২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অবহেলিত রফতানিমুখী সহযোগী শিল্প

করোনার ধকল কাটাতে না পেরে কারখানা বন্ধ করে দিচ্ছেন অনেকেই
৮০ দশকে দেশে তৈরী পোশাক রফতানির জন্য কার্টন ও লেবেল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হতো। - ছবি : সংগৃহীত

সব ধরনের সুযোগ সুবিধা থেকে অবহেলিত দেশের রফতানিমুখী সহযোগী শিল্প। দেশের তৈরী পোশাক রফতানির জন্য অপরিহার্য পণ্য কার্টন ও লেবেল আমদানির বিপরীতে যে সময় কোটি কোটি ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হতো। এখন দেশেই এ সহযোগী শিল্প গড়ে ওঠায় প্রতি বছর বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে। কিন্তু তৈরী পোশাকের সহযোগী হলেও তৈরী পোশাক খাতের মতো কোনো সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে না। না পাচ্ছে রেয়াতি সুদে পণ্য আমদানির সুযোগ, না পাচ্ছে ২ শতাংশ প্রণোদনা। আবার করোনাকালীন ক্ষতিগ্রস্ত তৈরী পোশাক খাতের শ্রমিকদের বেতনভাতা প্রদানে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিল থেকেও বঞ্চিত হয়েছে এ সহযোগী খাত। শ্রমঘন এ সহযোগী শিল্পে লাখ লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হলেও সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় করোনাকালীন সময়ে ক্ষতির ধকল কাটাতে না পেরে অনেকেই কারখানা বন্ধ করে দিচ্ছেন। এতে বেকার হওয়ার আশঙ্কা করছেন হাজার হাজার শ্রমিক কর্মচারী।

জানা গেছে, ৮০ দশকে দেশে তৈরী পোশাক রফতানির জন্য কার্টন ও লেবেল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হতো। এক সময় কোরিয়ার একক বাজার ছিল। এতে ১০০ ডলারের তৈরী পোশাক রফতানিতে একটি উল্লেখযোগ্য অংশ কার্টন ও লেবেল আমদানির পেছনে ব্যয় হতো। এভাবে প্রতি বছর কোটি কোটি ডলার ব্যয় হতো তৈরী পোশাকের এ অপরিহার্য দুটি পণ্য আমদানিতে। কিন্তু ৯০ দশকের পর দেশেই কার্টন ও লেবেল শিল্পের প্রসার হতে থাকে। বর্তমানে স্বাবলম্বী এ শিল্প। অর্থাৎ তৈরী পোশাকের এ অপরিহার্য পণ্য আর বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় না। দেশেই শত শত কারখানা গড়ে উঠেছে। জানা গেছে, তৈরী পোশাক রফতানিতে এ দুটি পণ্য উৎপাদনের জন্য দেশে গড়ে উঠেছে প্রায় ২ হাজার শিল্প-কারখানা। আর এর সাথে প্রায় ৮ লাখ শ্রমিক কর্মচারী জড়িত রয়েছেন।

কিন্তু তৈরী পোশাকের মতো এ দু’টি খাতে সরকারি তেমন পৃষ্ঠপোষকতা নেই। যেমন, তৈরী পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা ব্যাক টু ব্যাক এলসির মাধ্যমে রেয়াতি সুদে পণ্য আমদানি করতে পারেন। কিন্তু কার্টন ও লেবেল আমদানির জন্য ব্যাক টু ব্যাক সুবিধা নেই। তারা উচ্চ সুদেই এলসির মাধ্যমে পণ্য আমদানি করে থাকেন। আবার তৈরী পোশাক খাতের জন্য ২ শতাংশ প্রণোদনা সুবিধা রয়েছে। কিন্তু তৈরী পোশাক রফতানির জন্য এ সহযোগী শিল্পের ২ শতাংশ প্রণোদনা সুবিধা নেই। আবার করোনাকালীন ক্ষতিগ্রস্ত তৈরী পোশাক খাতের শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদানের জন্য ২ শতাংশ সুদে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিল গঠন করা হয়েছে। এ তহবিলের আওতায়ও এ দুটি সহযোগী শিল্প নেই। ফলে বরাবরই এ দুটি খাত অবহেলিত রয়েছে বলে উদ্যোক্তারা মনে করছেন। কিন্তু করোনার ক্ষতির ধকল এখন বেশির ভাগ উদ্যোক্তাই কাটাতে পারছেন না। এ কারণে অনেকেই কারখানা বন্ধ করে দিচ্ছেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ গ্যার্মেন্টস প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএপিএমইএ) প্রেসিডেন্ট আব্দুল কাদের খান রোববার নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, কার্টন, প্যাকেজিং ও লেবেল না হলে তৈরী পোশাক রফতানি কল্পনাই করা যায় না। আবার তৈরী পোশাকের শ্রমিকদের যে হারে বেতনভাতা দেয়া হয় সহযোগী এ দুটি শিল্প শ্রমিকদেরও সেই হারে বেতনভাতা দেয়া হয়। বিদ্যুৎ, গ্যাসবিলসহ অন্যান্য ইউটিলিটি বিল সমহারে বাড়ে। করোনানাভাইরাসের প্রভাবে তৈরী পোশাক যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমরাও সেইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। কিন্তু তাদের বিশেষ প্রণোদনার প্যাকেজে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এ বিষয়ে আমরা আবেদনও করেছিলাম।

তিনি বলেন, দেশে প্রায় ১ হাজার ৭০০ প্যাকেজিং ফ্যাক্টরি ছিল। বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৬ শ’ কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে চালু রয়েছে এক হাজার ৫০টি। এগুলোও বর্তমান পরিস্থিতিতে কত দিন ধরে রাখা যাবে তা বলা মুশকিল।

তিনি জানান, মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে মে মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত আমরা ৪৫ দিন কারখানা বন্ধ রেখেছিলাম। কিন্তু এর পরেও আমরা শ্রমিকদের বেতনভাতা দিয়েছিলাম। দিয়েছিলাম ঈদের পূর্ণ বোনাস। কিন্তু এখন আর পারা যাচ্ছে না। ব্যাংকের হাতে পায়ে ধরে কোনো রকম ঋণ নবায়ন করা হচ্ছে। কিন্তু এটাও বেশি দিন চালানো যাবে না। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের আওতায় এ দুটি খাত অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা তহবিলে অন্তর্ভুক্ত হলেও ব্যাংক থেকে তেমন কোনো সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যাংক থেকে বলা হচ্ছে জামানত দিতে। কিন্তু তারাতো আগেই জামানত দিয়ে ঋণ নিয়েছিলেন। কিন্তু এখন তারা নতুন করে জামানত দেবে কিভাবে। ফলে এ প্রণোদনা তহবিল থেকেও কোনো সুযোগ সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে আলাদা কোনো পৃষ্ঠপোষকতা না পাওয়া গেলে সামনে এ দুটি খাতের বেশির ভাগ কারখানাই বন্ধ হয়ে যাবে। বেকার হয়ে যাবে লাখ লাখ কর্মক্ষম ব্যক্তি। আর এ শিল্প বন্ধ হয়ে গেলে আবারো গার্মেন্টস সহযোগী পণ্যের জন্য দেশ আমদানিনির্ভরশীল হয়ে পড়বে।

পরিস্থিতি উন্নতির জন্য তৈরী পোশাকের মতো আলাদা কোনো তহবিল গঠন করার তাগিদ দেন তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement