২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিধিনিষেধ : মুনাফা দিতে পারবে না দুর্বল ব্যাংকগুলো

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিধিনিষেধ : মুনাফা দিতে পারবে না দুর্বল ব্যাংকগুলো - সংগৃহীত

শর্তের বেড়াজালে পড়ে গেছে ব্যাংকিং খাতে ২০১৯ সালের লভ্যাংশ বণ্টন। যেসব ব্যাংকের মূলধন সংরক্ষণের হার ১০ শতাংশের কম রয়েছে তারা শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দিতে পারবে না। আর যারা ইতোমধ্যে বাকিতে খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণ করছে তারা ৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ মুনাফা বিতরণ করতে পারবে। তবে সে ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে। আর যারা বাকিতে প্রভিশন সংরক্ষণ করেনি, মূলধন সংরক্ষণের সক্ষমতা অনুযায়ী তারা সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত লভ্যাংশ বিতরণ করতে পারবে। ইতোমধ্যে যেসব ব্যাংকের লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের শর্তের আওতাভুক্ত হতে পারবে না ওই সব ব্যাংকের ঘোষিত লভ্যাংশ স্থগিত করে শিগগিরই তা সংশোধনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন এক নির্দেশনায় প্রায় সবগুলো সরকারি ব্যাংকসহ দুই ডজনের মতো ব্যাংক মুনাফা দিতে পারবে না শেয়ারহোল্ডারদের।

জানা গেছে, ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় বর্ধিত হারে প্রভিশন সংরক্ষণের প্রয়োজন দেখা দেয়। কিন্তু বেশির ভাগ ব্যাংকেরই প্রভিশন সংরক্ষণ করতে গিয়ে মুনাফা বণ্টন করতে অসুবিধা হচ্ছিল। বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরে আসায় এবং ব্যাংকগুলোর আবেদনে অদ্ভুত সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রভিশন ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকগুলোর মুনাফা বণ্টনের সুযোগ দিতে বাকিতে প্রভিশন সংরক্ষণের অনুমোদন দেয়া হয়। অর্থাৎ যেখানে কোনো ব্যাংকের ১০০ কোটি টাকা প্রভিশন ঘাটতি হলে ১০০ কোটি টাকাই প্রভিশন সংরক্ষণ করার কথা, সেখানে বাকিতে অর্থাৎ ১০০ কোটি টাকাকে চার ভাগ করে চার বছরের জন্য সংরক্ষণের অনুমোদন দেয়া হয়। ফলে ১০০ কোটি টাকার প্রভিশন সংরক্ষণ না করে ২৫ কোটি টাকা প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয়। প্রকৃত মুনাফা না হলেও বাকি ৭৫ কোটি টাকা মুনাফায় অন্তর্ভুক্ত করে তা বণ্টন করা হয়। এভাবে ব্যাংকভেদে মূলধন তলানিতে নেমে গেছে। এতে কমে গেছে ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিসহন ক্ষমতা।

এ দিকে করোনার কারণে ব্যাংকগুলোর দুর্বলতা বাস্তবে বেরিয়ে পড়ছে। সরকারঘোষিত নানা প্রণোদনা স্কিম ব্যাংকগুলো বাস্তবায়ন করতে পারছে না। ইতোমধ্যে ব্যাংকগুলোর অক্ষমতার কথা বিবেচনায় নিয়ে ৫০ হাজার কোটি টাকার দু’টি প্রণোদনা স্কিম বাস্তবায়নের জন্য ২৫ হাজার কোটি টাকা জোগান দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর এ থেকেই ব্যাংকগুলোর মুনাফা বণ্টন না করার প্রশ্ন ওঠে। গতকালের নির্দেশনায় বাংলাদেশ ব্যাংকও স্বীকার করেছে, নানা প্রণোদনা বাস্তবায়ন করতে ব্যাংকগুলো এখন অনেকটা চাপে রয়েছে। চাপ সামাল দেয়ার লক্ষ্যে ব্যাংকের মূলধন শক্তিশালী করা প্রয়োজন। এ কারণেই ব্যাংকের আর্থিক সক্ষমতা এবং শেয়ার বিনিয়োগকারীদের রিটার্নের বিষয়টি সামগ্রিকভাবে বিবেচনায় নিয়ে মুনাফা বণ্টনের বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়, ইতোমধ্যে যেসব ব্যাংক বাকিতে প্রভিশন সংরক্ষণ করেনি তাদের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে সাড়ে ১২ শতাংশের ওপরে মূলধন সংরক্ষণ করলে ওই সব ব্যাংক ১৫ শতাংশ নগদসহ সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বণ্টন করতে পারবে। একই সাথে কোনো ব্যাংক সোয়া ১১ শতাংশ থেকে সাড়ে ১২ শতাংশের নিচে মূলধন সংরক্ষণ করলে ওই সব ব্যাংক সাড়ে ৭ শতাংশ নগদসহ সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ লভ্যাংশ বণ্টন করতে পারবে।
তবে, যেসব ব্যাংক ইতোমধ্যে বাকিতে প্রভিশন সংরক্ষণের সুযোগ নিয়েছে, তারা সোয়া ১১ শতাংশ মূলধন সংরক্ষণ করতে পারলে ৫ শতাংশ নগদসহ সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ লভ্যাংশ বণ্টন করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে। তবে, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের আগে কোনো ক্রমেই নগদে লভ্যাংশ বণ্টন করা যাবে না।

একইভাবে বাকিতে প্রভিশন সংরক্ষণের সুযোগ নিয়েছে এবং মূলধন সংরক্ষণের হার সোয়া ১১ শতাংশের কম রয়েছে কিন্তু ১০ শতাংশের বেশি রয়েছে এমন সব ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে মাত্র ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার বণ্টন করতে পারবে। আর ১০ শতাংশের নিচে যেসব ব্যাংক মূলধন সংরক্ষণ করেছে ওই সব ব্যাংক ২০১৯ সালের কোনো মুনাফা শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বিতরণ করতে পারবে না।

ইতোমধ্যে যেসব ব্যাংক ২০১৯ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণীর ভিত্তিতে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের আলোচ্য শর্ত পূরণ করতে পারবে না ওই সব ব্যাংকের ঘোষিত লভ্যাংশ স্থগিত করে শিগগিরই তা সংশোধনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement