১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

এনজিও ঋণে সুদহার কমানোর উদ্যোগ

-

ব্যাংক ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে অর্থাৎ ৯ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা হয়েছে গত এক বছর যাবৎ। কিন্তু ক্ষুদ্র ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সুদহার এখনো ১৮ শতাংশের ওপরে রয়েছে। উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করতে গিয়ে তাই অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়ছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। এমনি পরিস্থিতিতে এনজিও ঋণের সুদহার কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে ক্ষুদ্রঋণ দানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথোরিটি (এমআরএ)। এজন্য উচ্চ পর্যায়ের ১০ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, গত বছরের ১ এপ্রিল থেকে ব্যাংক ঋণের সুদহার ৯ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা হয়েছে। শুধু ক্রেডিট কার্ড ছাড়া আর প্রায় সব ঋণের গ্রাহকরা ব্যাংক থেকে কম সুদে বিনিয়োগ পাচ্ছেন। এতে ব্যবসায়ের ব্যয় কমে গেছে। কিন্তু একই উদ্যোক্তা যখন এমআরএ লাইসেন্স প্রাপ্ত ক্ষুদ্র ঋণদান প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিচ্ছেন, তখন প্রতি ১০০ টাকার জন্য ব্যয় করছেন ১৮ থেকে ৩০ টাকা। অর্থাৎ ক্ষেত্রবিশেষে ৩০ শতাংশ সুদে উদ্যোক্তারা এসব প্রতিষ্ঠান থেকে বিনিয়োগ নিচ্ছেন। এতে তাদের একদিকে যেমন ব্যবসা-ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে, তেমনি একই বাজারে পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছেন। অনেকেই ব্যবসায়ে লোকসান গুনছেন। এমনি পরিস্থিতিতে এনজিও ঋণের সুদহার কমানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা এমআরএ থেকে।

জানা গেছে, এমআরএর নিবন্ধন নিয়ে মাঠ পর্যায়ে ৮০০ প্রতিষ্ঠান বা এনজিও ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ করে। এর মধ্যে ২০২টি প্রতিষ্ঠান পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) থেকে অর্থায়ন পায়। ক্ষুদ্রঋণের সুদের হার কমেছে এসব প্রতিষ্ঠানে। বাকি ৬০০ প্রতিষ্ঠানের সুদের হার এমআরএ ২৪ শতাংশ বেঁধে দিয়েছে। এনজিও ঋণের সুদহার যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার জন্য ইতোমধ্যে এমআরএ থেকে ১০ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এমআরএর নির্বাহী চেয়ারম্যান মো: সফিউল্লাহর নেতৃত্বে গঠিত এই কমিটিতে বাংলাদেশ ব্যাংক, ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে অর্থায়নকারী সংস্থা পিকেএসএফ, ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে গবেষণাকারী সংস্থা ক্রেডিট ডেভেলপমেন্ট ফোরামসহ (সিডিএফ) কয়েকটি ক্ষুদ্রঋণ দানকারী প্রতিষ্ঠান এতে সদস্য হিসেবে রয়েছে। কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবে এমআরএ। অচিরেই কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে।

কমিটির একজন সদস্য জানান, ব্যাংকিং খাতে ঋণের সুদের তুলনায় ক্ষুদ্রঋণের সুদের হার অনেক বেশি। এ খাতেও সুদের হার কমানোর জন্য দীর্ঘদিন ধরে নানামুখী উদ্যোগ চলছে। এতে সুদের হার কিছুটা কমেছে। তবে আরো কমাতে হবে। সুদের হার না কমাতে এ খাতের ঋণ গ্রহীতারা ইতিবাচক ফল পাচ্ছেন না। বিশেষ করে কুটির, অতি ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সহায়তা করতে সুদের হার কমানো হবে।

এ দিকে ক্ষুদ্রঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে সুদের হার কমানোর ক্ষেত্রে আপত্তি করা হচ্ছে। তারা বলছে, সুদের হার কমানো হলে আয় কমে যাবে। তখন প্রতিষ্ঠানগুলো ঝুঁকিতে পড়বে। অন্য দিকে এমআরএর একজন কর্মকর্তা জানান, ক্ষুদ্রঋণ খাতে খেলাপির হার খুবই কম। ফলে সুদের হার কমালে কোনো ঝুঁকি আসবে না। এমআরএ পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় পর্ষদের সদস্য অর্থ মন্ত্রণালয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম, এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক আবদুস সালাম, পিকেএসএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আবদুল্লাহ ও সদস্যসচিব এমআরএর নির্বাহী চেয়ারম্যান মো: সফিউল্লাহ। সভায় বলা হয়, কমিটি ঋণের সুদের হার কমাতে ছোট, বড় ও মাঝারি ধরনের ক্ষুদ্র ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্ন আয়-ব্যয় ও তহবিল ব্যবস্থাপনা খরচ পর্যালোচনা করে দেখবে। এর মধ্যে কোন কোন খাতে ব্যয় কমানো ও আয় বাড়ানো সম্ভব সেগুলো খতিয়ে দেখবে। একই সাথে তহবিল ব্যবস্থা ব্যয় কমিয়ে ঋণের সুদের হার কমানোর কৌশল নির্ধারণ করবে। এর জন্য কমিটি প্রয়োজনীয় সুপারিশও করবে। কমিটি পর্ষদের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবে। তবে এ জন্য কোনো সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

উল্লেখ্য, করোনার সময়ে ক্ষুদ্রঋণ খাতে বিতরণের জন্য তিন হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তহবিল থেকে মাঠ পর্যায়ে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়া হচ্ছে। এর আলোকে এনজিও খাতেও কিভাবে ঋণের সুদের হার কমানো যায় সে বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখবে। প্রয়োজনীয় কম সুদের একটি তহবিল গঠন করে তা থেকে প্রতিষ্ঠানগুলোতে তহবিল জোগান দেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement