১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে : সিপিডি

অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে : সিপিডি - ছবি : সংগৃহীত

করোনা পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় আগামী অর্থবছরের বাজেটে কিস্তিতে করপোরেট কর পরিশোধ, ব্যক্তি শ্রেণীর আয়কর মওকুফের সীমা বৃদ্ধি এবং করোনা রোগীকে যে সব চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী সেবা দিচ্ছেন তাদের বিশেষ বোনাস দেয়ার সুপারিশ করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। একই সাথে হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোকে সময় নির্ধারণ করে চলতি ও আগামী অর্থবছরে কর রেয়াত দেয়ারও প্রস্তাব করা হয়েছে। আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরে বাজেটের জন্য বেসরকারি এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে রোববার একগুচ্ছ প্রস্তাব পেশ করেছে।

সিপিডির পক্ষ থেকে দেশে অর্থনীতির একটি নাজুক চিত্র তুলে ধরা হয়। বলা হয়, করোনা পরিস্থিতির কারণে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে। এর ফলে আগামীতে কাস্টমস ডিউটি, ভ্যাট আদায় এবং সম্পূরক শুল্ক থেকে রাজস্ব আহরণ কমে যাবে। কারণ দেশে ইতোমধ্যে আমদানি-রফতানি আয় কমে গেছে। করোনার কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে, মানুষের চাকরিচ্যুতি ঘটবে, কমে যাবে আয়কর আদায়ের হার। শুধু তা-ই নয়, বেসরকারি ও বহু জাতিক কোম্পানিগুলোর আয় কমে যাওয়ার কারণে করপোরেট কর আদায়ও কমবে। এই অবস্থা চলতে থাকলে চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের ঘাটতি প্রায় এক লাখ কোটি টাকা ছুঁয়ে যাবে। একই সাথে বেড়ে যাবে বাজেট ঘাটতি। চলতি অর্থবছরে বাজেটে এই ঘাটতি প্রাক্কলন করা হয়েছে জিডিপির অংশ হিসেবে ৫ শতাংশ। কিন্তু সিপিডি বলছে, এই ঘাটতি সাড়ে ৫ শতাংশে পৌঁছতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে সিপিডির পক্ষ থেকে আগামী অর্থবছরে বিভিন্ন শ্রেণীর আয়করদাতাদের কিছু সুবিধা দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। যেমনÑ বর্তমানে ব্যক্তি শ্রেণীর আয়কর মওকুফের সীমা আড়াই লাখ টাকা। সিপিডি এই সীমা বাড়িয়ে আগামী অর্থবছরে তা সাড়ে তিন লাখ টাকায় উন্নীত করার কথা বলেছে। একই সাথে আয়করের প্রথম তিনটি সø্যাব পরিবর্তনেরও সুপারিশ করেছে সিপিডি। বিদ্যমান সø্যাব ১০, ১৫ ও ২০ পরিবর্তে, ৫, ১০ ও ১৫ করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

সিপিডি শঙ্কা ব্যক্ত করে বলেছে, আগামী অর্থবছরে কর হার বা করের আওতা বাড়ানো সরকারের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। এর পরিবর্তে এনবিআরের উচিত হবে কর মনিটরিং জোরদার করা যাতে বিদ্যমান করদাতারা যেন কর ফাঁকি দিতে না পারে এবং আমদানি-রফতানির নামে মুদ্রা পাচার যেন না ঘটে।

এনবিআরের উচিত করোনার কারণে যে সব কৃষিভিত্তিক শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের কর রেয়াত সুবিধা দেয়া। এ ক্ষেত্রে তাদের মার্চ-জুন প্রান্তিকে ভ্যাট মওকুফ করে দেয়া যেতে পারে এবং এই মওকুফ আগামী অর্থবছরে অব্যাহত রাখা প্রয়োজন।

এ ছাড়া দেশের অভ্যন্তরীণ শিল্প ও রফতানিমুখী শিল্পকে তাদের করপোরেট কর কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ দেয়া এবং এই কিস্তি সুবিধা আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত অব্যাহত রাখা প্রয়োজন।

বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবেলায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের টার্নওভার ট্যাক্স মওকুফের সীমা ৫০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক কোটি টাকায় উন্নীত করারও সুপারিশ করেছে সিপিডি। এই সুবিধা চলতি অর্থবছরের পাশাপাশি আগামী অর্থবছরেও দেয়ার উচিত বলে মনে এই প্রতিষ্ঠানটি।

হাসপাতাল, ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি, ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং আনুষঙ্গিক প্রতিষ্ঠানগুলোর করপোরেট কর কমানোর কথাও বলেছে সিপিডি। এই সুবিধা চলতি বছরের মার্চ-জুন এবং আগামী অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়কালে দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। যেসব চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী করোনা রোগীদের সেবা দিচ্ছেন তাদের আর্থিক সুবিধা দিতে বলেছে সিপিডি। এ ক্ষেত্রে সরকারিদের ক্ষেত্রে একটি বোনাস প্রদান এবং বেসরকারি লোকদের ক্ষেত্রে আয়কর মওকুফের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

সিপিডি তার সুপারিশে বলেছে, এনবিআরকে বিচক্ষণতার সাথে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা অতীতের মতো সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনাকে দুর্বল করতে পারে। রাজস্ব আহরণের বাস্তব লক্ষ্যমাত্রা সরকারি ব্যয়ে ভারসাম্য বজায় রাখতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে সহায়তা করতে পারে। কর প্রস্তাব তৈরিতে এনবিআরকে জরুরি বিষয়গুলো চিহ্নিতকরণ ও করোনাপরবর্তী অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে এনবিআর বছর শেষে চলতি অর্থবছরের প্রণোদনা প্রদানের ক্ষেত্রে পুনঃঅগ্রাধিকার ও পুনর্গঠনের বিষয়টি পর্যালোচনা করতে পারে। তাৎক্ষণিক করোনার ক্ষতিকর প্রভাব চিহ্নিত করতে গিয়ে মধ্যমেয়াদি সংস্কার পরিকল্পনার অগ্রাধিকার বাস্তবায়নে এনবিআরের পিছিয়ে আসা উচিত হবে না। ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক সংক্রান্ত আইনের পরিপূর্ণ বাস্তবায়নসহ চলমান অসমাপ্ত সংস্কারকাজ অব্যাহত রাখতে হবে বলে মনে করে সিপিডি।


আরো সংবাদ



premium cement