২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

৫ খাত থেকে ঋণ নিয়ে ১ লাখ কোটি টাকার সংস্থান হবে

- ফাইল ছবি

পাঁচ খাত থেকে ঋণ নিয়ে প্রণোদনার ১ লাখ কোটি টাকার সংস্থান করা হবে। এ অর্থ সংস্থান করতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আগেই ক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছে। সিআরআর দেড় শতাংশ ছাড়ের ফলে ২০ হাজার কোটি টাকা, এডিআর ২ শতাংশ বাড়ানোর ফলে ২৬ হাজার কোটি টাকার বাড়তি বিনিয়োগের সুযোগ হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পুনঃঅর্থায়ন করা হবে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর নগদ লভ্যাংশ দেয়ার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। সব মিলে ব্যাংকগুলোর এক লাখ কোটি টাকার বাড়তি বিনিয়োগের সুযোগ হয়েছে। ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ট্রেজারি বিল ও বন্ডের মাধ্যমে এক লাখ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে প্রণোদনার ১ লাখ কোটি টাকার সংস্থান করা হবে। এ জন্য আগামী অর্থবছরের বাজেটে ‘করোনা পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কর্মসূচি’ নামক আলাদা একটি অধ্যায় যুক্ত করা হবে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ বিষয়ে লিখিত খসড়া অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রায় ১ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনার প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। এ প্রণোদনার অর্থ কোথায় থেকে আসবে সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এর একটি খসড়াও অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো হয়েছে।

সরকার ট্রেজারি বিল ও বন্ডের মাধ্যমে ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ গ্রহণ করে। আর এতে অপারেটরের ভূমিকা পালন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রতি সপ্তাহেই সরকারের ঋণ কর্মসূচি অনুযায়ী ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ঋণ তুলে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের জন্য ১ লাখ ৭ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার। এ অর্থ সংস্থান কিভাবে করা হবে তার একটি ছক তৈরি করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য ব্যাংকগুলোর জন্য বাড়তি বিনিয়োগের সংস্থান করে দেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, করোনার প্রাদুর্ভাবের পর ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়াতে দুই দফা সিআরআর কমানো হয়। প্রথমে ৫০ বেসিক পয়েন্ট অর্থাৎ শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ ও পরে ১০০ বেসিক পয়েন্ট অর্থাৎ এক শতাংশ কমানো হয়। এর ফলে ব্যাংকগুলোর হাতে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার বাড়তি নগদ অর্থের প্রবাহ বাড়ে। এর বাইরে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়াতে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগসীমা বাড়িয়ে দেয়া হয়। আগে ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ বিনিয়োগ করতে পারত। এখন তা বাড়িয়ে ৮৭ শতাংশ করা হয়। আর ইসলামী ব্যাংকগুলোর জন্য ৯০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯২ শতাংশ করা হয়। দুই শতাংশ এডিআর বাড়ানোর ফলে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা বাড়তি বিনিয়োগের সুযোগ পাবে ব্যাংকগুলো। কারণ, ব্যাংকিং খাতে প্রায় ১৩ লাখ কোটি টাকার চলতি ও মেয়াদি দায় রয়েছে। ব্যাংকগুলোর এডিআর নির্ধারণ হয় এ চলতি ও মেয়াদি দায়ের ওপর ভিত্তি করে। এডিআর ২ শতাংশ বৃদ্ধি করায় ব্যাংকগুলো ২৬ হাজার কোটি টাকার বাড়তি বিনিয়োগের সুযোগ পাবে। সব মিলে বিনিয়োগ সক্ষমতা বেড়ে যাবে ব্যাংকগুলোর।

এর বাইরে ব্যাংকগুলো অর্থসঙ্কটের কারণে প্রণোদনার প্যাকেজ বাস্তবায়ন প্রায় অসম্ভব হবে। এ কারণে বৃহৎ শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের চলতি মূলধনের জন্য যে ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছিল তার ৫০ শতাংশ ১৫ হাজার কোটি টাকা এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের যে ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়েছে তার ৫০ ভাগ ১০ হাজার কোটি টাকা মিলে ২৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুনাফা থেকে কৃষিঋণের সুদের ভর্তুকি দেবে ৯০৫ কোটি টাকা। একই সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব তহবিল হতে কৃষিভিত্তিক শিল্পে ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ প্রদান করা হবে কম সুদে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সবমিলে ব্যাংকিং খাতে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়বে। সরকার ট্রেজারি বিল ও বন্ডের মাধ্যমে এ থেকে ঋণ নিয়ে প্রণোদনার প্যাকেজ বাস্তবায়ন করবে।


আরো সংবাদ



premium cement