্টোকারেন্সির বৈধ না অবৈধ সে বিষয় নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

ক্রিপ্টোকারেন্সি সংক্রান্ত সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক এই স্পষ্টীকরণ বিজ্ঞপ্তি জারি করে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে ভার্চুয়াল মুদ্রা/ক্রিপ্টোকারেন্সি বিষয়ে প্রকাশিত রিপোর্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরে এসেছে। একটি নির্দিষ্ট মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার গোপনীয় ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পত্রের মাধ্যমে প্রেরিত মতামতের অংশ বিশেষ কয়েকটি পত্রিকায় খণ্ডিতভাবে উপস্থাপিত হয়েছে যা কোনোক্রমেই সাধারণভাবে প্রচারযোগ্য নয়।

উল্লেখ্য, সকলের সচেতনতার লক্ষ্যে ভার্চুয়াল মুদ্রায় লেনদেন থেকে বিরত থাকার বিষয়ে ২০১৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক গণমাধ্যমে ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে একটি সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে।

প্রচারিত সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম এবং ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায় যে, অনলাইন ভিত্তিক ভার্চুয়াল মুদ্রা বা ক্রিপ্টোকারেন্সি যথা বিটকয়েন, ইথারিয়াম, রিপল ইত্যাদি বিবিধ বিনিময় প্লাটফর্মে লেনদেন হচ্ছে। এসব ভার্চুয়াল মুদ্রা কোনো দেশের বৈধ কর্তৃপক্ষ ইস্যুকৃত বৈধ মুদ্রা নয় বিধায় এর বিপরীতে কোনো আর্থিক দাবির স্বীকৃতিও থাকে না।

এসব মুদ্রায় লেনদেন বাংলাদেশ ব্যাংক বা অন্য কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদিত নয় বিধায় এসব ভার্চুয়াল মুদ্রার ব্যবহার বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৪৭: সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯ এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর দ্বারা সমর্থিত হয় না। অনলাইনে নামবিহীন/ছদ্মনামিক প্রতিসঙ্গীর সঙ্গে ভার্চুয়াল মুদ্রায় লেনদেনের দ্বারা অনিচ্ছাকৃতভাবে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ সম্পর্কিত আইনের লঙ্ঘন হতে পারে।

সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, মূলতঃ অনলাইন ভিত্তিক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ভার্চুয়াল মুদ্রায় অর্থমূল্য পরিশোধ ও নিষ্পত্তি সংঘটিত হয় এবং এটি কোনো কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ/পেমেন্ট সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ স্বীকৃত না হওয়ায় গ্রাহকরা ভার্চুয়াল মুদ্রার সম্ভাব্য আর্থিক ও আইনগত ঝুঁকিসহ বিভিন্ন ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারেন। এ অবস্থায়, সম্ভাব্য আর্থিক ও আইনগত ঝুঁকি এড়ানোর লক্ষ্যে বিটকয়েনের ন্যায় ভার্চুয়াল মুদ্রায় লেনদেন বা এসব লেনদেনে সহায়তা প্রদান ও এর প্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য সর্বসাধারণকে অনুরোধ করা যাচ্ছে।

যে বিজ্ঞপ্তিটি এখনও বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হচ্ছে এবং এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে। এ প্রসঙ্গে সর্বসাধারণের জ্ঞাতার্থে পুনরায় জানানো যাচ্ছে যে, কোনো ভার্চুয়াল মুদ্রা বা ক্রিপ্টোকারেন্সি বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত নয়। সম্ভাব্য আর্থিক ও আইনগত ঝুঁকি এড়ানোর লক্ষ্যে যে কোনো ধরনের ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ভার্চুয়াল মুদ্রায় (যেমন বিটকয়েন, ইথারিয়াম, রিপল ইত্যাদি) লেনদেন অথবা এরূপ কার্যে সহায়তা প্রদান থেকে বিরত থাকতে সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে পুনরায় অনুরোধ করা যাচ্ছে। এ সংক্রান্ত প্রচারণা থেকে বিরত থাকার জন্য জনস্বার্থে এ সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হলো।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) পাঠানো এক চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ বলেছে ক্রিপ্টোকারেন্সির মালিকানা, সংরক্ষণ এবং লেনদেন করা অপরাধ কিংবা অবৈধ নয়।

ক্রিপ্টোকারেন্সি একধরনের ভার্চুয়াল মুদ্রা, যার কোনো বাস্তব রূপ নেই। এর অস্তিত্ব শুধু ইন্টারনেট জগতেই আছে। এটি ব্যবহার করে লেনদেন শুধু অনলাইনেই সম্ভব, যার পুরো কার্যক্রম ক্রিপ্টোগ্রাফি নামক একটি সুরক্ষিত প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়। ২০১৭ সাল থেকে এটি একটি উঠতি মার্কেটে পরিণত হয়েছে।

অনলাইনে লেনদেন হওয়া এই মুদ্রার সংখ্যা এখন প্রায় ৮ হাজার। এগুলোর মধ্যে সবথেকে জনপ্রিয় হচ্ছে বিটকয়েন। ২০০৮ সালের শেষভাগে জাপানি নাগরিক সাতোশি নাকামোতো নামের একজন বা একদল সফটওয়্যার বিজ্ঞানী এই ‘ক্রিপ্টোকারেন্সির’ উদ্ভাবন করেন।

গত ১৮ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের সহকারী পরিচালক শফিউল আজম ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে ব্যাংকের অবস্থান জানিয়ে সিআইডিকে লেখেন, 'ক্রিপ্টোকারেন্সির মালিকানা, সংরক্ষণ বা লেনদেন স্বীকৃত না হলেও এটিকে অপরাধ বলার সুযোগ নেই মর্মে প্রতীয়মান হয়।’

ওই চিঠিতে তিনি আরও বলেন, ভার্চুয়াল মুদ্রায় লেনদেনের ফলাফল হিসেবে দ্বিতীয় পর্যায়ে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৪৭; সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯ এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২–এর আওতায় অপরাধ হতে পারে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সিআইডি এ নিয়ে অনুসন্ধান করে দেখতে পারে।

একই চিঠিতে ক্রিপ্টোকারেন্সির বাজারদর সম্পর্কে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকের মতে বর্তমান বিশ্বে ভার্চুয়াল মুদ্রার বাজার দুই ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রচলনের প্রাথমিক পর্যায়ে বিশ্বের কোনো আইনগত কর্তৃপক্ষ এই মুদ্রাকে স্বীকৃতি দেয়নি।

কিন্তু বর্তমানে কয়েকটি দেশ যেমন: জাপান, সিঙ্গাপুর, আরব আমিরাত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং মুদ্রা নিয়ন্ত্রক সংস্থা ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেনকে বৈধতা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এখন পর্যন্ত ক্রিপ্টোকারেন্সির মতো এ ধরনের প্রাইভেট কারেন্সিতে লেনদেন বা সংরক্ষণের অনুমোদন দেয়নি।

কিন্তু কয়েক মাসের ব্যবধানে সিআইডিকে পাঠানো চিঠির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক তার অবস্থান পরিবর্তন করলো বলে ধারণা করা যাচ্ছে। উল্লেখ্য, বর্তমানে বাংলাদেশে ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন বিষয়ক সাতটি মামলা হয়েছে, যার মধ্যে র‌্যাবেরই রয়েছে পাঁচটি মামলা।

বর্তমানে সিআইডির কাছে ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে দুইটি মামলা তদন্তনাধীন রয়েছে। যদিও তাদের বিরুদ্ধে ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন ছাড়াও প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement