১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

যেভাবে একই সাথে চাষ করবেন মাছ ও মুরগি

পুকুরে মাছ ও উপরে মুরগি - ছবি : বিবিসি

গবেষকরা বলছেন সীমিত জায়গার সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে মাছ ও মুরগি সমন্বিত চাষ করা যায় এবং এ ধরণের সমন্বিত চাষের ফলে অল্প খরচে বেশি মাছ উৎপাদন সম্ভব হয়।

তারা বলছেন, এ পদ্ধতিতে মাছের জন্য আলাদা করে সার বা খাদ্য দেয়ার প্রয়োজন হয় না বরং মুরগির উচ্ছিষ্টই মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

আর মিশ্র এ চাষ পদ্ধতিতে প্রতি শতক জমিতে ২০ থেকে ২৫ কেজি মাছ উৎপাদন সম্ভব। তাছাড়া সমন্বিত পদ্ধতিতে শুধু মুরগিই নয়, হাঁসও চাষ করা যায়।

মুরগি ও মাছ একসাথে চাষের সুবিধা
বাংলাদেশের উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএসসি প্রোগ্রামের কৃষিশিক্ষা বইতে বলা হয়েছে মুরগির বিষ্ঠা ও পড়ে যাওয়া খাদ্য মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

আবার পুকুরের পাড়ে বা পানির ওপর ঘর তৈরি করা হয় বলে মুরগির ঘরের জন্য আলাদা করে জায়গার দরকার হয় না। আবার পানির ওপরে ঘর হওয়ার কারণে মুরগির বিষ্ঠা সরাসরি পানিতেই পড়ে।

পাশাপাশি মুরগিকে যে খাবার দেয়া হয় তার অব্যবহৃত অংশ এবং পানিতে পড়ে যাওয়া খাদ্য মাছের সম্পূরক খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

অন্যদিকে মাটির সংস্পর্শে না থাকায় মুরগির রোগ বালাই কম হয় ও স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

আর মুরগির বিষ্ঠা পুকুরের সার হিসেবেও কাজ করে।

মাছের জাত নির্বাচন ও সংখ্যা
সমন্বিত মুরগি ও মাছ চাষ পদ্ধতিতে পুকুরে বিভিন্ন জাতের মাছ ছাড়তে হবে এবং মাছ যেন একে অপরের প্রতি সহনশীল হয়।

বিভিন্ন খাদ্যাভ্যাসের বিভিন্ন মাছ ছাড়লে পুকুরে উৎপাদিত খাদ্য যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত হবে এবং মাছের উৎপাদনও বাড়বে।

শুধু এক প্রজাতির মাছ ছাড়লে এক জাতীয় এবং এক স্তরের খাদ্য খাবে, তাদের খাদ্যের সম্পূর্ণ ব্যবহার হবে না। ফলে মাছ উৎপাদন কম হবে।

উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএসসি প্রোগ্রামের কৃষিশিক্ষা বইতে লেখা হয়েছে, "তাই সমন্বিত মুরগি ও মাছ চাষ পদ্ধতিতে পুকুরের তলা, পানির মধ্য ভাগ এবং উপরিভাগের খাদ্য খায় এমন প্রজাতি যথাক্রমে মৃগেল, কালা বাউশ, রুই কাতলা কিংবা সিলভার কার্প জাতীয় মাছ ছাড়তে হয়"।

এতে আরো বলা হয়েছে যে ৩৩ শতাংশের একটি পুকুরে আট থেকে দশ সেন্টিমিটার আকারের এক হাজার পোনা মাছ ছাড়া যেতে পারে।

এছাড়া নির্ধারিত হারে মাছ ছাড়লে প্রতি বিঘায় অন্তত ৬ শ' কেজি মাছ, ১২-১৫ হাজার ডিম ও প্রায় এক হাজার কেজি ব্রয়লারের গোশত উৎপাদন সম্ভব।

মুরগির সংখ্যা কেমন হবে
কৃষিবিদ ফরহাদ আহাম্মেদ লিখেছেন, প্রতি শতাংশে দুটি হারে মুরগি পালন করলে মাছ চাষের জন্য কেনো সার বা খাদ্য দিতে হয় না।

এ হিসেবে বিঘাপ্রতি ৬০-৭০টি ও একর প্রতি ২০০ মুরগি পালন করা যায়।

তবে সময়মতো দরকারি ভ্যাকসিন দিতে হবে এবং মুরগি অসুস্থ হলে ঘর থেকে সরিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে দেখা যাচ্ছে না কেন?
মৎস্য গবেষণা ইন্সটিউটের যশোর স্বাদুপানি উপকেন্দ্রের প্রধান ডঃ রবিউল আউয়াল হোসেন বলছেন, গৃহস্থালি হিসেবে এটি দারুণ একটি আইডিয়া যা ইন্সটিটিউট থেকে অনেক আগেই প্রবর্তন করা হয়েছিলো।

"ধরুন বাড়িতে একটি পুকুর আছে সেখানে একই সাথে মাছ ও মুরগি চাষ তো বটেই সাথে পুকুরের পাড়ে সবজি আবাদ করা যায়। এতে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ আরো বেড়ে যায়। কিন্তু মাছ চাষ নিয়ে অতিরিক্ত বাণিজ্যিক চিন্তার কারণে এটির প্রচলন হয়তো খুব বেশি হয়নি"।

তিনি বলেন, ধারণাটি যতটা সম্ভাবনাময় ছিলো ততটা হয়নি - কারণ মাছ চাষ নিয়ে বড় বড় প্রকল্প এসেছে এবং তাতে বেশি ঘনত্বের মাছ চাষ হচ্ছে।

"মুরগি ও মাছ- সমন্বিত চাষে ঘনত্বের বিষয়টি ঠিক মতো করতে হয়। অতিরিক্ত ঘনত্বের মাছ চাষে সেটি হয় না। তাই এখন ঘর গৃহস্থালির ক্ষেত্রে বিশেষ করে বাড়িতে যাদের পুকুর আছে তারা এটি করলে বেশি সুবিধা পাবেন বলে আমি মনে করি"।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement