২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

জামানতবিহীন ঋণে আগ্রহ হারাচ্ছে ব্যাংক

মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা
-

জামানতবিহীন ঋণে আগ্রহ হারাচ্ছে ব্যাংক। করোনায় মানুষের আয় কমে যাওয়ায় ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না ব্যক্তি পর্যায়ে ঋণগ্রহীতারা। ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলো ভোক্তাঋণসহ জামানতবিহীন ঋণ আর আগের মতো ছাড় করছে না। এতে ব্যাংকের আয়ে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকাররা।

তারা বলেন, ব্যাংকের আয়ে বড় ধরনের অবদান রাখত ব্যক্তি পর্যায়ের ভোক্তাঋণ, ক্রেডিট কার্ডের ঋণসহ জামানতবিহীন ঋণ। এসব ঋণে ঝুঁকিও বেশি। আর ঝুঁকি বেশি হওয়ায় এসব ঋণ গ্রহীতাকে বাড়তি সুদ বা মুনাফা পরিশোধ করতে হয়। এ কারণেই বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় ক্রেডিট কার্ডের ঋণ সিঙ্গেল ডিজিট অর্থাৎ ৯ শতাংশের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে। অর্থাৎ ভোক্তা ঋণ বাদে সব ধরনের ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।

ব্যাংকগুলো থেকে প্রাপ্ত পরিসংখ্যান মতে, ক্রেডিট কার্ডে ঋণের সুদহার এখনো ২০ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, ব্যাংকের যে সেবার সুদহার সবচেয়ে বেশি তা থেকে ৫ শতাংশ বেশি নির্ধারণ করতে হবে ক্রেডিট কার্ডের সুদহার। ব্যাংকগুলো ক্রেডিট কার্ডের সুদহার বেশি নির্ধারণ করতে অপ্রচলিত একটি সেবার সুদহার ২০ শতাংশ নির্ধারণ করে। এ থেকে ৫ শতাংশ বাড়তি অর্থাৎ ২৫ শতাংশ হারে ক্রেডিট কার্ডের সুদহার নির্ধারণ করা হয়। এভাবেই ক্রেডিট কার্ডের বাড়তি সুদহার আদায় করা হয়। তেমনিভাবে ভোক্তাঋণ, কারঋণসহ অন্যান্য ভোক্তা ঋণে সুদহার বাড়তি নির্ধারণ করা হয়।

ব্যাংকাররা জানান, এসব ঋণে তেমন কোনো জামানত নেয়া হয় না। যেমন, কেউ কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করলে তার বেতনের বিপরীতে এ ঋণ দেয়া হয়। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে শুধু বেতনের তথ্যাদি জমা দিতে হতো। এর ওপর ভিত্তি করে ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা বিবেচনায় নেয়া হতো সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের। কিন্তু গত মার্চ থেকে করোনায় সব হিসাব এলোমেলো হয়ে পড়ে। ৫ মাস যাবৎ করোনার কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন। অনেক প্রতিষ্ঠানে বেতনভাতা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে যারা নিয়মিত বেতনভাতা পেয়ে সংসারের প্রয়োজন মিটিয়ে বাড়তি অর্থে ব্যাংকের ঋণ নিয়মিত পরিশোধ করতেন তারা পড়ে যান বিপাকে। বেতনভাতা না পেয়ে সংসারের প্রয়োজন মেটাতে পারছেন না অনেকেই। আবার কেউ কেউ বাড়িভাড়া পরিশোধ না করে রাজধানী ঢাকা ছেড়ে গ্রামে পাড়ি জমিয়েছেন। এর ফলে ইতোমধ্যে যেসব জামানতবিহীন ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল ওই সব ঋণ ঝুঁকির মুখে পড়ে গেছে। বেশির ভাগ জামানতবিহীন ঋণই এখন আদায় হচ্ছে না। এতে এক দিকে ব্যাংকের আয় যেমন কমে গেছে, তেমনি এসব ঋণ খেলাপি হয়ে যাচ্ছে।

এমনই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে লাভবান খাত ভোক্তা ঋণ দিতে অনেকটা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন ব্যাংকাররা। বুধবার বেসরকারি একটি ব্যাংকের এমডি জানিয়েছেন, এ মুহূর্তে ব্যাংকগুলো ঋণ দিয়ে ঝুঁকির মাত্রা বাড়াতে চাচ্ছে না। এক সময় ভোক্তা ঋণের প্রতি বেশি ঝোঁক ছিল ব্যাংকের। করোনার কারণে সব হিসাব পাল্টে গেছে। এখন জামানতবিহীন ঋণ দিয়ে কেউ ঝুঁকির মাত্রা বাড়াতে চাচ্ছে না। অনেকটা নিরাপদ বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকে পড়ছে ব্যাংকগুলো।

এ মুহূর্তে নিরাপদ বিনিয়োগ খাত কোনটি এমন প্রশ্নের জবাবে ওই এমডি জানান, প্রণোদনা প্যাকেজ অনুযায়ী ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে না। কারণ এই মুহূর্তে ঋণ নিয়ে কোনা প্রজেক্টই লাভবান হবে না। এ কারণে যারা নেবেন তারা ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন না। তাই ব্যাংকগুলো সরকারের ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ করতে বেশি আগ্রহী হয়ে পড়েছে। এতে বছর শেষে বেশির ভাগ ব্যাংকেরই আয় কমে যাবে। তবে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে এবং মানুষের আয় বাড়লে আবার বেসরকারি খাতে ঋণ দিতে উৎসাহী হবে ব্যাংকগুলো।


আরো সংবাদ



premium cement