১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

এ বছর ভয়ঙ্কর হতে পারে ডেঙ্গু

এ বছর ‘ভয়ঙ্কর হতে পারে’ ডেঙ্গু - প্রতীকী ছবি

চলতি বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ আরো বাড়তে পারে৷ তা হতে পারে ভয়ঙ্কর৷ গত বছরের প্রথম তিন মাসের তুলনায় এই বছরের প্রথম তিন মাসে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার দ্বিগুণেরও বেশি৷

গবেষণায় ঢাকাসহ ৯টি জেলায় ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশার উচ্চঘনত্ব দেখা গেছে৷ আর ডেঙ্গু এখন সারা বছরের রোগে পরিণত হয়েছে৷

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার জানান, এই বছর ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, চাঁদপুর, নরসিংদী, গাজীপুর, বরিশাল, বরগুনা ও মাদারীপুরে ডেঙ্গুর প্রকোপ গত বছরের চেয়েও বাড়বে৷

তিনি বলেন,‘মার্চ মাসে মাঠ পর্যায়ে গবেষণা করে দেখা গেছে এবার ডেঙ্গু পরিস্থিতি ওই জেলাগুলোতে আরো খারাপ হবে৷ আমরা ডেঙ্গু মশার ঘনত্ব, বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, আদ্রতা, ডেঙ্গু রোগী এই বিষয়গুলো বিবেচনায় নেই৷ তাতে দেখা গেছে এবার ওই জেলাগুলোতে শীতকালেও এডিস মশার ঘনত্ব ১০-এর ওপরে৷ এটা মার্চ মাসের হিসেব৷ বৃষ্টি হলে এটা দ্বিগুণ হয়ে যায়৷ এবার আগাম বৃষ্টি শুরু হয়েছে৷ ধারণা করি এখন এডিস মশার ঘনত্ব দ্বিগুণ হয়ে গেছে৷ আর যদি রোগীর সংখ্যা বিবেচনা করি, ২০২৩ সালের তুলনায় এ বছরের মার্চ মাসে দ্বিগুণেরও বেশি ছিল৷ ফলে আমরা যে তথ্য উপাত্ত পাচ্ছি তাতে ডেঙ্গু এবার অনেক প্রকট হবে৷'

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, গত বছর প্রথম তিন মাসে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয় নয়জনের৷ চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ২২ জন যা গত বছরের একই সময়ে দ্বিগুণের বেশি৷ এ বছর একই সময়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি৷ গত বছর প্রথম তিন মাসে হাসপাতালে ভর্তি রোগী ছিল ৮৪৩ জন৷ এবার প্রথম তিন মাসেই ভর্তি হয়েছে এক হাজার ৭০৫ জন৷

২০২৩ সালে ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয় এবং মারা যায় ১ হাজার ৭০৫ জন৷ গত বছর জুলাই-আগস্টের দিকে হঠাৎ ডেঙ্গু রোগী বেড়ে যাওয়ায় কোথাও কোথাও স্যালাইন সংকট দেখা দিয়েছিল৷ তখন স্যালাইনের দামও বেড়ে যায়৷ চলতি বছরে সেরকম পরিস্থিতি যাতে না হয় সেজন্য গত ৩১ মার্চ বৈঠক করেছে স্বাস্থ্যবিভাগ৷

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব জাহঙ্গীর আলম সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন,‘কৃত্রিম সঙ্কট মোকাবিলা করতে চাহিদার চেয়ে বেশি স্যালাইন উৎপাদন হওয়া প্রয়োজন৷ এ কারণে উৎপাদন বাড়াতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷ এ ছাড়া সব হাসপাতালে এখন থেকে স্যালাইন কিনে মজুত রাখতে হবে৷ পাশাপাশি ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার (অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ) চিকিৎসার জন্য প্ল্যাজমা ও রক্তক্ষরণ প্রতিরোধী ওষুধ আমদানি করা যায় কিনা, এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মত নিয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে৷'

মার্চ থেকে অক্টোবরকে ডেঙ্গুর মৌসুম ধরা হয়৷ এ সময়ে সারাদেশে প্রতি মাসে স্যালাইনের চাহিদা থাকে প্রায় ৫০ লাখ লিটার৷ নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ কম থাকে৷ ওই সময়ে এ ধরনের স্যালাইনের মাসিক চাহিদা থাকে প্রায় ৩০ লাখ লিটার৷

ডেঙ্গু ‘সারা বছরের' রোগ
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী বলেন,‘ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশের চিকিৎসকরা এখন যথেষ্ঠ দক্ষ হয়ে উঠেছেন৷ হাসপাতালগুলোতেও ব্যবস্থাপনা এখন ভালো৷ তারপরও প্রস্তুতি প্রয়োজন৷ জেলা, উজেলার সব হাসপাতালেরই আগাম প্রস্তুতি দরকার৷ সেই সাথে দরকার মানুষকে সচেতন করা৷ তবে সমস্য হলো আগেই এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করে ডেঙ্গু রোগ যাতে না হয় তার ব্যবস্থা তেমন নেয়া হচ্ছে না৷ আর এখন মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে দ্রুত হাসপাতালে না গিয়ে অপেক্ষা করেন৷ রোগীর অবস্থা জটিল হলে হাসপাতালে যায়৷ ফলে ডেঙ্গুতে মৃত্যুও হার বাড়ছে৷'

