২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ সিডরের মতো সুপার সাইক্লোনে পরিণত হতে পারে কি-না

২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড় সিডরে লণ্ডভণ্ড গ্রাম। - ছবি : সংগৃহীত

ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ এখন অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে বলে বলছে আবহাওয়া অধিদফতর। একইসাথে এর কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগও বাড়ছে। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলো থেকে এক হাজার ১০০ কিলোমিটারের কম দূরত্বে অবস্থান করতে থাকা এ ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে আবহাওয়া অধিদফতরের পক্ষ থেকে।

শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আবহাওয়া অধিদফতরের প্রকাশিত ১০ নম্বর বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ১০০ কিলোমিটারের কম দূরত্বে অবস্থান করছে। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১২০ কিলেমিটার, যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এছাড়া ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকার সাগর ‘খুবই বিক্ষুব্ধ’ রয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।

আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক আজিজুর রহমান শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে এটি উপকূলের কাছে যখন আসবে তখন এর কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ আরো বাড়তে পারে।

তিনি বলেন, ‘এটির তীব্রতা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এটির প্যাটার্ন আগে ছিল সিডিইউ, এখন এটি ব্যান্ড প্যাটার্নে রূপ নিয়েছে।’

এই ধরন পরিবর্তনের কারণে ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের বেগ বেড়ে যায় এবং বৃষ্টিপাতের তীব্রতাও বেড়ে যায় বলে জানান তিনি।

পাশাপাশি বজ্রপাতের পরিমাণও বাড়ার কথা উল্লেখ করেন আজিজুর রহমান।

এর আগে আবহাওয়া অধিদফতরের নয় নম্বর বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, আর সেটি দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আবহাওয়া অধিদফতরের বিজ্ঞপ্তিতে চট্টগ্রাম, মোংলা, পায়রা ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থান করা সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।

নৌকা ও ট্রলারগুলো যেন গভীর সাগরে না যায়, তার উপদেশও দেয়া হয়েছে।

মোখা কি সিডরের মতো সুপার সাইক্লোন হতে পারে?
আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ উমর ফারুক জানান, এটি এখনো অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় অবস্থায় রয়েছে। তবে সিডরের মতো সুপার সাইক্লোনে পরিণত হবে কি-না, তা এখনো নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।

আবহাওয়াবিদ উমর ফারুক বলেন, ‘সিডর ছিল সুপার সাইক্লোন। মোখা এখনো অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়। যদিও এর কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ বাড়ছে, কিন্তু এটি সুপার সাইক্লোনে পরিণত হতে পারে কি-না, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।’

ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ যদি ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটারের মধ্যে থাকে, তাহলে সেটিকে স্বাভাবিক ঘূর্ণিঝড় বলা হয়। কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটারের মধ্যে হলে সেটি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আর বাতাসের গতিবেগ ১১৮ থেকে ২২০ কিলোমিটারের মধ্যে হলে সেটিকে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

আর বাতাসের গতিবেগ যদি ঘণ্টায় ২২০ কিলোমিটারের বেশি হয়ে থাকে তাহলে সেটিকে সুপার সাইক্লোন বলা হয়।

২০০৭ সালে হওয়া সিডর ছিল সুপার সাইক্লোন। ওই বছরের নভেম্বরে হওয়া ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্রে বাতাসের বেগ ছিল ঘণ্টায় প্রায় ২৬০ কিলোমিটার।

এর আগে বাংলাদেশে ১৯৯১ সালে চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষেত্রে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২২৫ কিলোমিটার।

সকালে আবহাওয়া অধিদফরের পরিচালক আজিজুর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, এটি সুপার সাইক্লোনে পরিণত হবে, সূচক বিশ্লেষণ করে এখনো তেমন কিছু বলা যাবে না।

তবে এটিকে সুপার সাইক্লোনে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তিনি।

তিনি বলেন, ‘এটি সুপার সাইক্লোনে পরিণত হবে বা হবে না, এখনই এটি বলা যাচ্ছে না। এ ঘূর্ণিঝড়টির ক্ষেত্রে কেন্দ্রের ব্যাস, কেন্দ্রে বাতাসের গতিবেগ সবই বাড়ছে। তবে এটি উপকূলের কাছে আসতে এখনো ৪৮ ঘণ্টার মতো বাকি। এই সময়ের মধ্যে এটি দুর্বলও হতে পারে।’

আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক চট্টগ্রাম অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষকে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করার আহ্বান জানান।

পাশাপাশি শনিবার সন্ধ্যা নাগাদ উপকূলীয় চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশালের মত উপকূল-সংলগ্ন অঞ্চলগুলোতে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে বলেও জানান তিনি।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement