১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ঋণে ২০ হাজার কোটি টাকার নতুন লক্ষ্যমাত্রা

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ঋণে ২০ হাজার কোটি টাকার নতুন লক্ষ্যমাত্রা - ছবি : নয়া দিগন্ত

করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যে অতি ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্পের (সিএমএসএমই) উদ্যোক্তাদের কম সুদে ঋণ দিতে ২০ হাজার কোটি টাকার নতুন লক্ষ্যমাত্রা দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী অর্থবছরের (২০২১-২২) জন্য নতুন এ লক্ষ্যমাত্রা আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে দেয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। এ দিকে এ ঋণ বিতরণে সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোতে নগদ অর্থের জোগান দিতে ৩০ কোটি ডলার সমমূল্যের আড়াই হাজার কোটি টাকার নতুন পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করা হয়েছে।

উন্নয়ন সংস্থা এশীয় অবকাঠামো ও বিনিয়োগ ব্যাংকের (এআইআইবি) সহায়তায় গঠিত এ তহবিলের নাম দেয়া হয়েছে ‘কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি অ্যান্ড ক্রাইসিস রেসপন্স ফ্যাসিলিটি প্রজেক্ট (সিইসিআরএফপি)। তহবিলের মেয়াদ হবে তিন বছর। সুদের হার ৪ শতাংশ। ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে সুদের চার্জ নির্ধারিত হবে। প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে অর্থের কোনো ব্যাংক সঙ্কটে পড়লে এ তহবিল থেকে ৫০ শতাংশ অর্থের জোগান দেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, গত বছর করোনার শুরুতে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। ব্যাংকগুলোর অর্থায়নে এ প্যাকেজ বাস্তবায়নের ঘোষণা দেয়া হয়। বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে সরকার সুদহারের ওপর ৫ শতাংশ ভর্তুকি দেয়ার ঘোষণা করে। অর্থাৎ এ প্যাকেজ থেকে ঋণ পেতে গ্রাহককে ব্যয় করতে হবে ৪ শতাংশ সুদ। আর সরকার ব্যাংকগুলোকে ৫ শতাংশ সুদ ভর্তুকি দেবে। কারা এ প্যাকেজ থেকে ঋণ পাবেন, কিভাবে ব্যাংকগুলো বিতরণ করবে এসব বিষয় নিয়ে গত বছরের ২৩ এপ্রিল একটি নীতিমালা দেয়া হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে।

কিন্তু ব্যাংকগুলোর অর্থ সঙ্কটের কারণে শুরুতে এ প্যাকেজ বাস্তবায়ন হোঁচট খায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর অর্থের জোগান দেয়ার জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল ঘোষণা করা হয়। বলা হয়, প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় কোনো ব্যাংক ১০০ টাকা ঋণ বিতরণ করলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে অর্ধেক বা ৫০ শতাংশ তহবিলের জোগান দেয়া হবে। গতকাল বুধবার এ সংক্রান্ত নতুন আরেকটি তহবিল গঠনের ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে দেয়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংক ১০০ টাকা ঋণ বিতরণ করলে অর্ধেক অর্থের জোগান দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তহবিল থেকে, বাকি অর্ধেকও নতুন গঠিত তহবিল থেকে জোগান দেয়া হবে। ফলে শতভাগ অর্থের জোগান দেয়া হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তহবিল থেকে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, গত বছর প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ঋণ বিতরণের জন্য ব্যাংকগুলোকে লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেয়া হয়েছিল। আর এ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ব্যাংকগুলোর আগের বিতরণ করা ক্ষুদ্র ঋণের স্থিতির ভিত্তিতে। কোনো ব্যাংকের ক্ষুদ্র ঋণের স্থিতি ১০০ কোটি টাকা হলে ওই ব্যাংককে লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছিল ১০ শতাংশ হারে ১০ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এ ঋণ বিতরণের জন্য কয়েক দফা সময়সীমা বেঁধে দেয়ার পরেও লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ ঋণ বিতরণ করতে পারেনি কোনো ব্যাংক। সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত ১৫ জুন পর্যন্ত ২০ হাজার কোটি টাকার গড়ে ৭৫ শতাংশ হিসেবে ১৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করতে পেরেছে ব্যাংকগুলো। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতি বছরের বিভিন্ন সময়ে ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সাথে বৈঠক করেও শতভাগ ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি।

এ দিকে আগামী অর্থবছরে ব্যাংকগুলোর জন্য আবারো ২০ হাজার কোটি টাকা ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা দিয়ে নতুন একটি নীতিমালা ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে নতুন এ লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করা হতে পারে। একই সাথে চলতি অর্থবছরে যারা লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি তাদেরকেও কড়া বার্তা দেয়া হবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement