২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বছরে প্রায় ৬৪ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়-জিএফআই

জিএফআই আমাকে দেখতে পারে না, সরকারকে দেখতে পারে না : অর্থমন্ত্রী

আ হ ম মুস্তফা কামাল - ছবি : সংগৃহীত

২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে এক হাজার ১৫১ কোটি ডলার এমন ত্য প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই)। তবে এ ধরণের অর্থ পাচার সংক্রান্ত এ প্রতিবেদন সম্পর্কে সরকার কিছুই জানে না উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, ‘তারা (জিএফআই) আমাকে দেখতে পারে না। সরকার দেখতে পারে না? আইডিয়া থেকে অনেক কিছু বলা যায়। তারা আইডিয়ার উপরে এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে।’

বুধবার বিকালে রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এনইসি সরকারি সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, অর্থ পাচার সংক্রান্ত জিএফআই এ প্রতিবেদন সম্পর্কে সরকার কিছু জানে না। তবে যারা এ অপরাধে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, জিএফআইয়ের অর্থ পাচার সংক্রান্ত তথ্য আমার কাছে নেই। এই বিষয়ে আমার নলেজে নেই। তাদের(জিএফআই) কাজই হলো এই সমস্ত তথ্য বের করা, তথ্য বিশ্লেষণ করা। ওদের(জিএফআই) যদি কোন বক্তব্য থাকে তাহলে তো আমাকে জানাবে। পত্রিকায় এই সমস্ত তথ্য দিয়ে কি লাভ।

উল্লেখ্য, গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সাত বছরে বাংলাদেশ থেকে পাঁচ হাজার ২৭০ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। স্থানীয় মুদ্রায় যা সাড়ে চার লাখ কোটি টাকা। যা দেশের চলতি বছরের (২০১৯-২০২০) জাতীয় বাজেটের প্রায় সমান। প্রতি বছর গড়ে পাচার হয়েছে প্রায় ৬৪ হাজার কোটি টাকা।

এই প্রতিবেদনের বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘যেহুতো এই বিষয়ে জানিনা এই বিষয়ে কথা বলবো না। বিষয়টা আমরা দেখবো ও বিশ্লেষণ করবো। পরে আপনাদের জানাবো। বর্তমানে আমার নলেজে নাই। এই তথ্য আমার কাছেও নেই। ’

জিএফআই সারাবিশ্বে এই তথ্য প্রকাশ করেছে,এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আইডিয়া দিয়ে অনেক কিছু করা যায়। যেহেতু বিষয়টা জানিনা এই বিষয়ে কিছু বলবো না। তারা এই তথ্য কোথায় পেয়েছে? আমি বলে দিলাম বছরে আমেরিকা থেকে ৩০ হাজার লাখ কোটি টাকা পাঁচার হয়ে যায়। তাহলেই হয়ে গেল।’

সরকারের করণীয় কি জানতে চাইলে মুস্তফা কামাল বলেন, ‘সরকার তো এই বিষয়ে জানেই না। সরকারকে তো আগে জানতে হবে। বাংলাদেশে তথ্য আসেনি। তথ্য আসলে তো আমি জানতাম। আমি সরকারের একটা অংশ। সরকারের কাছে তথ্য এল আমি পেতাম। যদি এখান থেকে টাকা চলে যায় তাহলে তো অর্থমন্ত্রণালয়ের টাকাই যাবে।’

টাকা পাচার ঠেকাতে কোন পদক্ষেপ নেবেন কি? এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, এই বিষয়ে মামলা ছাড়া কি করতে পারি। কারোর কিছু অপরাধ আসলে মামলা করি। মামলে করলে দুদক থেকে শুরু করে সরকারের অন্যান্য তদন্ত সংস্থা ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। কাউকে জেলে পাঠায়, কেউ আবার মুক্তি পায়।’

ব্যবসায়ীরা কানাডায় বাড়ি করছে এই বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। আপনারা অর্থমন্ত্রী হলে কি করতেন? আমরাও পদক্ষেপ নিচ্ছি। অনেক মামলা করি অনেকে জেলে আছে। তবে সর্বশেষ বিষয়টা কোর্ট দেখেন।’

উল্লেখ্য, প্রতি বছর দেশ থেকে অস্বাভাবিক হারে টাকা পাচার বেড়েছে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে এক হাজার ১৫১ কোটি ডলার। দেশীয় মুদ্রায় ৯৮ হাজার কোটি টাকা। পাচারের এ পরিমাণ ২০১৪ সালের চেয়ে বেড়েছে। মঙ্গলবার প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। মূলত আমদানি-রফতানি মাধ্যমে এ তথ্য পাচার হয়ে থাকে। এক শ্রেণির ব্যবসায়ি আমদানি করার সময় পণ্য’র মূল্য বেশি দেখিয়ে বিদেশে অর্থ পাচার করে থাকে। অন্যদিকে, রফতানিকারকা পণ্য মূল্য কম দেখিয়ে সেই অর্থ বিদেশ থেকে না এনে বাইরের দেশে রেখে আসেন।

যে পরিমান অর্থ পাচার হয়েছে তা চারটি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব। জিএফআই’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই প্রক্রিয়ায় এই অর্থ পাচার হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে মূল্য বেশি দেখানো (ওভার ইনভয়েসিং) এবং রফতানিতে মূল্য কম দেখানো (আন্ডার ইনভয়েসিং)।

জিএফআই’র তথ্যমতে, গত সাত বছরে বাংলাদেশ থেকে পাঁচ হাজার ২৭০ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। স্থানীয় মুদ্রায় যা সাড়ে চার লাখ কোটি টাকা। যা দেশের চলতি বছরের (২০১৯-২০২০) জাতীয় বাজেটের প্রায় সমান। প্রতি বছর গড়ে পাচার হয়েছে প্রায় ৬৪ হাজার কোটি টাকা।টাকা পাচারে বিশ্বের শীর্ষ ৩০ দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের নাম।


আরো সংবাদ



premium cement