তিনি বলেন,‘ডেঙ্গু এখন সারা বছরের রোগ৷ এটা এখন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে৷ এডিশ মশার একটি ধরন হলো শহুরে এডিস৷ কিন্তু ২০১৯ সালের পর আমরা আরেকটি প্রজাতির এডিস মশা দেখতে পাচ্ছি যেটি বুনো এডিস৷ এটা বনে বাদাড়ে, গাছের কোটরে থাকে৷ ফলে এখন গ্রামেও ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে৷'

আর অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন,‘এখন দেশের মানুষ ডেঙ্গু রোগ সম্পর্কে জানে৷ এডিস মশা চেনে৷ এই মশা প্রতিরোধে কী করতে হয় তাও জানে৷ জানার পরও তারা বাড়িঘর পরিস্কার করেন না৷ স্বচ্ছ পানি জমতে দেন৷ আর এই পানিতেই এডিস মশা জন্মায়৷ আর সিটি কর্পোরেশনের মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ নেই৷'

ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনই প্রতি বছর মশা মারতে তাদের বাজেট বাড়চ্ছে৷ কিন্তু মশা নিয়ন্ত্রণে আসছে না৷

ঢাকার দুই সিটির চলতি অর্থবছরে মশা মারার বাজেট ১৫২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা৷ এরমধ্যে উত্তরের ১২১ কোটি ৮৪ লাখ আর দক্ষিণের ৩১ কোটি ১ লাখ টাকা৷ আর গত ১২ বছরে ঢাকার মশা মারার আয়োজনে খরচ হয়েছে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা৷ এই বাজেটের টাকা মশা নিবারণের নানা যন্ত্রপাতি, কীটনাশসহ আরো অনেক কাজে ব্যয় হয়৷

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে (ডিএসসিসি) ১০টি অঞ্চলে ৭৫টি ওয়ার্ডে মশা নিধনে ১৫০ জন মশক সুপারভাইজারসহ এক হাজার ৫০ জন কাজ করছেন৷

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১০টি অঞ্চলে মোট ৫৪টি ওয়ার্ডর ৭৫ জন মশক সুপারভাইজারসহ প্রায় ৬০০ জন কাজ করছেন৷

এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেলে জরিমানা
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির বলেন,‘দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় এখন ডেঙ্গু রোগী তেমন নাই৷ হাতে গোনা কয়েকজন পাওয়া গেছে৷ ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আছে৷ এখন নিয়মিত মশা নিধনের কাজ চলছে৷ ঈদের পর আমরা আরো বড় পরিসরে কাজ শুরু করব৷ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সমন্বয়ে কাজ করা হবে৷ সবাইকে চিঠি দেয়া হবে৷ সার্বক্ষণিক নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হবে৷'

তার কথায়,‘এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে শুধু আমরা নয়, সবাইকে কাজ করতে হবে৷ বাড়ির ভেতরে গিয়েতো আর মশা নিধন করতে পারব না৷ তাই এবার আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করব৷ কোনো বাড়ি বা স্থাপনায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেলে জরিমানা করা হবে৷'

এদিকে, ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন,‘মশা নিধনে আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত আছে৷ এটা আরো জোরদার করা হচ্ছে৷ তবে বাসাবাড়ির জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশার লার্ভা জন্মায়৷ তাই বাসা বাড়ির ছাদ, বারান্দা, বাথরুম এগুলো পরিষ্কার ও রাখতে হবে৷ সাইকে উদ্যোগী হতে হবে৷'

এজন্য দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এডিস মশার প্রজনন স্থল ধ্বংস ছাড়াও পরিত্যক্ত পলিথিন, চিপসের প্যাকেট, আইসক্রিমের কাপ, ডাবের খোসা, অব্যবহৃত টায়ার, কমোড ও অন্যান্য পরিত্যক্ত দ্রব্যাদি নগরবাসীর কাছ থেকে নগদ মূল্যে সংগ্রহ করার উদ্যোগ নিয়েছে বলে মেয়র জানিয়েছেন যাতে ওইসবের ভিতর পানি জমতে না পারে৷ পরিবেশও রক্ষা পায়৷ আর মোবাইল কোর্টও পরিচালনা করা হবে৷

সূত্র : ডয়েচে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement
অভিশংসিত হলেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট দক্ষিণ সিরিয়া থেকে আরো রুশ সেনা প্রত্যাহার পূর্ব সুদানের বেশিভাগ বাস্তুচ্যুত পরিবার খাদ্যাভাবে রয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতার ‘শূন্য পাঁচ’ কর্মসূচি ঘোষণা সিরিয়া যাচ্ছেন কাতারের প্রতিনিধিদল ভারত কখনো চায়নি বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক : মিয়া গোলাম পরওয়ার ‘উৎপাদনের জন্য কৃষি পণ্য ও উপকরণ সহজলভ্য এবং সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে’ পলিথিনে মোড়ানো নবজাতকের লাশ! আপনাকে ধরে এনে বিচার করা হবে : মোবারক হোসেন কালীগঞ্জে ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে উলামা পরিষদের বিক্ষোভ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর করে সরে যাবো : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সকল