২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
আধুনিক ফায়ার সার্ভিস নির্মাণ প্রকল্প

১৬ লাখ টাকার সিল স্ট্যাম্প প্রস্তাব নাকচ

- প্রতীকী ছবি

আধুনিক সুবিধাযুক্ত ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের সঙ্কটে তৈরী পোশাক শিল্প অধ্যুষিত অঞ্চলে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিগত কয়েক বছরেই দুর্ঘটনায় এই খাতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৪৬৭ কোটি টাকা। যেখানে ২৫৯টি অগ্নিদুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ১১৬ জন। শুধু ২০১৩ সালেই অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটে ১৫ হাজার ৮১৫টি। সরকার জরুরি ভিত্তিতে গার্মেন্ট শিল্প এলাকায় ১১টি আধুনিক ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের অনুমোদন দিলেও তার বাস্তবায়ন অগ্রগতি ঢিমেতালে। প্রকল্পে পাঁচ লাখ টাকার সিল ও স্ট্যাম্প কেনার প্রস্তাবনা থেকে তা বাড়িয়ে ১৬ লাখ টাকা করার প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশন নাকচ করে দিয়েছে। ব্যয়কে তিন লাখে নামিয়ে এনেছে। দুই বছরের প্রকল্প এক বছরে অগ্রগতি মাত্র ২০ শতাংশ। এখন ব্যয় বৃদ্ধিসহ মেয়াদ আরো এক বছর বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। পরিকল্পনা কমিশন এবং প্রকল্প সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গার্মেন্ট শিল্প অধ্যুষিত এলাকায় আধুনিক সুবিধাযুক্ত ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন নেই বললেই চলে। তাই এসব অঞ্চলে ৬২৯ কোটি ৭৩ লাখ ৫৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ১১টি আধুনিক সুবিধাযুক্ত ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন নিমাণ প্রকল্পটি ২০১৯ সালে একনেক অনুমোদন করে। কিন্তু চলতি বছরের জুন পর্যন্ত এক বছরে প্রকল্পের বাস্তবায়ন হার মাত্র ২০ শতাংশ। যেখানে অর্থ ব্যয় হয়েছে মাত্র ১০ শতাংশের কিছু বেশি।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের দেয়া তথ্যানুযায়ী, গত ২০০১ সালে সারা দেশে মোট ছয় হাজার ৫১টি অগ্নিদুর্ঘটনা সংঘটিত হয়, যা ২০১৩ সালে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১৫ হাজার ৮১৫টিতে। এর মধ্যে ২৫৯টি দুর্ঘটনা ঘটে শুধু গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানে। যার ফলে ১১৬ জনের প্রাণহানি ঘটে। অগ্নিদুর্ঘটনায় বহু মানুষ আহত ও নিহত হয়েছে। এই শিল্প এলাকার বাইরে বিদ্যমান ফায়ার সার্ভিস স্টেশন দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা গার্মেন্ট শিল্প এলাকার অগ্নিনির্বাপণ প্রায় অসম্ভব। এ ছাড়া বেশির ভাগ কারখানা বহুতল ভবনে অবস্থিত। শিল্পগুলোতে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাচ্ছে। উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলো হলো, ২০১০ সালে সাভারের আশুলিয়াতে হামিম গার্মেন্টস, ২০০৯ সালে ভোগরা গাজীপুরের গরীব অ্যান্ড গরীব কোম্পানি লিমিটেড, ২০১২ সালে আশুলিয়ার তাজরীন ফ্যাশন লিমিটেড, ২০১৩ সালে মিরপুরের মেসার্স টুং ঞাই সোয়েটার লিমিটেড এবং ২০১৩ সালে গাজীপুরে আসাদ কম্পোজিট এই অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এ ছাড়া কিছু পোশাক শিল্প ধসে পড়ার ফলে বিষয়টি আরো জটিল হয়ে পড়েছে। এখানে ২০০৪ সালে স্পেক্ট্রাম গার্মেন্টস, ২০০৬ সালে ফনিক্স গার্মেন্টস এবং ২০১৩ সালে সাভারে রানা প্লøাজা ধসের ঘটনা। এই দুর্ঘটনায় ১১ শ’র বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে। আড়াই হাজার শ্রমিক আহত হয়। উদ্ধারকাজ ২০ দিনে সমাপ্ত করা হয়।

অন্য দিকে, দেশের রফতানি বাণিজ্যের বেশির ভাগ অর্জিত হয় তৈরী পোশাক খাত থেকে। আর এ খাতে গত কয়েক বছরে অগ্নিকাণ্ডসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনার কারণে বিদেশী ক্রেতাদের কাছে জাতীয় ইমেজ বা ভাবমূর্তি সঙ্কটাপন্ন হয়েছে। বেশির ভাগ পোশাক শিল্প ঢাকার আশপাশে সাভার, আশুলিয়া, কোনাবাড়ি গাজীপুর চৌরাস্তা, সালনা চৌরাস্তা, নারায়ণগঞ্জের শিবু মার্কেট, কাঁচপুর ব্রিজ, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকাতে অবস্থিত। এসব এলাকায় খুব কমসংখ্যক ফায়ার স্টেশন আছে। বিদেশী ক্রেতারা অগ্নি নিরাপত্তাসহ সব দুর্ঘটনার বিরুদ্ধে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পূর্বশর্ত আরোপ করেছে। এই বিবেচনায় সরকার ঢাকা ও চট্টগ্রামে ১০টি আধুনিক সুবিধাযুক্ত ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের পরিকল্পনা নিয়েছে। এগুলো হলোÑ গাজীপুর চৌরাস্তা, রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা, কোনাবাড়ি, কাশিমপুর সারাবো, আশুলিয়ার জিরাবো, কাঁচপুর ব্রিজ, ফতুল্লা শিবু বাজার, চট্টগ্রামে কর্ণফুলী, খুলশী, মাতারবাড়ি ফায়ার স্টেশন। এখানে ১১টির জন্য জমি অধিগ্রহণ করতে হবে ৯ দশমিক ৪৮ একর। ছয়তলা ভিত্তির উপর তিনতলা স্টেশন, ১৯টি পানিবাহী গাড়ি কেনা, ২০টি টোয়িং ভেহিক্যাল, ১০টি অ্যাম্বুলেন্স, এ ছাড়া ফায়ার নির্বাপক বিভিন্ন যন্ত্রপাতি প্রয়োজন।

পরিকল্পনা কমিশন বলছে, বর্তমানে ৫০৫টি ফায়ার স্টেশন নির্মাণের একটি প্রকল্প চলমান আছে। ওই সব স্থান বাদ দিয়ে এই প্রকল্পে স্থান নির্ধারণ করতে হবে। এখানে পদ্মা ব্রিজ এলাকাতে একটি স্টেশন স্থাপনের জন্য পরামর্শ দেয়া হয়। পিইসি থেকে বলা হয়েছে, জমির মূল্য নিয়ে প্রকল্প প্রস্তাবনাতে তাদের চোখে গরমিল মনে হচ্ছে।

প্রকল্প পরিচালক মো: শহীদ আতাহার হোসেনের সাথে মুঠোফোনে প্রকল্পের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, প্রকল্পটি গণপূর্ত বাস্তবায়ন করছে। ভূমি অধিগ্রহণের জন্য কিছু ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য খাতে ব্যয় কমেছে। আর পিইসিতে যে প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল সেখানে কিছু কাটছাঁট করে পর্যালোচনার জন্য কমিটি করা হয়েছে।

১৬ লাখ টাকার সিল ও স্ট্যাম্প কেনার ব্যাপারে তিনি বলেন, এটা প্রথমে পাঁচ লাখ টাকা ছিল। পরে গণপূর্ত ১১টির জন্য এক লাখ টাকা করে আরো ১১ লাখ টাকা বাড়িয়ে ১৬ লাখ টাকার প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু পিইসি থেকে ভৌত বিভাগের সদস্য সেটি কমিয়ে তিন লাখ টাকা করেছেন।

প্রকল্পের অগ্রগতির ব্যাপারে পিডি বলেন, ১১টির মধ্যে সাতটির জমি পাওয়া হেছে। চারটির জমি প্রক্রিয়াধীন আছে। নির্ধারিত মেয়াদে হবে না। তাই গণপূর্ত থেকে এক বছর সময় চাওয়া হয়েছে। আশা করছি বর্ধিত সময়ের মধ্যে কাজটা শেষ হবে। এই স্টেশনগুলো পোশাক শিল্প এলাকার জন্য অনেক জরুরি।


আরো সংবাদ



premium cement