২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
নগদ সহায়তায় রেমিট্যান্সের রেকর্ড

৯ মাসেই ৩০৬০ কোটি টাকার বরাদ্দ শেষ

৯ মাসেই ৩০৬০ কোটি টাকার বরাদ্দ শেষ -

এক শ’ টাকা রেমিট্যান্স আনলে বাড়তি দুই টাকা নগদ সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এভাবে পুরো বছরে ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকার বরাদ্দ ৯ মাসেই শেষ হয়ে গেছে। নগদ সহায়তার জাদুতে দেশে রেমিট্যান্সের রেকর্ড ভেঙে রেকর্ড গড়ছে। এর ফলে বেড়ে যাচ্ছে নগদ সহায়তা। ইতোমধ্যে বরাদ্দ শেষ হয়ে যাওয়ায় তিন মাসের রেমিট্যান্সের বিপরীতে নগদ সহায়তা পরিশোধে আরো ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা দেয়, নগদ সহায়তার জাদুতে প্রতি মাসেই রেমিট্যান্সের রেকর্ড গড়ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস অর্থাৎ জুলাইতে রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি হয় ৬২ শতাংশ। এর পরের মাসগুলোতে এ প্রবৃদ্ধি ২০ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যে ছিল। মার্চে প্রবৃদ্ধি হয় ৫০ শতাংশ। আর সর্বশেষ গত এপ্রিলে রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি হয় ৮৯ শতাংশ, যা এ যাবৎকালে সর্বোচ্চ বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে। এ সুবাদে অর্থ বছরের দুই মাস বাকি থাকতেই অর্থাৎ ১০ মাসে দেশে আহরিত রেমিট্যান্স গত অর্থবছরে থেকে বেড়ে গেছে। গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ৮২০ কোটি ডলার, যেখানে চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে এসেছে (জুলাই-এপ্রিল) ২ হাজার ৬৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার। রেমিট্যান্স প্রবাহের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে পুরো অর্থবছর শেষে তা আড়াই হাজার কোটি ডলার ছেড়ে যেতে পারে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নগদ সহায়তার জাদুতে রেমিট্যান্স প্রবাহের এ রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড হচ্ছে। ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে ২ শতাংশ নগদ সহায়তা ঘোষণা করে সরকার। বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী ৫ হাজার ডলার বা স্থানীয় মুদ্রায় ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নগদ সহায়তা পেতে কোনো কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করতে হয় না।

রেমিট্যান্স ব্যাংকিং চ্যানেলে এলেই সুবিধাভোগীদের ২ শতাংশ নগদ সহায়তা দেয়া হয়। আর ৫ হাজার ডলার বা ৫ লাখ টাকার ওপরে কেউ রেমিট্যান্স পাঠালে নগদ সহায়তা পেতে হলে প্রবাসীদের সামগ্রী তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয়ে থাকে।

নগদ সহায়তা ঘোষণা করার পরপরই রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে যেতে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান মতে, ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ এই দুই অর্থবছরে এক টানা রেমিট্যান্স প্রবাহের ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়। যেমন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবাহে প্রবৃদ্ধি হয় ঋণাত্মক আড়াই শতাংশ। এর পরের অর্থবছরে অর্থাৎ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধি আরো কমে হয় ঋণাত্মক সাড়ে ১৪ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে এক টানা রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়তে থাকে। যেমন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয় ১৭ শতাংশ, এর পরের বছর অর্থাৎ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয় ১০ শতাংশ।

সর্বশেষ গেলো অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয় সাড়ে ১২ শতাংশ। চলতি অর্থবছরেও রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। চলতি অর্থবছরের ১০ মাসেই প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৯ শতাংশ।

বর্তমানে যেকোনো অঙ্কের রেমিট্যান্সের বিপরীতে দুই শতাংশ নগদসহায়তা সুবিধাভোগীদের মাঝে বিতরণের জন্য অর্থ ছাড় করে থাকে সরকার। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ৭৬৫ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছিল। দ্বিতীয় প্রান্তিকে অর্থাৎ অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকের জন্য ১ হাজার ৩২০ কোটি টাকা ছাড় করা হয়। আর তৃতীয় প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) জন্য ছাড় করা হয় ১ হাজার কোটি টাকা। ৯ মাসে ছাড় করা হয়েছে ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা, যেখানে পুরো অর্থবছরের জন্য বরাদ্দ ছিল ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, গত অর্থবছরেও ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। চলতি অর্থবছরের জন্য ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু চলতি অর্থবছরের জন্যও একই অর্থাৎ ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।

রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় এর বিপরীতে বরাদ্দকৃত নগদ সহায়তার পুরোটাই ইতোমধ্যে ছাড় করা হয়েছে। ৯ মাসেই ইতোমধ্যে পুরো বরাদ্দ শেষ হয়ে গেছে। সামনের তিন মাসের জন্য যে পরিমাণ রেমিট্যান্স আসবে তার বিপরীতে ২ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দেয়া হবে। আর এ জন্য বাজেটের অন্য খাত থেকে এনে এ খাতে আরো ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার জন্য সরকারের কাছে ইতোমধ্যে চিঠি দেয়া হয়েছে। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, দেশের প্রায় সূচকগুলো ঋণাত্মক হয়ে পড়লেও মাত্র ২ শতাংশ নগদ সহায়তার কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে যাচ্ছে। তবে শুধু প্রবাসীরা তাদের কষ্টার্জিত অর্থই পাঠাচ্ছেন না, যারা হুন্ডির মাধ্যমে টাকা বিদেশে নিয়ে গিয়েছিল তারাও বিভিন্নভাবে রেমিট্যান্স আকারে পাঠাচ্ছেন এটা কেন্দ্রীয় ব্যাংক তদন্ত করলেই বেরিয়ে যাবে। তবে আশার কথা হলো যে ফর্মেটেই হোক রেমিট্যান্স আকারে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আসছে এটাই বড় কথা।

নগদ সহায়তা যেন সহজেই সুবিধাভোগীরা গ্রহণ করতে পারেন এজন্যই ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিদ্যমান নীতিমালা শিথিল করেছে। আগে কেউ যেন নগদ সহায়তা গ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো নয়ছয়ের আশ্রয় না নিতে পারে সেজন্য তাদের কাগজপত্রাদি অধিকতর যাচাই-বাছাই করা হতো। কিন্তু নীতিমালা শিথিল করায় এখন আর সে প্রক্রিয়া থাকবে না।


আরো সংবাদ



premium cement
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট কারীদের চিহ্নিতকরণ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি ১২ দলীয় জোটের কলিং ভিসায় প্রতারণার শিকার হয়ে দেশে ফেরার সময় মারা গেল মালয়েশিয়া প্রবাসী নারায়ণগঞ্জ যুবদলের সদস্য সচিবকে আটকের অভিযোগ হাতিয়া-সন্দ্বীপ চ্যানেলে কার্গো জাহাজডুবি : একজন নিখোঁজ, ১১ জন উদ্ধার হঠাৎ অবসরের ঘোষণা পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়কের বগুড়ায় গ্যাসের চুলার আগুনে বৃদ্ধা নিহত বগুড়ায় ধানের জমিতে পানি সেচ দেয়া নিয়ে খুন জিআই স্বীকৃতির সাথে গুণগত মানের দিকেও নজর দিতে হবে : শিল্পমন্ত্রী অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ চুয়েট, শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ সখীপুরে সাবেক ও বর্তমান এমপির সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ তীব্র গরমের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার অন্যতম দায়ী : মির্জা আব্বাস

সকল