বিকল্প বিনিয়োগে ২ বছরের ছাড় দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক
- আশরাফুল ইসলাম
- ০৬ অক্টোবর ২০২০, ১১:৪৩
বিকল্প বিনিয়োগে ব্যাংকগুলোকে দুই বছরের জন্য ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্পূর্ণ নতুন কোনো খাতে কোনো ব্যাংক ঋণ দিলে এ জন্য ঝুঁকিভার হবে ১০০ শতাংশ, আগে যা ছিল ১৫০ শতাংশ। ঝুঁকিভার কমিয়ে দেয়ায় ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে কম মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে। এ সুযোগ ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এতে নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো আগ্রহী হবে। তবে, সম্পদের গুণগত মান কমে যাবে। আমানতকারীদের আমানত ঝুঁকির মুখে পড়াসহ খেলাপি ঋণ আরো বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রচলিত বিধান অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ করে ঋণের ধরন অনুযায়ী ঝুঁকিভার নির্ণয় করা হয়। যেসব খাতে ঋণঝুঁকি বেশি, ওই সব খাতে ঝুঁকিভারও বেশি। ঝুঁকিভার বেশি হলে মূলধনও বেশি হারে সংরক্ষণ করতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান নীতিমালা অনুযায়ী ১০০ টাকা ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ থাকলে ১০ শতাংশ হারে মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়। অর্থাৎ ১০০ কোটি টাকা ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ থাকলে ১০ কোটি টাকা মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়। মূলধন বেশি হারে সংরক্ষণের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর আর্থিক ভিত্তি শক্তিশালী করা হয়।
জানা গেছে, ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ নির্ধারণ নীতিমালা অনুযায়ী, সম্পূর্ণ নতুন কোনো অপ্রচলিত খাতে কোনো ব্যাংক ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করলে ঝুঁকিভার দেড় শ’ শতাংশ নির্ধারণ করা হতো। কারণ, বেশির ভাগ নতুন অপ্রচলিত খাত সফল হয় না। এ খাতে ব্যাংক ঋণ দিলে ঋণ ফেরত না পাওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। এ কারণে অপ্রচলিত নতুন কোনো খাতে ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে ঝুঁকিভার দেড় শ’ শতাংশ নির্ধারণ করা হতো। এতে ব্যাংকের আর্থিক ভিত্তি শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি ব্যাংকের সম্পদের গুণগতমানও বেড়ে যেত।
যেমন কোনো অপ্রচলিত খাতে কোনো ব্যাংক ১০০ কোটি টাকা ঋণ দিলে ঝুঁকিভার নির্ধারণ করা হতো দেড় শ’ কোটি টাকা। এ দেড় শ’ কোটি টাকার ১০ শতাংশ হিসেবে মূলধন সংরক্ষণ করা হতো ১৫ কোটি টাকা। বেশি ঝুঁকি ও বর্ধিত হারে মূলধন সংরক্ষণ করতে হয় বলে অপ্রচলিত কোনো নতুন খাতে বিনিয়োগ করার আগে অতি সতর্কতা অবলম্বন করতে ব্যাংকগুলো। গ্রাহককে ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করা হতো। যাচাই করা হতো প্রকল্পগুলোর সম্ভাব্যতা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ঋণ দেয়ার জন্য প্রায় এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫০ হাজার কোটি টাকা ঋণের সুদহার সরকার অর্ধেক ভর্তুকি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অর্থাৎ ১০০ টাকা ঋণের সুদ হবে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ।
এ ৯ শতাংশ সুদে অর্ধেক অর্থাৎ ৪ থেকে সাড়ে চার শতাংশ দেবে গ্রাহক। বাকি সাড়ে চার থেকে ৫ শতাংশ ব্যাংককে সরকার ভর্তুকি হিসেবে পরিশোধ করবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেও অনুরূপ পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করা হয়েছে। কিন্তু ব্যাংকগুলো কাক্সিক্ষত হারে ঋণ বিতরণ করছে না।
অপর দিকে অন্য খাতেও ঋণ বিতরণে বাংকগুলো আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এর ফলে বেসরকারি বিনিয়োগ তলানিতে নেমে গেছে। পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অক্টোবরের ডেটলাইন বেঁধে দেয়া হয়েছে ব্যাংকগুলোকে। একই সাথে বিকল্প বিনিয়োগে ব্যাংকগুলোকে আকৃষ্ট করতে নীতিমালায় ছাড় দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এক নির্দেশনায় বিকল্প বিনিয়োগের নীতিমালায় ছাড় দিয়ে বলা হয়েছে, অপ্রচলিত নতুন কোনো খাতে ঋণ দেয়া হলে ঝুঁকিভার দেড় শ’ শতাংশের পরিবর্তে ১০০ শতাংশ নির্ধারণ করতে হবে। অর্থাৎ কোনো অপ্রচলিত নতুন কোনো খাতে ১০০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করলে ঝুঁকিভার হবে ১০০ কোটি টাকা। এ ১০০ কোটি টাকা ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ হিসেবে ১০ কোটি টাকা মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে, আগে যা ছিল ১৫ কোটি টাকা।
এ নির্দেশনা আগামী ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বহাল থাকবে। ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এর ৪৫ ধারার ক্ষমতা বলে এ নির্দেশনা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সম্প্রতি ব্যাংকগুলোর জন্য জারি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নীতিমালায় ছাড় দেয়ায় ব্যাংকের ঋণের গুণগত মান ঝুঁকির মুখে পড়ে যাবে বলে ব্যাংকাররা আশঙ্কা করছেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা