২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কৃষি শুমারিতে অপচয় ১৩ কোটি, সতর্ক করলেন মন্ত্রী

কৃষি শুমারিতে অপচয় ১৩ কোটি, সতর্ক করলেন মন্ত্রী - ছবি : সংগৃহীত

কৃষি শুমারি প্রকল্পে অপচয় হয়েছে ১৩ কোটি টাকা। যা সরকারকে ড্যামারেজ দিতে হয়েছে বলে জানান পরিসংখ্যান সচিব। আর পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান পরিসংখ্যান ব্যুরোর কর্মকর্তাদের প্রকল্পে কেনা-কাটার ক্ষেত্রে সতর্ক ও সাবধান হওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। ক্রয়টা যথাসময়ে করবো। আগেও না পরেও না। আগে কেনার কারণে অনেক পণ্য নষ্ট হয়। যা নির্বাচন কমিশনে কর্মরতকালে তিনি চাক্ষুস দেখেছেন বলে উল্লেখ করেন।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২১’ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর অডিটোরিয়ামে মাস্টার ট্রেইনারদের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এই সাবধানতা উচ্চারণ করেন।

এর আগে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ১৩ কোটি টাকা গচ্চার তথ্যটি প্রকাশ করেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী। বিবিএস মহাপরিচালক মো: তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রকল্পের জনশুমারির কার্যক্রম তুলে ধরেন প্রকল্প পরিচালক কবির উদ্দিন আহাম্মদ।

এম এ মান্নান বলেন, ‘সচিব নতুন এসেছেন, আমরাও নতুন। অতীতে এখানে কিছু কিছু প্রকিউরমেন্ট হয়েছে। তাও তিন বছর আগে, ২০১৯ সালে। সচিবকে অনুরোধ করেছি সেগুলোর বর্তমান অবস্থা খতিয়ে দেখতে। সেগুলো ব্যবহার করা যায় কি না তা দেখবেন তিনি। কারণ যন্ত্রপাতির একটি বয়স আছে। এই যে এবার হলো ২০২১ সাল, ২০১৯ সালে কেনা হয়ে গেছে মাল। প্রকল্পটা পাস হওয়ার সাথে সাথে এবং এখানে স্টোর করা আছে ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য। সেগুলো খুবই স্পর্শকাতর। সচিব, মহাপরিচালক (মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম), প্রকল্প পরিচালককে বলবো আপনারা দেখবেন সেগুলোকে কাজে লাগবে কি না।’

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘এখানে কিছু কিছু ব্যয় আছে। সেগুলোর ব্যাপারে আমাদের সাবধান হতে হবে। যেমন একটি আইটেম হলো প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিকেশন। দেখি মাঝে মাঝে আমার কাছে ১০ বা ৮ বছর আগের খাতা রাফ হিসেবে ব্যবহার করার জন্য হাজির হয়ে গেছে। অনেক সময় অনেক জায়গায় যাই, পেন্সিল বা কলম চেষ্টার পরে ও লিখে না। এগুলো আমরা সবাই বুঝি। সাপ্লাইয়ের পণ্য যারা দেন, তারাও তো দু’পয়সা বাঁচাতে চান। তিনি বলেন, তার কাছে এটি ন্যায়সঙ্গত। তবে আমাদেরকে যত্নবান হতে হবে।’

সাবধানতার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘মাছের কান দেখে মাছ কিনি। লাল নাকি সাদা। আপনারা প্রকিউরমেন্টে যারা থাকবেন, প্লিজ ভেরি কেয়ারফুল। বিশেষ করে স্টেশনারি পণ্যের মধ্যে টাকা বাঁচানোর স্কোপ আছে বলে আমার মনে হয়। আমি সরকারের বিভিন্ন অফিসে যাই, স্টেশনারির কাগজ, কলম-পেন্সিল, ছোট কলম, বড় কলম বানানো হয়। বানান, কিন্তু তা সাবধানে। যাতে কাজে লাগে।’

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘টাকা আমাকে বাঁচাতে হবে। কারণ এটি তো জনগণের টাকা। যে লোক টাকা দিচ্ছে তিনি নিজে কিন্তু খরচ করতে পারছে না। তার ঘরে গিয়ে দেখেন, আমার মতো বসার কোনো চেয়ার-টেবিল নেই। তারা মেঝেতে বসে কাজ করছে। অথচ তারাই দেশের মালিক। তিনি বলেন, আমাদের সাবধানতার সাথে ব্যয় করতে হবে। তবে না খেয়ে টাকা বাঁচাতে বলছি না। খেতেও হবে, হিসাবও রাখতে হবে। ব্যয় ছাড়া অর্থনীতি স্তিমিত হবে।’

নির্বাচন কমিশনে কাজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘আমি নির্বাচন কমিশনে চাকরি করেছিলাম কয়েক বছর। অনেক বছর আগে। নির্বাচনের জন্য কী কী সব সরঞ্জাম কেনা হয়েছিল। হাজার হাজার কেনা হয়েছিল স্টক আছে, জমে পাথর হয়ে গেছে। এরকম জিনিস আমি দেখে এসেছি ওখানে। এটি হওয়া উচিত নয়।’

সচিব মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী বলেন, জনশুমারি প্রকল্পে ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করছি। কেননা কৃষি শুমারিতে কাগজ-কলম ব্যবহার করতে গিয়ে ১৩ কোটি টাকা গচ্চা দিতে হয়েছে। কাগজ নষ্ট হয়েছে অনেক, কিন্তু তথ্য ধরা যাচ্ছিল না। তিনি বলেন, সংসদীয় কমিটিতে এই ১৩ কোটি টাকার বিষয়ের সাথে কারা জড়িত তাদের বের করে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বলা হয়। অনেক দেনদরবার করে এই টাকা পাস করাতে হয়েছিল। এ রকম ঘটনা যেন আর না ঘটে।

উল্লেখ্য, এই প্রকল্পের মোট ব্যয় এক হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। ষষ্ঠ এই জনশুমারি করোনার কারণে ১০ মাস পিছিয়ে গেছে। আগামী ২৩ জানুয়ারি থেকে ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম পরিচালিত হবে।


আরো সংবাদ



premium cement