১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সরকারি গুদামে খাদ্যের মজুদ নেমেছে নিরাপদ মাত্রার অর্ধেকে

সরকারি গুদামে খাদ্যের মজুদ নেমেছে নিরাপদ মাত্রার অর্ধেকে -

দেশে সরকারি গুদামে এখন চালের মজুদ মাত্র ৩ লাখ টন। অন্য দিকে, গমের মজুদ ২ লাখ ১২ হাজার টন। খাদ্য অধিদফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ২৮ এপ্রিলের দৈনিক খাদ্যশস্য পরিস্থিতি প্রতিবেদনে এ তথ্য দেয়া হয়েছে। ফলে বর্তমানে সরকারি গুদামে মজুদকৃত মোট খাদ্যশস্যের পরিমাণ ৫ লাখ ১০ হাজার টন। কিন্তু দেশে নিরাপদ খাদ্য মজুদের ন্যূনতম পরিমাণ হওয়া উচিত ছিল চাল-গম মিলিয়ে ১১ লাখ টন।

অর্থাৎ সরকারি খাদ্যের মজুদ নিরাপদ মাত্রার অর্ধেকে নেমেছে। এ জন্য সরকারের পক্ষ থেকে হন্যে হয়ে বিদেশ থেকে চাল গম আমদানি করার চেষ্টা করছে। বেসরকারি ব্যবসায়ীদেরও আমদানির সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমদানি চিত্রও আশাব্যঞ্জক নয়। অনেক ব্যবসায়ী চাল আমদানির কথা বলে সময় মতো তা আনতে পারছে না বলে জানা গেছে।

এ বাস্তবতায়, অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় খাদ্যশস্যের নিরাপত্তা মজুদ সুসংহত করার লক্ষ্যে চলতি অর্থবছরে ১১ লাখ টনেরও বেশি চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ভারত, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশ থেকে এ চাল আমদানি করা হচ্ছে এবং আমদানি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ ধারাবাহিকতায় প্যাকেজ-১৩-এর আওতায় ভারত থেকে রেলপথে ৫০ হাজার টন নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে খাদ্য অধিদফতর।
কলকাতার প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স সৌভিক এক্সপোর্ট লিমিটেড’ এই চাল সরবরাহ করবে। প্রতি টন চাল ৩৮৬ ডলার হিসাবে ৫০ হাজার টন চাল আমদানিতে ট্যাক্স ও ভ্যাট ছাড়া মোট ব্যয় হবে ১ কোটি ৯৩ লাখ ডলার। বাংলাদেশী মুদ্রায় এর পরিমাণ ১৬৩ কোটি ৬৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা। প্রতি কেজি চালের দাম পড়বে ৩৩ টাকা।

‘সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র বৈঠকে এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে বলে জানা গেছে।

খাদ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চাল আমদানির জন্য গত ৫ এপ্রিল দরপত্র আহবান করা হয় এবং ভারতের কলকাতার দুটি প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নেয়। অপর প্রতিষ্ঠানটি হচ্ছেÑ ‘মেসার্স রেমো এক্সপোর্ট এন্টারপ্রাইজ’। এ প্রতিষ্ঠানের প্রতি টন চালের উদ্ধৃত দর ছিল ৪০৬ ডলার। এমতাবস্থায় সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে ‘মেসার্স সৌভিক এক্সপোর্ট লিমিটেড’কে মনোনীত করা হয়েছে।

চুক্তির শর্ত মোতাবেক আমদানিতব্য চাল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পাবনার মুলাডুলি সিএসডি, ঈশ্বরদী এলএসডি, জয়পুরহাট এলএসডি, সিরাজগঞ্জ এলএসডি, উল্লাপাড়া এলএসডি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমনুড়া এলএসডি ও বগুড়া জেলার সান্তাহার সিএসডি-তে পৌঁছে দেয়া হবে।

জানা গেছে, চাল আমদানির দরপত্র বিজ্ঞপ্তি ও শিডিউলে ক্রয়যোগ্য চালের গুণগত মান সম্পর্কে খাদ্য অধিদফতর কর্তৃক সুস্পষ্ট নির্দেশিকা দেয়া আছে। সে মোতাবেক বিদেশ থেকে সরকারিভাবে খাদ্যশস্য আমদানির ক্ষেত্রে পণ্য আগমনের পর পণ্য খালাসের আগেই দরদাতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, খাদ্য অধিদফতরের প্রতিনিধি এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে পর্যায়ক্রমে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সংগৃহীত নমুনা খাদ্য অধিদফতরের স্থানীয় পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা হয় এবং পরে সংগৃহীত নমুনা কম্পোজিট করে এক প্যাকেট পরীক্ষার জন্য খাদ্য অধিদফতর, ঢাকায় প্রেরণ করা হয়। খাদ্য অধিদফতরের পরীক্ষাগারে তা পরীক্ষা করে গুণগত মান নিশ্চিত করা হয়। দরপত্রে উল্লিখিত নির্দেশিকার কোনো প্যারামিটারের সাথে পণ্যের প্রাপ্ত গুণগত মান নিম্নমানের হলে দরপত্রে উল্লিখিত সমুদয় চাল প্রত্যাখ্যান করার বিধান রয়েছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র জানিয়েছে, সরকারি বিতরণব্যবস্থা সচল রাখাসহ নিরাপত্তা মজুদ সুসংহতকরণের স্বার্থে উল্লিখিত ৫০ হাজার টন চাল ক্রয় করা অত্যাবশ্যক। ইতোমধ্যে ৪ লাখ টন চাল উন্মুক্ত দরপত্র ও সাড়ে ৬ লাখ টন জি-টু- জি পদ্ধতিতে সর্বমোট সাড়ে ১০ লাখ টন চালের ক্রয়াদেশ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২ লাখ ৭৮ হাজার টন চাল বাংলাদেশে আগত হয়েছে। চলতি অর্থবছরে প্রস্তাবিত ক্রয়সহ আরো সাড়ে ৫ লাখ টন চাল আমদানি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের বোরো মৌসুমে মোট সাড়ে ১৯ লাখ টন ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু বছর শেষে এই লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৫৪ ভাগ অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। বোরো সংগ্রেহের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে ৮ লাখ টন বোরো ধান, ১০ লাখ টন বোরো সিদ্ধ চাল ও দেড় লাখ টন বোরো আতপ চাল ছিল। প্রতি কেজি ২৬ টাকা দরে বোরো ধান, আর ৩৬ টাকা দরে বোরো সিদ্ধ চাল ও ৩৫ টাকা দরে বোরো আতপ চাল কেনার দাম নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু সেটি অর্জন করা সম্ভব হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে সরকারকে বিদেশ থেকে চাল আমদানির দিকে ঝুঁকতে হয়েছে। কারণ সরকারি গুদামে চালের মজুদ কমে যাওয়ার কারণে এখন এই বাজারটি পুরোটা নিয়ন্ত্রণ করছে চাল মালিক ও চাল ব্যবসায়ীরা। তারা ইচ্ছেমতো চালের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। এখন বাজারে প্রতি কেজি ৫০ টাকার নিচে কোনো মোটা চাল নেই। আর সরু চালের দাম কেজি ৬০ থেকে ৬৮ টাকা।


আরো সংবাদ



premium cement