১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পঞ্চগড়ে কেন করোনা সংক্রমণের হার বেশি?

- ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশে গত কয়েকমাসের তুলনায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেশ কমেছে। জুন-জুলাই মাসে শনাক্তের হার ২০ শতাংশ পার হলেও গত সোমবার তা নেমে এসেছে ৫.৬৭ শতাংশে। বাংলাদেশে মোট শনাক্ত হয়েছেন ১৫ লাখ ৪৪ হাজারের বেশি মানুষ।

বেশিরভাগ জেলায় নতুন আক্রান্তের সংখ্যা কমতে থাকলেও দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার অনেক বেড়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো গত এক সপ্তাহের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এই জেলায় করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

এ জেলায় এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন তিন হাজার ৭১৮ জন। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৮৮ জনের।

এই জেলায় ১০ লাখ মানুষের বাস। এখন পর্যন্ত এখানে মোট পরীক্ষা হয়েছে মাত্র ১১ হাজার ৭৩টি।

কেন পঞ্চগড়ে এতো বেশি সংক্রমণ ঝুঁকি?
পঞ্চগড় জেলার একজন বাসিন্দা শারমিন আক্তার মৌরি বলছেন, উত্তরবঙ্গের কম উন্নত এই জেলায় মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সতর্কতার প্রচণ্ড অভাব।

তিনি বলছিলেন, ‘বাসা থেকে বাইরে বের হলে কারো মধ্যে আর কোনো স্বাস্থ্য সচেতনতা দেখি না। বেশিরভাগ মানুষের মুখে মাস্ক নেই। আমি মাস্ক পরে বের হলে সবাই উল্টো তাকিয়ে থাকে। হাসপাতাল, বাজারঘাট, কোথাও - করোনাভাইরাস নিয়ে তাদের কোনো চিন্তা আছে বলে মনে হয় না।’

পঞ্চগড়ের সিভিল সার্জন ডা: মো: ফজলুর রহমান বলছেন, ‘করোনাভাইরাসের ওয়েবটা অন্যান্য জেলার চেয়ে আমাদের এখানে অনেক পরে আসছে। পরে আসছে বলে হয়তো পরে যাচ্ছে। যখন সারাদেশে বিধিনিষেধ শিথিল করা হলো, সবকিছু স্বাভাবিক করে দেয়া হলো, তখন পঞ্চগড়ের মানুষ একদমই স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। এসব কারণে সংক্রমণ বাড়তে পারে।

পঞ্চগড়েই রয়েছে একটি সীমান্ত বন্দর বাংলাবান্ধা। সোমবার পর্যন্ত যাত্রী চলাচল বন্ধ থাকলেও এই বন্দর দিয়ে পণ্য পরিবহন করা হতো। তবে সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় এই সংক্রমণ বেড়েছে বলে তিনি মনে করেন না। যুক্তি হিসেবে তিনি বলছেন, রোববার পর্যন্ত এই জেলার সীমান্ত বন্দর বন্ধই ছিল, সোমবার থেকে সেটি চালু হয়েছে।

সিভিল সার্জন ডা: মো: ফজলুর রহমান জানাচ্ছেন, টেস্ট কম হচ্ছে, ফলে সংক্রমণের হার বেশি দেখাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে জেলায় বা হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা অনেক কম।

তিনি বলেন, মানুষ শেষ মুহূর্তে টেস্ট করতে আসছে, যখন খুব বেশি সমস্যা দেখছে, তখন টেস্ট করতে আসছে। তখন পজিটিভ রোগী পাওয়া যাচ্ছে। তবে আমাদের জেলায় ৫০ থেকে ৬০ জন করে রোগী ভর্তি থাকতো। এখন আমাদের হাসপাতালে ভর্তি আছেন সাত থেকে আটজন।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ দল পঞ্চগড়ে
আশপাশের জেলায় যেখানে সংক্রমণের হার কমে আসছে, তখন উত্তরের সীমান্তবর্তী এই জেলায় উচ্চহারে সংক্রমণ ভাবিয়ে তুলেছে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।

এর কারণ অনুসন্ধানে বাংলাদেশের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এএসএম আলমগীর বলছেন, তিন-চারটি জেলায় আমরা এ রকম দেখতে পেয়েছি। মুন্সীগঞ্জ, পঞ্চগড় ও কুষ্টিয়ায়। এসব জেলায় আমাদের টিম কাজ করছে।

তিনি বলছেন, কেন এই জেলায় সংক্রমণের হার বেশি, সেটি বোঝার জন্য স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একটি দল সেখানে পাঠানো হয়েছে।

সিভিল সার্জন মো: ফজলুর রহমান জানাচ্ছেন, গত কয়েক দিনে আবার সংক্রমণের হার কমতে শুরু করেছে। সচেতনতা আর সুরক্ষার বিকল্প নেই। বাংলাদেশে এর আগেও অন্যান্য জেলার তুলনায় নারায়ণগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরা ইত্যাদি জেলায় করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের হার দেখা গেছে। সে সময় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা সচেতনতার অভাবের পাশাপাশি কোনো কোনো জেলা সীমান্তবর্তী হওয়ার কারণে এবং ভারতে মানুষজনের চলাচলকে দায়ি করেছিলেন। সেসব জেলায় ভারতীয় ভ্যারিয়্যান্টও পাওয়া গিয়েছিল।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেহেতু বাংলাদেশে এখনো করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যায়নি, ফলে বিভিন্ন স্থানে সংক্রমণ বেশি কম হওয়ার ঝুঁকি থাকে। সেজন্য প্রত্যেকের ব্যক্তিগতভাবে সতর্ক হওয়ার বিকল্প নেই।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও ভাইরোলজিস্ট নুসরাত সুলতানা লিমা বলছেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কিন্তু এখনো পাঁচের নিচে আসেনি। অন্তত চার সপ্তাহ পাঁচের নিচে না থাকলে আমরা বলতে পারবো না যে, দ্বিতীয় ওয়েব নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এখন বিভিন্ন জেলায় বাড়তে দেখা যাচ্ছে, ঢাকাতেও হয়তো বাড়তে পারে।

তিনি বলেন, টিকা কিন্তু করোনাভাইরাস পুরোপুরি ঠেকাতে পারবে না। টিকা নেয়ার পরেও অনেককে আমরা আক্রান্ত হতে দেখছি। ফলে এর একটাই বিকল্প আছে, স্বাস্থ্য সতর্কতা মেনে চলা, নিজে সচেতন হওয়া।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement