২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

১০ হাজার কোটি টাকা মূলধন ঘাটতির মুখে সোনালী ব্যাংক

১০ হাজার কোটি টাকা মূলধন ঘাটতির মুখে সোনালী ব্যাংক - ছবি : নয়া দিগন্ত

চরম মূলধন ঘাটতির মুখোমুখি সোনালী ব্যাংক। চলতি বছরে রাষ্ট্রীয় খাতের বৃহত্তম এই ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ১০ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছবে। শুধু তাই নয়, চলতি বছর ব্যাংকের মুনাফা গত বছরের তুলনায় ৮০০ কোটি টাকা হ্রাস পাবে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সরকারের কাছে দ্রুত আর্থিক সহায়তা কামনা করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। বলা হয়েছে, মূলধন ঘাটতি পূরণের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার সরকারি গ্যারান্টি অথবা পারপেচ্যুয়াল বন্ড ইস্যু না করলে ব্যাংকটির অবস্থা আরো খারাপের দিকে যাবে। সম্প্রতি সোনালী ব্যাংকের সিইও ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ৪ পাতার একটি পত্র দিয়ে এসব কথা জানিয়েছেন। 

চিঠিতে ব্যাংকের নানা দিক তুলে ধরে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি থেকে ‘ব্যাসেল-৩’ বাস্তবায়নের কাজ পুরোপুরি শুরু হয়েছে। কিন্তু ব্যাসেল-৩ এর কঠোর মূলধন হতে ‘ডিফারড ট্যাক্স অ্যাসেটস (ডিটিএ), রিভেল্যুয়েশন রিজার্ভ, প্রভিশন ঘাটতি ইত্যাদি কর্তন, ব্যাংকের আশানুরূপ নিট মুনাফা অর্জিত না হওয়া সর্বোপরি ২০০৭ সালে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরকালীন পুঞ্জীভূত ক্ষতি (লোকসান) ৬ হাজার ৫৭৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা ‘গুডউইল’ রূপান্তর করে গত ১০ বছরে মুনাফার বিপরীতে সমন্বয় প্রভৃতি কারণে এ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পায়। এরপরও ব্যবসায়িক অবস্থার উন্নয়ন, লোকসানি শাখার সংখ্যা কমিয়ে আনা, শ্রেণীকৃত ঋণ হতে আর্থিক আদায় বাড়ানোর মাধ্যমে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনা, মুনাফা বৃদ্ধির মাধ্যমে মূলধন ভিত শক্তিশালী করার মাধ্যমে সোনালী ব্যাংক সব বাণিজ্যিক ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মধ্যে ২০১৮ সালে সর্Ÿোচ্চ দুই হাজার ২৬ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হয়। নিরীক্ষিত হিসাব অনুযায়ী ২০১৯ সালেও প্রায় অনুরূপ মুনাফা প্রত্যাশা করছে। পরিচালন মুনাফা বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখার পরও ‘ব্যাসেল-৩’ কঠোর নিয়মের কারণে বিভিন্ন সমন্বয় ও শ্রেণীকৃত ঋণের আধিক্য এবং প্রভিশন ঘাটতিজনিত কারণে নিট মুনাফা অর্জনের মাধ্যমে ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

কোভিড-১৯-এর (করোনাভাইরাস) প্রভাব সোনালী ব্যাংকের ওপর সর্বাধিক পড়বে উল্লেখ করে ব্যাংকটির এমডি জানিয়েছেন, এর ফলে প্রাথমিক হিসাবে চলতি ২০২০ সালে ব্যাংকের পরিচালনগত মুনাফা গত বছরের তুলনায় ৮০০ কোটি টাকা কম হবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। যা ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির ওপর আরো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে সোনালী ব্যাংকে আরো বেশি হারে মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে বলে ব্যাংকের পক্ষ থেকে উদাহরণ দিয়ে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে ব্যাসেল-৩ সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হলে ব্যাংকগুলোকে ‘ক্যাপিটাল কনসারভেশন বাফার’ বাবদ আড়াই শতাংশসহ ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে ১২.৫০ শতাংশ হারে মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে। তা ছাড়া সোনালী ব্যাংকে ‘ডমেস্টিক সিস্টেমেক্যালি ইমপোর্টেন্ট ব্যাংক’ (ডিএসসিআইবি) হিসেবে ২.৫০ শতাংশ, ‘কাউন্টারসিলিক্যাল ক্যাপিটাল বাফার’ (সিসিবি) বাবদ ২.৫০ শতাংশ হিসেবে আরো ৫ শতাংশ সহ সর্বমোট ১৭.৫০ শতাংশ হারে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে। এ প্রেক্ষিতে ব্যাংকের বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় নেয়া হলে ২০২০ সালে সোনালী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে আনুমানিক ১০ হাজার কোটি টাকা। নিট মুনাফা দ্বারা এই বিপুল পরিমাণ মূলধন ঘাটতি পূরণ স্বল্প মেয়াদে অসম্ভব। নিট মুনাফা অর্জন দ্বারা ব্যাসেল-৩ মোতাবেক মূলধন ঘাটতি পূরণে ব্যাংকের দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হবে, যা ব্যাসেল-৩ ডেডলাইন পরিপালনে বড় অন্তরায় বলে মনে করছে ব্যাংকটি।

এই বিশাল অঙ্কের মূলধন ঘাটতি পূরণে সোনালী ব্যাংকের পক্ষ থেকে তিনটি প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এক, সরকার কর্তৃক নগদ অর্থ সরবরাহের বিপরীতে সরকারের অনুকূলে শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ঘাটতি পূরণ। দুই, মূলধন ঘাটতি পূরণে সরকার কর্তৃক এ ব্যাংকের অনুকূলে ১০ হাজার কোটি টাকার সরকারি গ্যারান্টি পত্র ইস্যু করা এবং বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক তাকে মূলধন হিসেবে স্বীকৃতিদানের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা এবং তিন, সরকার কর্তৃক এ ব্যাংকের অনুকূলে নামমাত্র কুপন হারে ১০ হাজার কোটি টাকার সরকারি পারপেচ্যুয়েল বন্ড ইস্যু করা। 
সোনালী ব্যাংকের এ প্রস্তাবের বিষয়ে জানতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এ প্রস্তাবের বিষয়গুলো অর্থমন্ত্রী দেশে ফিরলে তার নজরে আনা হবে। উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্ত ছাড়া এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।


আরো সংবাদ



premium cement