২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইপিজেড শ্রমিকদের জন্য হেল্পলাইন চালু, কতটুকু উপকারে আসবে

-

বাংলাদেশের আটটি রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা বা ইপিজেডে শ্রমিকদের জন্য রোববার একটি হেল্পলাইন চালু করেছে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ বেপজা।

বলা হচ্ছে, ১৬১২৮ নম্বরে ফোন করে নিজেদের অভিযোগ জানাতে পারবেন শ্রমিকরা। এমনিতে বেপজার নিয়ন্ত্রণে থাকা ইপিজেডগুলোতে শ্রমিকদের ইউনিয়ন করার অধিকার নেই। সাধারণের প্রবেশগম্যতাও খুব বেশি নয়, আবার নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের কড়াকড়িও অনেক বেশি, ফলে শ্রমিক অধিকার কর্মীরা বলছেন, এই হেল্পলাইন শ্রমিকদের খুব একটা কাজে আসবে না।

যদিও বেপজা বলছে, অতি সহজে যাতে ইপিজেডের শ্রমিকরা কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছাতে পারে সে লক্ষ্যেই এই হেল্পলাইনটি চালু করা হচ্ছে।

হেল্পলাইনটি রোববার বিকেল থেকেই খোলা থাকছে। কর্মকর্তারা বলছেন, হেল্পলাইনটি সপ্তাহের সাত দিন ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে। যেকোনো নম্বর থেকে ১৬১২৮ নম্বরে ফোন করে অভিযোগ করা যাবে।

বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোঃ নজরুল ইসলাম বিবিসিকে বলেন, এই হেল্পলাইনের মাধ্যমে একদিকে যেমন সমস্যার সমাধান করা যাবে অন্যদিকে একটি উন্নতমানের কর্মক্ষেত্র নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।

নজরুল ইসলাম বলেন, এর আগে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা থাকলেও সেটা ছিল বেশ দীর্ঘ প্রক্রিয়া। তবে এই হেল্পলাইন চালুর মাধ্যমে অভিযোগ জানানোর প্রক্রিয়া সহজ করা হল।

‘একটা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যেকোনো জায়গা থেকে গোপনীয়তা রক্ষা করে একজন কর্মচারী অতি সহজে তার অভিযোগ কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারবে।’

বেপজার চেয়ারম্যান বলেন, প্রাথমিকভাবে অভিযোগকারীর পরিচয় এবং তার ব্যক্তিগত তথ্য তাদের কাছে থাকবে। তবে যদি তার অভিযোগের বিষয়টি স্পর্শকাতর হয় তাহলে সেক্ষেত্রে তার পরিচয় গোপন রাখা হবে এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তার সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে।

নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সব ধরণের সমস্যা বিশেষ করে তাদের কর্মক্ষেত্রের সমস্যা সম্পর্কে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে পারবে।’

বেপজাভুক্ত কারখানাগুলোতে, নিরাপদ কর্মক্ষেত্র ও কর্ম-পরিবেশ নিশ্চিত করা, সুস্বাস্থ্যের জন্য হাসপাতালের সুবিধা, ডে-কেয়ার সেন্টার, স্কুলের মতো সুযোগ সুবিধা থাকার কথা রয়েছে।

কিন্তু কোনো কারখানায় যদি এগুলো না থাকে এবং থাকলেও যদি সেগুলো সঠিকভাবে কাজ না করে তাহলে সে সম্পর্কিত অভিযোগ এই হেল্পলাইনের মাধ্যমে জানানো যাবে।

এছাড়া কেউ যদি কর্মক্ষেত্রে কোনো ধরণের হয়রানির শিকার হয় তাহলে সে সম্পর্কিত অভিযোগও করা যাবে এই হেল্পলাইনের মাধ্যমে।

নজরুল ইসলাম বলেন, বেপজাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে বেতন না দেয়ার মতো ঘটনাগুলো খুবই কম। এসব প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক নীতি অনুসরণ করে শ্রমিকদের সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে।

তবে বেপজাভুক্ত কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বেতন না দেয়ার মতো অভিযোগ পাওয়া গেলে তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

১৬১২৮ হেল্পলাইনটি বেপজা সদরদফতর থেকে পরিচালনা ও পর্যবেক্ষণ করা হবে বলে জানাচ্ছেন কর্মকর্তারা।

নজরুল ইসলাম বলেন, হেল্পলাইনের মাধ্যমে যেসব অভিযোগ পাওয়া যাবে বা যেগুলো সদরদফতরে জমা হবে সেগুলোকে আবার বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে।

অর্থাৎ অভিযোগগুলো যে ইপিজেড এলাকা রয়েছে সেখানে পাঠিয়ে দেয়া হবে। বেপজাভুক্ত আটটি ইপিজেড এলাকা রয়েছে।

প্রতিটি ইপিজেড-এ নানা ধরণের সমস্যা সমাধানের জন্য সম্পূর্ণ আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে। মূলতঃ তারাই অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে বলে জানাচ্ছেন নজরুল ইসলাম।

তবে পোশাক শিল্পের শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের বক্তব্য এই উদ্যোগে শ্রমিকদের তেমন কোনো উপকার হবে না।

তাদের মতে, এটা আসলে বিদেশি ক্রেতা এবং সাধারণ মানুষদের দেখানোর জন্য উদ্যোগ যেটা শুধু 'ফরমায়েশি' মাত্র।

পোশাক খাতের ট্রেড ইউনিয়নগুলোর একটি প্ল্যাটফর্ম, গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কার্যকরী সভাপতি কাজী রুহুল আমিন বলেন, ইপিজেড এর ভেতরে ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার নাই। ইপিজেড এ আলাদা আইন করে শ্রমিকদের শ্রম আদালতে আইনের সুবিধা নেয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে যা বাংলাদেশের সংবিধান ও আইএলও কনভেনশনের পরিপন্থী।

তিনি অভিযোগ করেন, বেপজা অধিকাংশ ক্ষেত্রে মালিকদের পক্ষপাতিত্ব করে এবং শ্রমিকদের সংগঠন করার অধিকার, আইনানুগ অধিকার- দুটোই খর্ব করে।

তিনি বলেন, বেপজাতে এরই মধ্যে বহু অভিযোগ লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। কিন্তু বেপজা মালিকদের নির্দেশে পরিচালিত হয় বলে এসব অভিযোগের মিমাংসা করে না।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement