২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিদেশী বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিয়ে পুনরায় বিনিয়োগের সুযোগ

বিদেশী বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিয়ে পুনরায় বিনিয়োগের সুযোগ - ছবি : সংগৃহীত

বিদেশী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তাদের প্রাপ্ত লভ্যাংশ দিয়ে পুনঃবিনিয়োগ করতে পারবেন। এ জন্য প্রাপ্ত লভ্যাংশ তাদের বৈদেশিক মুদ্রা (এফসি) অ্যাকাউন্টে রাখার সুযোগ দেয়া হয়েছে। বিদ্যমান নীতিমালা শিথিল করে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগের সুযোগ বাড়াল বাংলাদেশ ব্যাংক। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, এতে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বর্ধিত হারে বিনিয়োগে উৎসাহিত হবেন। পাশাপাশি বাড়বে বৈদেশিক বিনিয়োগও।

জানা গেছে, বিদেশী বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজার, বিভিন্ন ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করে বছর শেষে লভ্যাংশ পেয়ে থাকেন। বিদ্যমান নীতিমালায় প্রাপ্ত লভ্যাংশ দেশে ফেরত নিতে হতো। মুনাফার অর্থ তাদের বৈদেশিক মুদ্রা অ্যাকাউন্টে রাখতে পারতেন না। এমনকি বাংলাদেশের যেকোনো উৎস থেকে প্রাপ্ত অর্থও এফসি অ্যাকাউন্টে রাখতে পারতেন না। কেউ পুনঃবিনিয়োগ করতে চাইলে নিজ দেশ থেকে আবার বৈদেশিক মুদ্রা আনতে হতো। এতে এক দিকে লভ্যাংশ দেশে পাঠানো এবং আবার ফিরিয়ে আনা এ উভয়ক্ষেত্রে অর্থ ব্যয় হতো। অপর দিকে বিদ্যমান নীতিমালা পুনঃবিনিয়োগের সুনির্দিষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা ছিল না। 

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে প্রায় সব দেশেই বিনিয়োগ কমে গেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সম্প্রতি সরকারের উচ্চ মহল থেকে বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। বিদ্যমান নীতিমালায় বিদেশী বিনিয়োগের কোনো প্রতিবন্ধকতা বা অস্পষ্টতা থাকলে তা দূর করার পরামর্শ দেয়া হয় বাংলাদেশ ব্যাংককে। সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের পরামর্শেই বৈদেশিক মুদ্রানীতিমালায় একের পর এক পরিবর্তন আনা হচ্ছে।

গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ বিষয়ে নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বিদেশী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান লভ্যাংশসহ যেকোনো উৎস থেকে প্রাপ্ত অর্থ তাদের এফসি অ্যাকাউন্টে রাখতে পারবে। আর এ প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে তাদের বিদ্যমান প্রতিষ্ঠান বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে পুনঃবিনিয়োগ করতে পারবে। আগে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা ছিল না। এতে বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত অর্থ সরাসরি বিনিয়োগ করা যেত না। নতুন নির্দেশনার ফলে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য বাড়তি বিনিয়োগের সুযোগ আরো বেড়ে গেল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা এ বিষয়ে উদাহরণ দিয়ে জানান, যেমনÑ টেলিনর গ্রামীণফোন থেকে বছর শেষে যে লভ্যাংশ পেতো বিদ্যমান নীতিমালায় ওই লভ্যাংশ প্রথমে তাদের নিজ দেশ নরওয়ে নিয়ে যেতে হতো। নতুন করে গ্রামীণফোন বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করতে চাইলে তা আবার নরওয়ে থেকে নিয়ে আসতে হতো। এতে একবার প্রাপ্ত লভ্যাংশ দেশে ফিরিয়ে নেয়া ও আরেকবার দেশ থেকে নিয়ে আসা এ উভয় ক্ষেত্রে এক দিকে যেমন তাদের অর্থ ব্যয় হতো, অপর দিকে তাদের সময়ক্ষেপণ হতো। এখন নীতিমালা শিথিল করায় ইচ্ছে করলে টেলিনর বছর শেষে যে মুনাফা পাবে তা দিয়ে গ্রামীণফোনে পুনঃবিনিয়োগ করতে পারবে, ইচ্ছে করলে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে নতুন বিনিয়োগ করতে পারবে। আবার ইচ্ছে করলে বছরের যেকোনো সময় এফসি অ্যাকাউন্টে থাকা বৈদেশিক মুদ্রা নিজ দেশে ফেরতও নিতে পারবে।

প্রসঙ্গত, এর আগে বিদেশী বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে বিনিয়োগকারীদের অর্থ দেশে ফেরত নিতে অবারিত সুযোগ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। গত মাসে এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জারিকৃত এক সার্কুলারে বলা হয় কোনো বিদেশী বিনিয়োগকারী তার নিট মূলধন দেশে ফিরিয়ে নিতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে না। এমনকি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি না হলেও তারাও মার্চেন্ট ব্যাংক বা কোনো চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট দ্বারা হিসাবায়ন করে নিট সম্পদ দেশে ফিরিয়ে নিতে পারবেন। স্থায়ী সম্পদের মূল্য অতিমূল্যায়িত করে বেশি অর্থ যেন দেশে নিয়ে যেতে না পারে সে জন্য আগে এসব ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদনের প্রয়োজন হতো। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন সুযোগ দেয়ায় কোনো বিদেশী কোম্পানি শেয়ারপ্রতি মূল্য অতিমূল্যায়িত করে বেশি অর্থ দেশে ফিরিয়ে নিলে যাচাই বাছাই করার সুযোগ থাকল না কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট আরেক সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদ্যমান বৈদেশিক বিনিয়োগ নীতিমালা আন্তর্জাতিক মানের। এতে দেশ থেকে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা অনৈতিকভাবে অর্থ নিজ দেশে নিতে পারে সে জন্য নানা সুরক্ষা ছিল। কিন্তু যেভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগনীতিমালা শিথিল করা হচ্ছে এতে ওই সুরক্ষাগুলো আর থাকছে না। ফলে বেড়ে যাচ্ছে নানা ঝুঁকি। এ কারণে নীতিমালাগুলো শিথিল করার ক্ষেত্রে আরো গভীরভাবে পর্যালোচনা করা উচিত বলে ওই সূত্র মনে করে।


আরো সংবাদ



premium cement