২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে ভরসা পাচ্ছে না ব্যাংক

-

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে ভরসা পাচ্ছে না বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। বিশেষ সুবিধায় বিনিয়োগের নির্দেশনা দেয়া হলেও তাতেও সায় মিলছে না। ব্যাংকারদের সাফ কথা, আমানতকারীদের অর্থে এ মুহূর্তে ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগে যাওয়া ব্যাংকগুলোর পক্ষে সম্ভব নয়। এ দিকে পুঁজিবাজারে তলানিতে পড়ে যাওয়া টাকার প্রবাহ বাড়ানোর বিকল্প উপায় বের করতে গতকাল বৃহস্পতিবার ব্যাংকারদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী সোমবার বা মঙ্গলবারের মধ্যে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে নতুন নির্দেশনা আসতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে গত ২২ সেপ্টম্বর ব্যাংকগুলোর জন্য নতুন একটি নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। এতে বলা হয়েছিল ব্যাংকগুলো তাদের হাতে থাকা ট্রেজারি বিল ও বন্ড বন্ধক রেখে রেপোর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য অর্থের সংস্থান করতে পারবে। ব্যাংকগুলোকে সার্কুলার জারির তিন মাসের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদন করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা জারির সময় ব্যাংকগুলোর হাতে তাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত ২২ হাজার কোটি টাকার ট্রেজারি বিল ও বন্ড ছিল। অর্থাৎ ব্যাংকগুলো এ ২২ হাজার কোটি টাকা পুুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারত। কিন্তু গত তিন মাসে একটি ব্যাংক বাদে কোনো ব্যাংকই বাংলাদেশ ব্যাংকের এ নির্দেশনায় সাড়া দেয়নি।

এ দিকে অব্যাহতভাবে পুঁজিবাজার পতন হচ্ছে। সূচক তলানিতে নেমে আসছে। মূলধন হারিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পথে বসে গেছে। বিশেষ করে কয়েক দিন ধরে ধারাবাহিকভাবে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে। কৃত্রিমভাবে গত দুই দিনে সূচক বাড়ানোর চেষ্টা করে পতন ঠেকানো হচ্ছে। কিন্তু স্থায়ী কোনো সমাধান হচ্ছে না। এমনি পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে আগ্রহ হারানো ব্যাংকগুলোকে পুঁজিবাজারমুখী করতে নির্দেশনা দেয়া হয় নীতিনির্ধারণী মহল থেকে। এ কারণে গতকাল ব্যাংকারদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা এ বিষয়ে গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, ব্যাংকগুলোকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগমুখী করতে গতকাল ব্যাংকারদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করা হয়েছে। ব্যাংকারদের কাছে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে অনাগ্রহের কারণ জানতে চাওয়া হয়। বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তিন মাস আগে যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল, তা পরিপালন না করার কারণ জানতে চাওয়া হয়। সব ব্যাংকই একই উত্তর দিয়েছে। তারা বলেছে, সাধারণের আমানতের অর্থ দিয়ে এই মুহূর্তে তারা পুঁজিবাজারের মতো ঝুঁকিপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ করবে না। এসএলআর সংরক্ষণ করার পর ব্যাংকগুলোর হাতে যে অতিরিক্ত ট্রেজারি বিল ও বন্ড থাকে তা ব্যাংকগুলোর আপদকালীন সঙ্কট মেটানোর জন্য রাখা হয়। এমনিতেই ইতোমধ্যে পুঁজিবাজারে যে পরিমাণ বিনিয়োগ করা হয়েছে, তা বর্তমানে বাজার মূল্যে অর্ধেকে নেমে গেছে। এমনি পরিস্থিতি আবার আপদকালীন তহবিল ভেঙে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করলে তারা শতভাগ ঝুঁকির মুখে পড়ে যাবে। এ কারণেই ব্যাংকগুলো এ মুহূর্তে ট্রেজারি বিল ও বন্ড ভেঙে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করার পক্ষে নয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংকগুলো তাদের মোট মূলধনের ২৫ শতাংশের বেশি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারবে না, এমন নির্দেশনা আগে থেকেই আছে। কিন্তু বর্তমানে ব্যাংকগুলোর তাদের মোট মূলধনের গড়ে ১২ শতাংশের বেশি বিনিয়োগ নেই। ফলে এ মুহূর্তে ব্যাংকগুলো ১০ হাজার কোটি টাকা থেকে ১২ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারবে। কিন্তু আস্থার সঙ্কটে এ মুহূর্তে ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করতে চাচ্ছে না। এ কারণেই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিকল্প নীতিসহায়তা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ওই নির্দেশনার আলোকেই বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ শুরু করেছে। কী ধরনের নীতিসহায়তা দেয় হবে এমন এক প্রশ্নের জবাবে ওই সূত্র জানিয়েছে, বিকল্প উপায়ে ব্যাংকগুলোকে তারল্য সহায়তা দেয়া হবে, যাতে ব্যাংকগুলো পুুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে। এ জন্য বিদ্যমান নীতিমালায় পুনর্গঠন করতে হবে। সব মিলে এ নিয়ে কাজ শেষ করতে আগামী রোববার থেকে সোমবার পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। মঙ্গলবারেই ব্যাংকগুলোর জন্য এ-সংক্রান্ত নতুন নির্দেশনা দেয়া হতে পারে। তবে সব কিছু নির্ভর করছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ইচ্ছার ওপর। কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাওয়া গেলেই এ বিষয়ে নতুন নির্দেশনা দেয়া হবে বলে ওই সূত্র জানিয়েছে।

বিনিয়োগ করবে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক : এ দিকে পুঁজিবাজারে চলমান পরিস্থিতিতে টাকার প্রবাহ বাড়াতে চার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক বিনিয়োগ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গতকাল সোনালী ব্যাংকে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যান ও এমডিদের যৌথ বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী ব্যাংকগুলো তাদের মোট মূলধনের ২৫ শতাংশ পর্যন্ত পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ ২৫ শতাংশের কম রয়েছে। ডুবন্ত পুঁজিবাজারে পুঁজির জোগান বাড়াতেই অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে পুুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো।
এ দিকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে আগামী ২০ জানুয়ারি বৈঠক ডেকেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো উপস্থিত থাকবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement