১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সীমান্ত বন্ধ না করে ওমিক্রন ঠেকাতে যে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে তা কি যথেষ্ট?

সীমান্ত বন্ধ না করে ওমিক্রন ঠেকাতে যে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে তা কি যথেষ্ট? - সংগৃহীত

ইতোমধ্যে ৪০টির মতো দেশে পাওয়া গেছে করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে ওমিক্রন নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তবে সতর্ক থাকতে হবে সেকথাও সংস্থাটি বলছে।

পশ্চিমা বিশ্বের বেশিরভাগ দেশেই ব্যাপক সতর্কতা নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ শুধু ৭টি দেশ থেকে আসা যাত্রীদের কোয়ারেন্টিনের কথা বলছে। ওদিকে প্রতিবেশী দেশ ভারত ও শ্রীলংকায় ইতোমধ্যেই ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার কথা জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

কিন্তু দু’টি দেশের সাথেই বাংলাদেশের পর্যটনসহ সব ধরনের যাতায়াত চালু আছে। স্থলবন্দর সম্পর্কে কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। এমন পটভূমিতে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক আজ রোববার সাংবাদিকদের বলেছেন সীমান্ত বন্ধ করার কোনো পরিকল্পনা নেই সরকারের। তবে সীমান্তে পরীক্ষা ও স্ক্রিনিং-এর ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

তিনি বলেছেন, "সীমান্ত বন্ধ করার কোনো পরিকল্পনা নেই। সীমান্তে পরীক্ষা, স্ক্রিনিং, কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা আমরা জোরদার করেছি। এখনো ওইরকম পরিবেশ আসেনি যে পুরো লকডাউন করতে হবে।"

বাংলাদেশে নেয়া ব্যবস্থাগুলো কি যথেষ্ট?
সম্প্রতি ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে তথ্য আসার পর বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে বেশ কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর ভিত্তিতে ডিসেম্বরের তিন তারিখ বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বলেছে যে আফ্রিকার সাতটি দেশ, বতসোয়ানা, ইসোয়াতিনি, ঘানা, নামিবিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে এবং লেসোথো থেকে কেউ বাংলাদেশে প্রবেশ করলে তাদের নিজ খরচে হোটেলে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।

তবে অন্য যে কোনো দেশ থেকে আসা যাত্রীদের বিমানে ওঠার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আরটিপিসিআর পদ্ধতিতে টেস্ট করিয়ে তার নেগেটিভ রিপোর্ট সাথে রাখতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেয়া বেশিরভাগ নির্দেশনাই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কার্যকর করার জন্য।

কোভিড-১৯ বিষয়ে কারিগরি পরামর্শক কমিটির একজন সদস্য, ভাইরোলজিস্ট ডা. নজরুল ইসলাম বলছেন, স্থলবন্দরগুলোতেও কঠোর ব্যবস্থা চালু করার কথা। তিনি বলছেন, "এটা যদি আমরা ঠেকাতে চাই তাহলে বিমানবন্দরে যা ব্যবস্থা, ল্যান্ড পোর্ট, সি পোর্ট সব জায়গায় একই ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা গতবার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ঠেকানোর জন্য বর্ডারে যে ব্যবস্থা নিয়েছিলাম, সেটা ডেল্টার বাংলাদেশে প্রবেশে দেরি করিয়েছিল, তবে ঠেকাতে পারেনি।

''মিনিস্টার সাহেব নিজেই বিমানবন্দরে কী করা হবে সেটা বলেছেন। কিন্তু ল্যান্ড পোর্টের কথা তিনি কিছু বলেননি। সেখানেও এটা করা দরকার। খুব কঠোর ব্যবস্থা নেয়া দরকার," বলেছেন ডা. নজরুল ইসলাম।

বিশ্বব্যাপী ৪০ টির মতো দেশে করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন শনাক্ত হলেও, বাংলাদেশ আফ্রিকার শুধু যে ৭টি দেশ থেকে আসা যাত্রীদের কোয়ারেন্টিন করার কথা বলছে, সেটিই বা কতটা হচ্ছে এ প্রশ্নে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর ডা. রোবেদ আমিন বিবিসি বাংলাকে বলেন, সীমান্তে পরীক্ষার ব্যবস্থা এখনো শুরু হয়নি।
তিনি জানিয়েছেন, ‘নির্দিষ্ট কিছু হোটেল রয়েছে যেখানে বিমানে আসা যাত্রীদের কোয়ারেন্টিন করা হচ্ছে। যেসব দেশ থেকে আসবে, সেখানে বলা আছে যে, টিকেট করার সময় হোটেল বুকিং-এর কাগজ দেখাতে হবে, যা এয়ারপোর্টে দেখাতে হবে। তা নাহলে তারা ক্লিয়ারেন্স পাবে না। এয়ারপোর্টে ছয়টা আরটিপিসিআর মেশিন আছে, তেমনি সীমান্তেও আরটিপিসিআর মেশিন দিয়ে রাখবে। সীমান্তে যদি আরটিপিসিআরের ব্যবস্থা না করা যায় তাহলে র‍্যাপিড টেস্টের ব্যবস্থা দেয়া থাকবে। অ্যান্টিবডি টেস্ট করা হবে।"

যে কারণে সাবধানতার কথা বলা হচ্ছে
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টকে অতি সংক্রমণশীল এবং সারা বিশ্বে এই ভ্যারিয়েন্ট প্রাধান্য বিস্তার করতে পারে, কিন্তু এর লক্ষণগুলো খুবই মৃদু। সংস্থাটি বলছে আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ার কারণ নেই, কিন্তু একই সাথে সকল দেশকে প্রস্তুত ও সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

ব্র্যাকের জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অফ পাবলিক হেলথের শিক্ষক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আফসানা কাওসার বলছেন, ওমিক্রন যে আবারও ধরন বদলে শক্তিশালী লক্ষণ সৃষ্টিতে সক্ষম হবে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই একে হালকাভাবে নেয়ার কোনো সুযোগ নেই।

"ধরন পরিবর্তন করেই তো ওমিক্রন হয়েছে। গবেষকরা যদিও বলছে যে, এর লক্ষণ মৃদু। এরপরে আর একটা ধরন হলে তার প্রভাব যে আরও কমে যাবে, তেমনটা বলা যাচ্ছে না। এই মুহূর্তে সেটা বলা কঠিন।"

সকল দেশের যাত্রীদের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে প্রবেশের পরপর আবারও আরটিপিসিআর পরীক্ষা করার পরামর্শ তিনি দিচ্ছেন । "যখন কেউ প্লেনে ওঠে তখন তাকে একবার টেস্ট করাতে হয়। কিন্তু দেশেও একটা পরীক্ষা করানো বাধ্যতামূলক করা উচিৎ। টেস্ট করার পরতো সে ঘোরাঘুরি করে। সেভাবে সে আবার ইনফেকটেড হতে পারে। সে প্লেনেও আরও দশটা মানুষকে ইনফেকটেড করতে পারে। সেজন্যে বাংলাদেশে ঢোকার পর আর একবার টেস্ট করা দরকার।"
তিনি আরো বলছেন, "বাংলাদেশে ঢোকা যাত্রীদের পরিবর্তী ১৪ দিন শারীরিক অবস্থার খোঁজ নেয়া, তাদের কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং এই ধরনের ''ফলো আপ'' করা দরকার। কিন্তু বাংলাদেশে সেটা একেবারেই গড়ে ওঠেনি।"

সূত্র : বিবিসি বাংলা


আরো সংবাদ



premium cement