১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

গার্মেন্টসে অর্ডার ফিরছে, শ্রমিকদের চাকরি কি ফিরবে?

গার্মেন্টসে অর্ডার ফিরছে, শ্রমিকদের চাকরি কি ফিরবে? - ছবি : সংগৃহীত

দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাত তৈরী পোশাক শিল্পে স্থবিরতা কাটতে শুরু করেছে। স্থগিত হওয়া রপ্তানি আদেশগুলো নতুন করে চালু করছেন ক্রেতারা। ইতোমধ্যে প্রায় ৮০ ভাগ অর্ডার ফিরেছে বলে জানা গেছে।

বিজিএমইএ সূত্র জানিয়েছে, এরই মধ্যে বাতিল হওয়া রপ্তানি আদেশের ৮০ শতাংশই ফিরেছে। কারখানা মালিকদের এই সংগঠনের সভাপতি ড. রুবানা হকও সম্প্রতি স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন। বিজিএমইএর পক্ষ থেকে ক্রেতাদের সাথে আলোচনা ও মধ্যস্থতা করা হচ্ছে। অবশ্য ক্রয়াদেশ ফিরলেও বায়াররা অর্থ পরিশোধের ক্ষেত্রে শর্ত জুড়ে দিচ্ছেন বলে জানা গেছে। অনেক ক্ষেত্রেই ছয় মাস কিংবা এক বছরের মতো লম্বা সময় নিচ্ছেন তারা। আবার কেউ কেউ দামে ছাড় দিতে বাধ্য করছেন। বিজিএমইএ'র সহ-সভাপতি মশিউল আজম সজল বলেন, ‘আমরা এখনো বলতে পারছি না যে আসলে পরিস্থিতি কোনো দিকে যাচ্ছে৷ তবে কিছুটা ইতিবাচক হলো আমাদের কাছে যে কাপড়গুলো রেডি ছিলো সেগুলো এখন তারা নিচ্ছে৷ খুব যে বেশি নতুন অর্ডার আসছে তা নয়৷ ফলে সামনের সময়ে অর্ডার কেমন আসে সেটা দেখতে হবে।’

বৈশ্বিক মহামারী পরিস্থিতিতে চুক্তির শর্ত দেখিয়ে চলতি বছর একের পর এক রপ্তানি আদেশ স্থগিত করে ক্রেতারা। বিজিএমইএর হিসাবে, তিন শতাধিক ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩১৫ কোটি ডলারের (প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকা) রপ্তানি আদেশ স্থগিত হয়েছিল। পরিস্থিতি সামাল দিতে রপ্তানিকারকদের পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দেয় সরকার। তারপরও বহু প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। চাকরি হারিয়েছেন অনেক শ্রমিক।

মশিউল আজম সজলের মতে, করোনা মহামারীতে ৩৪টি বড় ও মাঝারি গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। তবে কত সংখ্যক শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন তার সুনির্দিষ্ট কোনো হিসাব দিতে পারেননি তিনি।

গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের হিসাব অনুযায়ী করোনার পরিস্থিতে ১ লাখ ১০ হাজার শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন। বহু শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করেননি মালিকরা। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ে কেউ কেউ পাওনা পেলেও অনেককেই পাওনার জন্য লড়ে যেতে হচ্ছে। তবে শুধু যে চাকরি হারিয়েছে, বিষয়টা এমন নয়। আবার নতুন চাকরিও পেয়েছেন অনেকে। আসলে মালিকরা দীর্ঘদিনের পুরাতন শ্রমিককে বাদ দিয়ে নতুন শ্রমিক নিচ্ছেন। কারণ একজন শ্রমিক দীর্ঘদিন এক প্রতিষ্ঠানে থাকলে তার বেতন বেড়ে যায়। আর নতুন শ্রমিক নিলে তার বেতনও কম, পাওনাও থাকে না। করোনা পরিস্থিতিতে এই সুযোগটাই নিয়েছেন গার্মেন্টস মালিকরা। তবে দক্ষ ও অভিজ্ঞ ওই শ্রমিকরা অন্য কোথাও কম বেতনে হলেও চাকরি পেয়ে গেছেন। ফলে খুব বেশি শ্রমিক এখন বেকার নেই। তারপরও ২৫-৩০ হাজার শ্রমিক এখনো বেকার।’

গার্মেন্টস শ্রমিক নেত্রীর এই বক্তব্যের সাথে একমত নন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই'র সহ-সভাপতি ও বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ শ্রমিক বেতন বেশি পেলেও তার প্রোডাকশনও বেশি। অভিজ্ঞ শ্রমিক ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। আর ৪০ লাখ শ্রমিক যে সেক্টরে কাজ করে সেখানে ১৫-২০ হাজার শ্রমিক বেকার থাকা এমন বড় বিষয় না। বড় কথা হলো, প্রতিষ্ঠান না বাঁচলে কিভাবে শ্রমিক বাঁচবে? এখন ৬০-৭০ ভাগ অর্ডার দিয়ে কতদিন শতভাগ শ্রমিকের বেতন দেওয়া যাবে? তাছাড়া এই সময়ে সামনের গ্রীষ্মের ক্রয়াদেশ নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা। কিন্তু সেই আলোচনা তেমন হচ্ছে না। এটি আমাদের জন্য অবশ্যই উদ্বেগের।’

বাংলাদেশ থেকে একক ব্র্যান্ড হিসেবে সবচেয়ে বেশি পোশাক পণ্য ক্রয় করে সুইডেনভিত্তিক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এইচএন্ডএম। প্রতিষ্ঠানটির বাংলাদেশ অফিসের প্রধান জিয়াউর রহমান জানিয়েছেন, করোনার কারণে তারা কোনো ক্রয়াদেশ বাতিল করেননি। শুধু তাই নয়, কারো পাওনা পরিশোধেও দেরি করেনি। গত দেড় মাসে তারা নতুন করে প্রায় ৪৫ কোটি ডলারের রপ্তানি আদেশ দিয়েছে। এখন পরবর্তী গ্রীষ্মের জন্য অর্ডারের প্রস্তুতি চলছে।

সদ্য সমাপ্ত ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি কমেছে ৬৮৬ কোটি ডলার (প্রায় ৫৮ হাজার কোটি টাকা)। স্বাধীনতার পর আর কখনও রপ্তানিতে এত বড় ধস নামেনি।

সূত্র : ডয়চে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement