২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

গোশতের বাজারে স্বেচ্ছাচারিতা

গোশতের বাজারে স্বেচ্ছাচারিতা - ছবি : সংগৃহীত

রাজধানীর মানিকনগর কাঁচাবাজার থেকে বিশ^রোড পর্যন্ত গোশতের দোকান রয়েছে ৮ থেকে ১০টি। কোনটি স্থায়ী; আর কোনটি অস্থায়ী টঙদোকান। ফুটপাথে ভ্যানের ওপর বসে গোশত বিক্রি করছে কেউ কেউ। গতকাল বিকেলে প্রতিটি দোকানের সামনেই দেখা গেল দু’চারটি গরু বাঁধা আছে। অনেকে গরু জবাই করে গোশত সাজিয়ে রাখছে দোকানে। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে এই সময়ে কোনো দোকানি গরু জবাই করেন না। শবেবরাত বলে গোশতের চাহিদা বেশি। যে কারণে দিনভর একের পর এক গরু জবাই করছেন; আর গোশত বিক্রি করছেন। দোকানিরা জানালেন, আজ রাত পর্যন্ত এভাবেই তারা গোশত বিক্রির আশা করছেন। শবেবরাতের কারণে দামও বেশি। কেজিতে অন্তত ৫০-১০০ টাকার ব্যবধান। বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বলেছেন, সরকার কর্তৃক দাম নিধারণ করা হয়নি। যে কারণে যে যেভাবে পারছে মূল্য আদায় করছে।

গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে গরুর গোশতের দোকানগুলোতে ভিড় লেগে আছে। সবাই ব্যাগ ভর্তি করে গোশত কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে ৮-১০ কেজি পর্যন্ত গোশত কিনছেন। আর দোকানিরাও বেশি বিক্রির জন্য আগে থেকেই গরু কিনে রেখেছেন বেশি করে। মানিকনগর রেললাইনের পাশের এক দোকানি জানালেন, প্রতি বছরই কোরবানির সময় গরুর গোশতের চাহিদা বেড়ে যায়। যে কারণে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখেন। এ বছরও বাড়তি ১০টি গরু আগে থেকেই কিনে রেখেছেন।

গতকাল দোকানগুলোতে দেখা যায় ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায় গরুর গোশত বিক্রি হচ্ছে। আর খাসির গোশত বিক্রি হচ্ছে ৯৫০ টাকায়। অথচ এই গরুর গোশতের দাম গত সপ্তাহেও ছিল ৫৫০-৫৬০ টাকা। কেজিতে ৫০ থেকে এক শ’ টাকা বেশি নেয়ার কারণ সম্পর্কে দোকানিদের সাথে কথা বলে জানা গেল হাটেই গরুর দাম নাকি বেড়েছে। জাকির হোসেন নামের এক গোশতবিক্রেতা বলেন, দোকানের বাইরেও পাড়া-মহল্লাতেও গরু জবাই হবে শবেবরাতকে কেন্দ্র করে। যে কারণে বাজারে হঠাৎই চাপ পড়ায় গরু ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়েছেন, যার প্রভাব পড়েছে গোশতের ক্রেতাদের ওপর।

গরুর গোশতের সাথে বেড়েছে খাসির গোশতের দামও। গতকাল খাসির গোশত ৯৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। আবার কোনো কোনো দোকানে ৯০০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। বকরি বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকায়।

বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম গতকাল বলেন, সরকার গোশতের কোনো দাম নির্ধারণ করে দেয়নি। যে কারণে ফ্রি স্টাইলে সবাই দাম রাখছে। তিনি বলেন, গোশতের বাজারে হরিলুট চলছে। বাজারে ক্রেতাদের কোনো অধিকার নেই। গরুর গোশতের দাম এই মুহূর্তে ৫৫০ টাকা হওয়া উচিত। আর গাবতলী গরুর হাটকে চাঁদাবাজমুক্ত করে সিন্ডিকেট ভেঙে দিলে এবং বাংলাদেশের চরাঞ্চলে ব্যাপকভাবে গরু ও মহিষের লালন পালন হলে গোশত আরো কম দামে সরবরাহ করা সম্ভব।

এ দিকে মুরগির দাম গত এক মাস ধরে শুধু বেড়েই চলছে। শবেবরাতকে কেন্দ্র করে বেড়েছে আরেক দফায়। দু’মাস আগেও বাজারে ব্রয়লার মুরগির কেজি ছিল ১০০ টাকা। গত মাসে ছিল ১২০ টাকা কেজি। এখন তা বেড়ে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায় উঠেছে। গত এক মাসে প্রতি কেজিতে ব্রয়লার ৫০ ও সোনালি মুরগির দাম ১০০ টাকা বেড়েছে। দোকানিরা বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে সোনালি মুরগির দাম। খামারে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর বাজারে তা ৩৪০ থেকে ৩৫০ টাকা। গত মাসের শুরুতে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা ছিল। দেশী মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৫৫০ টাকা কেজি। এক কেজি মুরগি কিনলে দেখা যায় ৭০০-৭৫০ গ্রাম টিকছে। সে ক্ষেত্রে দেশী মুগরির দাম বর্তমানে গরুর গোশতের দামের চেয়ে বেশি পড়ছে।


আরো সংবাদ



premium cement