২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

রাজস্ব আয়ে লক্ষ্যমাত্রাই সার

রাজস্ব আয়ে লক্ষ্যমাত্রাই সার - ছবি : সংগৃহীত

আগামী তিন অর্থবছরে ১৩ লাখ ২৫ হাজার ২১০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে চায় সরকার। এই অর্থের মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ লাখ ২৭ হাজার ২১০ কোটি টাকা। অর্থ বিভাগের করা মধ্যমেয়াদি রাজস্ব পূর্বাভাসে এ তথ্য দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, জিডিপি'র অংশ হিসেবে রাজস্ব আদায় তিন বছরের ১০ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৪ দশমিক ৬ শতাংশে নিয়ে যাওয়া হবে। অর্থনীতিবিদরা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যকে উচ্চাভিলাষী হিসেবে অভিহিত করেছেন। কারণ অতীতে রাজস্ব আদায়ের মূল টার্গেট দূরে থাক, সংশোধিত টার্গেটও অর্জন করা সম্ভব হয়নি।

অর্থ বিভাগের মধ্যমেয়াদে রাজস্ব পূর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়, `রাজস্ব খাতে চলমান ও প্রস্তাবিত সংস্কার কর্মসূচিসমূহ অভ্যন্তরীণ আহরণ বাড়াতে ও মধ্যমেয়াদে রাজস্ব লক্ষ্যসমূহ অর্জনে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সরকার ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে ৩ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন টাকা, যা ২০২০-২১ অর্থবছরের সংশোধিত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। ২০২১-২২ অর্থবছরে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রকৃত আহরণ হতে ২১ শতাংশ হারে (গড়ে) রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধি করতে হবে। কোভিড-১৯ মহামারী থেকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার হলে এবং এনবিআরের সংস্কার কর্মসূচিসমূহ পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে মধ্যমেয়াদে রাজস্ব আহরণ জোরদার হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ’

এই কর রাজস্বকে উচ্চাভিলাষী হিসেবে বর্ণনা করে সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেমির রায়হান বলেছেন, বাজেটে আগামী অর্থবছরে কর-জিডিপি’র অনুপাত ১১ দশমিক ৬ শতাংশে উন্নীত করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আমরা জানি চলতি বছরে এই অনুপাত ৮ দশমিক ৩। তা হলে এক বছরে তা এত বাড়িয়ে ১১ ভাগের উপরে নিয়ে যাওয়া হবে।

এ দিকে মধ্যমেয়াদে রাজস্ব পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেয়া দেয়া হয়েছে তিন লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআরকে আয় করতে হবে তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। একইভাবে ২০২২-২৩ অর্থবছরে সার্বিক রাজস্ব আদয়ের টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে চার লাখ ৩৬ হাজার ২৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআর টার্গেট তিন লাখ ৭১ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা। এবং সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় করতে হবে চার লাখ ৯৯ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা এবং এনবিআরকে আদায় করতে হবে চার লাখ ২৫ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা।

এ দিকে এনবিআরসহ বাজেটে রাজস্ব আদায়ের যে টার্গেট দেয়া হয় এই লক্ষ্যমাত্রা কোনো বছর অর্জন করা সম্ভব হয় না। এমনকি রাজস্ব আদায়ের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যায় না।

যেমনÑ ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের টার্গেট নির্ধারণ করা হয়, তিন লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। পরে তা সংশোধন করে তিন লাখ ৪৮ হাজার ৬৯ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। কিন্তু বছর শেষে তাও আদায় করা সম্ভব হয়নি। সে বছর রাজস্ব আদায় হয়েছিল মাত্র দুই লাখ ৬৫ হাজার ৯০৯ কোটি টাকা। একইভাবে ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের টার্গেট তিন লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা ধরা হলেও পরে তা সংশোধন করে তিন লাখ ৫১ হাজার ৫৩২ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। বছর শেষে তাও আদায় করা সম্ভব হবে না বলে জানা গেছে।

একইভাবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে এনবিআর কর্তৃক রাজস্ব আদায়ের টার্গেট দেয়া ছিল দুই লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা। কিন্তু বছরের মাঝামাঝি সময় এসে দেখা যায় কোনোভাবেই এই টার্গেট অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হবে না। ফলে টার্গেট থেকে ১৬ হাজার ২১০ কোটি টাকা কাটছাঁট করে সংশোধিত আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় দুই লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে এই সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ধারেকাছেও যাওয়া সম্ভব হয়নি। অর্থ বিভাগের করা এক প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এনবিআর খাতে রাজস্ব আদায়ের প্রকৃত পরিসংখ্যান হচ্ছে দুই লাখ ২৫ হাজার ৯১৯ কোটি টাকা; যা কিনা সংশোধিত রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫৪ হাজার ৮১ কোটি টাকা কম এবং মূল লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭০ হাজার ২৮২ কোটি টাকা কম।

এর আগের ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে এনবিআর অংশে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া ছিল দুই লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। পরে তা সংশোধন করে দুই লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছিল; কিন্তু সেই বছরও এনবিআর সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে প্রকৃত রাজস্ব আদায় করেছে এক লাখ ৯৬ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা; যা কিনা সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৮ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা কম।

এর আগে ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এনবিআর-এর আওতাধীন সংশোধিত রাজস্ব বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা ছিল যথাক্রমে এক লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা ও এক লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে যথাক্রমে এক লাখ ৪৬ হাজার ২৪২ কোটি টাকা এবং এক লাখ ৭১ হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা।


আরো সংবাদ



premium cement