২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

তদারকির আওতায় ব্যাংকের পরিচালক ও শীর্ষ নির্বাহীরা

তদারকির আওতায় ব্যাংকের পরিচালক ও শীর্ষ নির্বাহীরা - নয়া দিগন্ত

ব্যাংকের কিছু পরিচালক ও শীর্ষ নির্বাহীর বিরুদ্ধে জনগণের অর্থ লুটপটের অভিযোগ উঠেছে। ইতোমধ্যে ঋণের নামে কয়েক হাজার কোটি টাকা নিয়ে পালানোর অভিযোগ উঠেছে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান রিলায়েন্সের এমডি প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যে আদালতের নির্দেশে তার ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়েছে। এসব অ্যাকাউন্টে থাকা সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি পি কে হালদারের ৮৩ সহযোগীর ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়েছে। মাঝে মাঝেই ব্যাংকিং খাতে এমন ঘটনার অভিযোগ উঠছে। হলমার্ক, বিসমিল্লাহ, বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি এসব ঘটনারই অংশ। এমনি পরিস্থিতিতে ব্যাংকের পরিচালক ও শীর্ষ নির্বাহীদের তদারকির আওতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ইতোমধ্যে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তাদের নিজেদের ও পারিবারিক ব্যবসায়িক স্বার্থসংশ্লিষ্টতার বিবরণ পর্ষদে দাখিল করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংক কোম্পানি আইনে ব্যাংকের পরিচালক, এমডি ও তার দুই স্তর নিচের কর্মকর্তার সম্পদ বিবরণী দাখিলের বিধান ছিল; কিন্তু বিধানটি এত দিন কার্যকর ছিল না। ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১৮ ধারার উপধারা (২) বলা হয়েছে, ‘ব্যাংক-কোম্পানির প্রত্যেক পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী ও তাহার নিম্ন দুই স্তর পর্যন্ত কোনো কর্মকর্তাকে স্ব স্ব বাণিজ্যিক, আর্থিক, কৃষি, শিল্প এবং অন্যান্য ব্যবসার নাম, ঠিকানা ও অন্যান্য বিবরণ এবং পারিবারিক ব্যবসায়িক স্বার্থসংশ্লিষ্টতার বিবরণ লিখিতভাবে পরিচালনা পর্ষদের নিকট বাৎসরিক ভিত্তিতে প্রদান করিতে হইবে।’

ব্যাংক কোম্পানি আইনের আলোচ্য ধারাটি এত দিন কোনো কার্যকারিতা না থাকায় ব্যাংকিং খাতে সহজেই অপরাধ সংঘটিত হতে থাকে। ঘটনা বড় আকারে যাওয়ার পর বিষয়গুলো নিয়ে হই চই পড়ে পড়ে যায়। তত দিনে জনগণের আমানত চলে যায় কিছু অসাধু ব্যাংক পরিচালক ও শীর্ষ নির্বাহীর পকেটে। বেশি জানাজানি হয়ে গেলে অনেকেই পাড়ি জমান বিদেশে। যেমন বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও এমডি দুইজনই দেশের বাইরে রয়েছেন। আবার সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ লোপাটের হোতা পি কে হালদার বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন।

সামনের দিনগুলোতে ব্যাংকিং খাতে যেকোনো অঘটন প্রতিরোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংক কোম্পানি আইনের আলোচ্য ধারাটি কার্যকর করেছে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ব্যাংক কোম্পানি আইনের আলোচ্য ধারার বিধান পরিপালনের লক্ষ্যে প্রতিটি ব্যাংকের পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও তার নিম্নতর দুই স্তর পর্যন্ত কর্মকর্তাদের নিজ নিজ বাণিজ্যিক, আর্থিক, কৃষি, শিল্প এবং অন্যান্য ব্যবসার নাম, ঠিকানা ও অন্যান্য বিবরণী প্রতি পঞ্জিকা বছর শেষে দাখিল করতে হবে। পরবর্তী বছরের ২০ জানুয়ারির মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে এসব বিবরণী জমা দিতে হবে।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পারিবারিক ব্যবসায়িক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিবরণীও জমা দিতে বলা হয়েছে। এতে আরো বলা হয়েছে, ২০২০ সালের বিবরণীগুলো আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জমা দেয়া যাবে। দাখিলকৃত বিবরণী পরবর্তী পর্ষদ সভায় উপস্থাপন করতে হবে। ব্যাংক থেকে এসব বিবরণী যথাযথভাবে সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। এ নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর করতে বলা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার আদালতের এক আদেশে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান দেখভাল ও অর্থপাচার প্রতিরোধে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বপ্রাপ্ত সব কর্মকর্তার তালিকা ও পরিচয় দাখিলের জন্য গভর্নরকে নির্দেশ দেন আদালত। অর্থ লুটপাট ও পাচারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের কোনো ইন্ধন বা যোগসাজশ ছিল কি না, তা যাচাইয়ের জন্য এসব তথ্য চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিচারপতি মো: নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহিউদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ।


আরো সংবাদ



premium cement