১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ডিআইএফই নাকি বিকেএমইএ

কার কথা শুনবে গার্মেন্টস মালিকরা?

-

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর (ডিআইএফই) বলছে, নির্দিষ্ট শর্তে কারখানা খোলা রাখা যাবে। কিন্তু বাংলাদেশ নীটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) তাদের আওতাভুক্ত সব কারখানা আগামী ৪ মার্চ পর্যন্ত বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। এ নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়েছে গার্মেন্টস মালিকরা। বিশেষ করে কল কারখানা অধিদফতরের শর্ত অনুযায়ী, যাদের বিদেশী অর্ডার বাতিল হয়নি বা যে সব গার্মেন্ট করোনা সংক্রান্ত পিপি বা পোশাক সামগ্রী তৈরি করছে তা খোলা রাখতে পারবে বলে জানিয়ে দিয়েছে। কিন্তু বিকেএমইএ তাদের সাংগঠনিক সব গার্মেন্ট বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। দুই রকম নির্দেশনায় এ নিয়ে সচল ও বন্ধ গার্মেন্টগুলোতে দেখা দিয়েছে নানা বিভ্রান্তি।

শুক্রবার জরুরি প্রয়োজনে শিল্পকারখানা চালু রাখা যাবে বলে জানিয়েছে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর (ডিআইএফই)। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও আইইডিসিআরের জারি করা স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নির্দেশিকা কঠোরভাবে পরিপালন করেই কারখানা চালাতে হবে শিল্প মালিকদের। ডিআইএফই ‘র মহাপরিদর্শক শিবনাথ রায়ের এই নির্দেশনায় আরো বলা হয়েছে, যেসব রফতানিমুখী কারখানায় ক্রয়াদেশ রয়েছে এবং করোনা প্রতিরোধে অপরিহার্য পণ্য-পারসোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইমেন্ট (পিপিই), মাস্ক, হ্যান্ডওয়াশ বা স্যানিটাইজার, ওষুধ ইত্যাদি উৎপাদন কার্যক্রম চলছে সেসব কারখানার শিল্প মালিকেরা শ্রমিকদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কারখানা চালু রাখতে পারবেন। তবে কারখানায় প্রবেশের পূর্বে থার্মাল স্ক্যানার ব্যবহার করে শ্রমিকদের দেহের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক।

কোনো শ্রমিকের শরীরে করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিলে তাকে কোয়ারেন্টাইন করার পাশাপাশি চিকিৎসা দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে ডিআইএফই। ওই চিঠিতে অধিদফতর আরো উল্লেখ করেছে যে, গত ২৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে রফতানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের বেতন ভাতা প্রদানের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদণা প্যাকেজ ঘোষণার পাশাপাশি তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে সবার প্রতি আহ্বান জানান। তবে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে শিল্প কারখানা বন্ধের কোনো নির্দেশনা ছিল না।

এদিকে গতকাল নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত কারখানা বন্ধ রাখতে বিশেষ নির্দেশনা দেন।

গণমাধ্যমে প্রেরিত বিকেএমইএ’র প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষন করে নীট সেক্টরের সব কারখানাগুলো ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপিল পর্যন্ত বন্ধ রাখতে সব মালিকদের প্রতি অনুরোধ রেখেছেন বিকেএমইএ’র সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান।

দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে তিনি শিল্প মালিক, সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দদের সাথে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহন করার অনুরোধ করা হয়েছে।

সেই মোতাবেক বুধবার ২৫ মার্চ ঢাকায় প্লানেস টাওয়ারে বিকেএমইএ’র ঢাকার কার্যালয় থেকে বিকেএমইএ সব সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে করোনাভাইরাস সংক্রামন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ সহ সার্বিক বিষয় ব্যাখা এবং কারখানাগুলো বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। নিচে বিকেএমইএ’র পাঠানো চিঠিটি হুবহু দেয়া হলো-

দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমনের প্রেক্ষাপটে সৃষ্ট অচলাবস্থায় দেশ, জাতি ও মানুষের বৃহত্তর কল্যাণের স্বার্থে বাংলাদেশের প্রধানতম রপ্তানিখাত নীট শিল্পের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন বিকেএমইএ তার সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য নিম্নলিখিত পরামর্শসমূহ অবহিত করছে:

রপ্তানি কার্যাদেশ বা এ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম না থাকলে ফ্যাক্টরি চালানোর কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ জনসমাগম যত কম হবে, ততই করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কমবে। তাই অপ্রয়োজনে কারখানায় শ্রমিক এনে হাজিরা নেয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ আপনার প্রতিষ্ঠানের একজন শ্রমিক করোনা ভাইরাস-এ আক্রান্ত হলে, আপনার পুরো প্রতিষ্ঠানকে এমনকি আপনার আশে-পাশের ফ্যাক্টরিসমূহ তথা পুরো এলাকাকে লকডাউন করে দিতে পারে। সেক্ষেত্রে আমরা আরও বেশি বিপদগ্রস্থ হব। একইসাথে কারখানা ছুটিকালীন সময়ে আপনার কারখানার শ্রমিকরা যে যেখানে অবস্থান করছে সে যেন সেখানেই অবস্থান করে তা নিশ্চিত করতে হবে। তাদেরকে বুঝাতে হবে, এটা কোনো ঈদ বা উৎসবের ছুটি নয়। তাই যে যেখানে অবস্থান করে, তাকে সেখানেই থাকতে হবে।

২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস সরকারি ছুটি এবং ২৭ মার্চ শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি হওয়ায়, উক্ত দুইদিন শ্রমিকদের সুবিধার্থে (বিশেষ করে তাদের বাজার, ঔষধপত্র ক্রয়, নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্যান্য কাজের কারণে) সম্ভব হলে আপনার কারখানা বন্ধ রাখার জন্য আমরা সবিনয়ে অনুরোধ জানাচ্ছি।

যেহেতু সরকারের চূড়ান্ত নির্দেশনা এখনো আসেনি, সেক্ষেত্রে আপনার প্রয়োজনে বা যদি আপনি প্রয়োজন মনে করেন, আপনার সম্পূর্ণ নিজস্ব রিক্স এন্ড রেসপন্সিবিলিটিতে আপনার কারখানা খোলা রেখে পরিচালনা করতে পারেন। আমাদের বুঝতে হবে, করোনা ভাইরাস এখন মহামারী রূপধারণ করেছে। পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশে কারফিউ এবং লকডাউনের মাধ্যমে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের চেষ্টা করা হচ্ছে। যেহেতু আমাদের প্রস্তুতকৃত পণ্যটি রপ্তানিযোগ্য পণ্য এবং বাংলাদেশের মূল বৈদেশিক মুদ্রা আননয়নকারী খাত, সেহেতু আমরা এই মুহূর্তেই পুরো সেক্টর বন্ধ করা হবে কিনা, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারছি না। তবে পরিস্থিতি যেভাবে নাজুক হচ্ছে তাতে যে কোনো মুহূর্তেই বাংলাদেশেও কাউফিউ বা লকডাউন প্রয়োগ হতে পারে। ইতোমধ্যেই দেশে লঞ্চ, ট্রেন ও গণপরিবহন বন্ধ হয়ে গেছে। বিকেএমইএ সবসময় আপনাদের সাথে আছে। যদি ট্রাক চলাচল করে, শিপিং লাইন খোলা থাকে, তবে আপনাকে শিপমেন্ট করার জন্য বিকেএমইএ সবরকমের সহায়তা করবে। তবে কারখানা চলাকালীন সময়ে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের হাত থেকে শ্রমিক, কর্মকর্তা ও মালিকদের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যগত সুরক্ষার সকল নিয়ম মেনে চলতে হবে।

এমনকি আপনি ক্ষতিগ্রস্থ না হওয়ার জন্য প্রয়োজনে ইচ্ছে হলে নীটিং, ডায়িং ক্লোজ করে সীমিতআকারে আপনার ফ্যাক্টরি পরিচালনা করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রেও করোনা ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকার জন্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

আপনার প্রতিষ্ঠানের যেকোনো সমস্যা শ্রমিকদের সাথে সরাসরি আলোচনা করে সমাধান করুন। মনে রাখতে হবে, প্রয়োজনের অতিরিক্ত কাজও আমাদেরকে বিপদগ্রস্থ করতে পারে। কোনো অবস্থাতেই শ্রমিকদের বেতন-ভাতাদি বন্ধ করা যাবে না। আপনার ও আমার কারণে যাতে দেশে কোনো শ্রমিক অসন্তোষ দানা না বাঁধে, সে ব্যাপারে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। এজন্যই শ্রমিকদের বিগত বকেয়াসহ সকল পাওনাদী (যদি থাকে) ও মার্চ’২০ মাসের বেতন আপনার ব্যাংকের সাথে সমন্বয় করে সময়মত প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির অনুরোধ জানাচ্ছি। এক্ষেত্রে কোনো ব্যত্যয় ঘটানো যাবেনা; এটা সম্পূর্ণই আপনার দায়িত্ব।

এই মহামারী (করোনা ভাইরাস) নিয়ন্ত্রণে আসলে আমরা আমাদের ক্ষতির তথ্য ও পরিসংখ্যান সরকারের কাছে উপস্থাপন করব এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পাবার জন্য চেষ্টা করব। তবে এই বিষয়ে এখনোই কোনো কিছু দাবি করা যুক্তিসঙ্গত ও সময়োচিত নয়। তবে করোনা ভাইরাসের কারণে কারখানার কী পরিমাণ অর্ডার বাতিল, স্থগিত এবং শিপমেন্ট বাতিল হয়েছে তার পাশাপাশি আপনার কারখানার মার্চ মাসের শ্রমিক/কর্মচারী/কর্মকর্তার মোট সংখ্যা এবং বেতনের পরিমান ও পানি, বিদ্যুত, গ্যাস বিল বাবদ যে খরচ দাড়ায় তা দ্রুততম সময়ের মধ্যে রধৎঃ১@নশসবধ.পড়স এ পাঠানোর জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।

ইতোমধ্যেই সরকারী ও বেসরকারি সমস্ত কার্যালয় ২৬ মার্চ’২০ থেকে ৪ঠা এপ্রিল’২০ পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। আমাদের জানা তথ্য মতে অনেক প্রতিষ্ঠানও সরকারের নির্দেশনা অনুসারে ২৬ মার্চ’২০ থেকে ৪ঠা এপ্রিল’২০ পর্যন্ত কারখানা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। তাই আপনার প্রতিষ্ঠানে যথেষ্ট কাজ না থাকলে আপনিও ইচ্ছে করলে আগামী ২৬ মার্চ’২০ থেকে ৪ঠা এপ্রিল’২০ পর্যন্ত আপনার কারখানা বন্ধ রাখাতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রেও কারখানার শ্রমিক/কর্মকর্তার বেতন-ভাতাদি সময়মতো প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

যদি ফ্যাক্টরি ছুটি দিয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে আপনার প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের সাথে আলোচনা করে তাদের মধ্য থেকে স্বেচ্ছ্বাশ্রমে (ভলান্টিয়ার সার্ভিস) আগ্রহীদের নিয়ে টিম করে আপনার কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।

ছুটির পরে ফ্যাক্টরি খোলার সময় অবশ্যই শ্রমিক/কর্মকর্তাসহ সকলের মেডিক্যাল চেকআপ করে কোনো রোগ না থাকার বিষয়টি সুনিশ্চিত হয়ে তবেই তাদের (শ্রমিক/কর্মকর্তা) আপনার ফ্যাক্টরিতে প্রবেশ করান।


আরো সংবাদ



premium cement
চন্দনাইশ, বাঁশখালী ও বোয়ালখালীতে ৩ জনের মৃত্যু গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল শ্যালকের অপকর্মে দুঃখ প্রকাশ করলেন প্রতিমন্ত্রী পলক রাজশাহীতে ট্রাকচাপায় ৩ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত পাবনায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে হতাহত ২২ বিল দখলের চেষ্টা, জেলা ছাত্রলীগ নেতাকে গণপিটুনি ‘শাহাদাতের তামান্নায় উজ্জীবিত হয়ে কাজ করলে বিজয় অনিবার্য’ কারাগারে নারী হাজতিকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন, প্রধান কারারক্ষীসহ ৩ জনের বদলি প্যারিসে ইরানি কনস্যুলেটে ঢুকে আত্মঘাতী হামলার হুমকিদাতা গ্রেফতার প্রেম যমুনার ঘাটে বেড়াতে যেয়ে গণধর্ষণের শিকার, গ্রেফতার ৫ ‘ব্যাংকিং খাতের লুটপাটের সাথে সরকারের এমপি-মন্ত্রী-সুবিধাবাদী আমলারা জড়িত’

সকল