২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ঋণখেলাপি নীতির শিথিলতা বাড়ছে আরো ৩ মাস

বিনিয়োগ সক্ষমতা কমে যাচ্ছে ব্যাংকের
- নয়া দিগন্ত

ঋণখেলাপি নীতিমালা শিথিলতার সময়সীমা তিন মাস বাড়ানো হচ্ছে। অর্থাৎ আরো তিন মাস ঋণ পরিশোধ না করেও খেলাপি হওয়া থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন গ্রহীতারা। এর ফলে টানা এক বছর ঋণ পরিশোধ না করার সুযোগ মিলছে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে শিগগিরই সার্কুলার জারি করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন সিদ্ধান্ত ব্যাংকিং খাতের জন্য আত্মঘাতী হচ্ছে। কারণ, ব্যবসায়ীরা ঋণ পরিশোধ না করায় ব্যাংকের বিনিয়োগ সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। একই সাথে জানুয়ারি থেকে ব্যবসায়ীদের ওপর ঋণ পরিশোধের চাপ বেড়ে যাবে। সবমিলে ব্যাংকিং খাতে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

জানা গেছে, করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সুযোগ দেয়ার জন্য ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে শিথিলতা আরোপ করা হয়। তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এক নির্দেশনায় বলা হয়, ঋণ পরিশোধ না করলেও গ্রহীতাদেরকে খেলাপি করা যাবে না। এ সুযোগ দেয়া হয় গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত। অর্থাৎ ডিসেম্বরে যে পরিমাণ খেলাপি ছিল তা আর বাড়ানো যাবে না। পরবর্তী সময়ে ব্যবসায়ীদের পরামর্শে আরো তিন মাস বাড়িয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর করা হয়। অর্থাৎ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঋণ পরিশোধের ব্যাপারে শিথিলতার সুযোগ দেয়া হয়।

বেসরকারি খাতের কয়েকটি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী গতকাল বুধবার নয়া দিগন্তকে জানান, প্রায় সব খাতই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত বলা চলে একটানা ব্যবসা-বাণিজ্যসহ ব্যাংক লেনদেন সীমিত হয়ে পড়ে। এর পরেও ওষুধ কোম্পানিগুলোর ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো হয়েছে। একই সাথে আইটি খাতের ব্যবসাও সচল ছিল। মে মাসের পর থেকে ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়ীদের ব্যবসাও ভালো চলছে। এখন তো প্রায় সবকিছু স্বাভাবিক। কিন্তু গত জুনের পর ঢালাওভাবে ঋণ পরিশোধে শিথিলতা তিন মাস বাড়ানো হয়। অথচ ওষুধ, আইটি, ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়ীদের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা আগের চেয়েও ভালো ছিল।

এসব সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে ব্যাংকারদের সাথে আলাপ করে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। শুধু ব্যবসায়ীদের অনুরোধ রাখা হয়। এখন সবকিছু স্বাভাবিক হওয়ার পরেও ঋণ পরিশোধের শিথিলতা আবারো বাড়ানো হবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। কারণ ব্যাংকগুলোর প্রধান কাজ হলো গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করে তা ঋণ গ্রহীতাদের মধ্যে ডিবতরণ করা। গ্রাহক ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করলে আবার তা নতুন উদ্যোক্তাদের মধ্যে ঋণ বিতরণ করা হয়। এভাবেই নতুন নতুন শিল্পকারখানা গড়ে ওঠে। বেড়ে যায় কর্মসংস্থান। এতে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়ে যায়।

এভাবেই ব্যাংকের বিনিয়োগ জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। কিন্তু সেপ্টেম্বর ধরলে ৯ মাস যাবৎ ব্যবসায়ীরা ঋণ পরিশোধ করছেন না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সুযোগ দেয়ায় যারা ঋণ পরিশোধ করতে সক্ষম ছিলেন তারাও পরিশোধ করছেন না। এতে গ্রাহকের ঋণ কমছে না বরং সুদে আসলে তা বেড়ে যাচ্ছে। আবারো তিন মাস সময় দেয়া হলে টানা এক বছর ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ হচ্ছে না। জানুয়ারিতে ব্যবসায়ীরা কয়টা কিস্তি পরিশোধ করবেন। কারণ, ইতোমধ্যে তাদের সব ঋণই পরিশোধ না হওয়ায় অনাদায়ী হয়ে পড়েছে। জানুয়ারিতে ওই মাসসহ ১০ থেকে ১২টি ঋণের কিস্তি এক সাথে পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু বেশির ভাগ ব্যবসায়ীই তা পারবেন না। এতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ হঠাৎ করেই কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। এতে শুধু ব্যাংকিং খাতেই বিপর্যয় নেমে আসবে না, পুরো অর্থনীতিতেই নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, দীর্ঘ দিন ধরে ঋণের কিস্তি আদায় না হওয়ায় ব্যাংকের বিনিয়োগ সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। নতুন করে ঋণ বিতরণ করা যাচ্ছে না। এক দিকে ব্যাংকের আয়ে বড় ধরনের প্রভাব পড়ছে, সেই সাথে গ্রাহকদের আমানত ফেরত দেয়ারও সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে নতুন করে সময় বাড়ানো হবে ব্যাংকিং খাতের জন্য আত্মঘাতী। কয়েকজন শীর্ষ নির্বাহী জানান, সময় বাড়ানোর আগে অবশ্যই ব্যাংকারদের মতামত নেয়া উচিত। কারণ, ব্যাংকাররা জানেন, প্রকৃতপক্ষে কারা ক্ষতিগ্রস্ত। কাদের ঋণ ফেরত দেয়ার সক্ষমতা রয়েছে। দেশের ব্যাংকিং খাত ও অর্থনীতির স্বার্থে ঢালাওভাবে ব্যবসায়ীদের সুযোগ দেয়া ঠিক হবে না।

এ দিকে গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, করোনার প্রাদুর্ভাব এখনো শেষ হয়নি। এ কারণে বেশির ভাগ ব্যবসায়ীরই ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা এখনো নেই। অনেকেই ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যেতে পারছেন না। এমনি পরিস্থিতিতে ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়লে ব্যবসায়ীরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন না। সবকিছু বিবেচনা করেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক সময় বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছে। এ বিষয়ে শিগগিরই ব্যাংকগুলোর জন্য সার্কুলার জারি করা হবে বলে ওই সূত্র জানায়।


আরো সংবাদ



premium cement