২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

তিন বছরের প্রকল্প শেষ হয় না ৬ বছরে

তিন বছরের প্রকল্প শেষ হয় না ৬ বছরে - ছবি : সংগৃহীত

দেশের সব উন্নয়ন প্রকল্পের একই দশা। ফ্রিস্টাইলে হচ্ছে প্রকল্পের বাস্তবায়ন। অনুমোদিত মেয়াদ ও খরচে কোনো প্রকল্পই সমাপ্ত হচ্ছে না। অনুমোদিত এবং দ্বিগুণ বর্ধিত মেয়াদেও শেষ হচ্ছে না ঘোড়াশাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের তৃতীয় ইউনিট রি-পাওয়ারিং প্রকল্পের কাজ। নির্ধারিত তিন বছর মেয়াদে শেষ না হওয়ায় ঘোড়াশাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের তৃতীয় ইউনিট সংস্কার প্রকল্পের ব্যয় ৪৩৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা বেড়ে এখন দুই হাজার ৯৫৬ কোটি ৮১ লাখ ৩৯ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে। প্রকল্প বর্ধিত মেয়াদে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে সমাপ্ত করার কথা ছিল বলে পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। আর বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানের বক্তব্য হলো, পিজিসিবি তার কাজ করতে অত্যাধিক সময়ক্ষেপণ করেছে। বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যেও পিজিসিবি ওই কাজ সমাপ্ত করতে পারছে না।

পরিকল্পনা কমিশনের কাছে পাঠানো প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, ঘোড়াশাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের তৃতীয় ইউনিটকে রি-পাওয়ারিং প্রকল্পের কাজ তিন বছরে বাস্তবায়নের জন্য ২০১৫ সালের মার্চে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) অনুমোদন দেয়া হয়। যার খরচ ধরা হয় দুই হাজার ৫১৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। ঘোড়াশাল তৃতীয় ইউনিট শুরুতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ২১৭ মেগাওয়াট। পুরনো হওয়ায় এখন তা কমে ১৭০ মেগাওয়াটে নেমে আসে। সংস্কারের মাধ্যমে তা আরো ২৬০ মেগাওয়াট বৃদ্ধির পরিকল্পনা নিয়ে এই সংস্কার প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়। প্রকল্প ব্যয়ের দুই হাজার ১৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা প্রকল্প ঋণ হিসেবে আসবে বলে ধরা হয়। যা ক্রেতা ঋণ বলে হংকং সাংহাই ব্যাংক (এইচএসবিসি) প্রদান করছে। কিন্তু পরে বায়ার্স ক্রেডিটে চীনের এইচএসবিসি ব্যাংক অর্থায়ন করে। এটা ইসিএ ঠিকাদারের ঋণ। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পটি সমাপ্ত করার কথা ছিল। নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প শেষ করতে পারেনি বাস্তবায়নকারী সংস্থা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। পরে দুই বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নেয়া হয়। তাতেও তারা সমাপ্ত করতে ব্যর্থ হয়। গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি ৮৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ, বাস্তব অগ্রগতি ৯৭ শতাংশ। ফলে আরো দেড় বছর সময় বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড থেকে। দেশের মানুষকে বিদ্যুৎ দিতে সরকার বিদ্যুৎ খাতে প্রকল্প নিয়েছে। নতুন কেন্দ্র তৈরির খরচে সংস্কার করা হচ্ছে পুরনো বিদ্যুৎ ইউনিট।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ঋণদাতার সাথে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী নতুন করে একজন কারিগরি ও একজন পরিবেশ বিষয়ক পরামর্শক নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে। পরামর্শক খাতে খরচ আগে ছিল ১০ কোটি ৭২ লাখ টাকা। নতুন করে আরো দু’জনের নিয়োগের কারণে সেই খরচ ১৬ কোটি ৮ লাখ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। প্রকল্প মেয়াদ শেষ হওয়ার কয়েক মাস পরে প্রকল্পটি সংশোধনের জন্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়।

স্টিয়ারিং কমিটির সাম্প্রতিক সভায় প্রকল্প পরিচালক জানান, প্রকল্পের সিম্পল সাইকেল সিওডি অর্জিত হয়েছে। কম্বাইন্ড সাইকেলের নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে। সংশোধিত চুক্তি অনুযায়ী কম্বাইন্ড সাইকেলের সিওডি ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারিত ছিল। কিন্তু বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়ায় ওই সময়সীমা চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো প্রয়োজন। তিনি কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন, পিজিসিবি কর্তৃক নির্মাণাধীন ২৩০ কেভি জিআইএস সাব স্টেশনের কাজ শেষ না হওয়াতে তৃতীয় ইউনিট রি-পাওয়ারিং প্রকল্পে ব্যাকফিড পাওয়ার সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। ২০২০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর পিজিসিবি এক পত্রে উল্লেখ করেছে, ২৩০ কেভি জিআইএস উপকেন্দ্রের কমিশনিংয়ের জন্য বিদেশী বিশেষজ্ঞরা কোভিড-১৯ এর কারণে এখনো বাংলাদেশে আসতে পারেনি। কবে নাগাদ আসবে তাও নিশ্চিত নয়। ওই কমিশনিং কাজ শুরু করার পর ২৩০ কেভি জিআইএস উপকেন্দ্রটি চালু করতে কমপক্ষে তিন মাস সময়ের প্রয়োজন হবে।

আর প্রকল্পের ইপিসি ঠিকাদার জানায়, ২৩০ কেভি জিআইএস উপকেন্দ্রের ব্যাকফিড পাওয়ার প্রাপ্তির পর কম্বাইন্ড সাইকেল চালু করতে অন্তত ছয় মাস সময়ের প্রয়োজন হবে।

সময়ক্ষেপণের ব্যাপারে পিজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলছেন, উপকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলমান আছে। উপকেন্দ্রের কমিশনিংয়ের জন্য বিদেশী বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশে আসতে শুরু করেছে। আশা করা যাচ্ছে ২৩০ কেভি জিআইএস উপকেন্দ্রের কাজ দ্রুতই সমাপ্ত হবে।

প্রকল্পের সর্বশেষ অবস্থা জানার জন্য গতকাল সন্ধ্যায় প্রকল্প পরিচালক আহসান হামিদের মুঠোফোনে কয়েক দফা রিং দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য (সচিব) শরিফা খানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।


আরো সংবাদ



premium cement