২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

এয়ারলাইন্সগুলো প্রতি মাসে শত কোটি টাকা আয় থেকে বঞ্চিত

বিমান ও ইউএস-বাংলা ফ্লাইট চালালেও নভোএয়ার পুরোই বন্ধ
- ছবি - সংগৃহীত

করোনা মহামারী শুরুর পর থেকেই দেশী-বিদেশী এয়ারলাইন্সগুলো লোকসান গুনতে শুরু করেছে। দিন দিন প্রতিটা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট সংখ্যা কমতে থাকায় আর্থিক সঙ্কটও তাদের প্রকট হতে শুরু করেছে। তারপরও প্রতিষ্ঠান বাঁচানোর লক্ষ্যে এখনো দেশী কোন এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ তাদের কর্মী ছাঁটাই করেনি। এর মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও বেসরকারি বিমান পরিবহন সংস্থা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স স্বল্পসংখ্যক রুটে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কম ফ্লাইট পরিচালনা করে টিকে থাকলেও বেসরকারি বিমান সংস্থা নভোএয়ারের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সব রুটের ফ্লাইট চলাচল বন্ধ রয়েছে।

এয়ারলাইন্স ও এভিয়েশন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার ভেতরে পরিস্থিতি যাই হোক, এখন পর্যন্ত এটুকু বলা যেতে পারে, ‘একটি এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠান প্রতি মাসে কমপক্ষে শত কোটি টাকার আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাহলে কর্মচারীদের কিভাবে বেতন দেয়া হবে? তারপরও তারা টিকে থাকার প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে অভ্যন্তরীণ সব রুট এবং আন্তর্জাতিক রুটগুলোতে যদি নিয়মিত ফ্লাইট চালানোর সুযোগ দেয়া হতো তাহলে এয়ারলাইন্স সেক্টর ঘুরে দাঁড়াতে পারত বলে তারা মনে করছেন। সেই সুযোগটাই তারা সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে আশা করছেন।

গত সোমবার রাতে বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের জেনারেল ম্যানেজার (জনসংযোগ) মোঃ কামরুল ইসলাম বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে এয়ারলাইন্স ব্যবসার লাভ-ক্ষতি সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তরে নয়া দিগন্তকে বলেন, একেক এয়ারলাইন্সের ক্ষেত্রে এটা একেক রকম। একেকভাবে দেয়। আসলে এয়ারলাইন্স ব্যবসার ক্ষতি নিরূপণ করা খুবই ডিফিকাল্ট ব্যাপার। আমাদের প্রতি মাসে অ্যাভারেজে প্রায় শত কোটি টাকার আয় থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে এই দেড় বছরে অনেক ক্ষতি হয়েছে।

লোকসানের পরিসংখ্যান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স যেভাবে পরিসংখ্যান দিয়ে থাকেন, সেভাবে তো আমাদের দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের রেগুলার যে ইনকাম ছিল, ফ্লাইট যেহেতু বন্ধ হয়ে গেছে, সেই হিসাবে আমার কোম্পানি শত কোটি টাকার আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এটা পুরোটা তো আর লোকসান হয়েছে বলা যাবে না।

এই মুহূর্তে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের কয়টা রুট বন্ধ রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অলমোস্ট সব রুটই তো বন্ধ। ডমেস্টিক পুরোটাই বন্ধ। ইন্টারন্যাশনাল প্যাজেঞ্জারদের জন্য কয়েকটা ফ্লাইট চলে। এটাতো যাত্রীদের শুধু সার্ভিস দেয়া। এখানে কোন বিজনেস নেই।

তিনি বলেন, এর মধ্যে আন্তর্জাতিক রুটে কিছু প্যাসেঞ্জার (২০-২৫ জন) যায়। আসার সময় আসে ৩০ জন। এগুলো দিয়ে কী ব্যবসা হয় নাকি ? এই মুহূর্তে কাতারের দোহা, মাস্কাট, দুবাই ও গুয়াংজু রুটে ফ্লাইট চলছে। গুয়াংজুতে একটি ফ্লাইট চলছে, কুয়ালালামপুর থেকে শুধু প্যাসেঞ্জার আসতে পারে।

ডমেস্টিকে ট্রানজিট যাত্রী নিয়ে পাঁচটি ফ্লাইট চলছে জানিয়ে কামরুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা কোনো প্রণোদনার কথা বলব না। আমাদেরকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ফ্লাইট পরিচালনার শুধু সুযোগ করে দেয়া হোক। এছাড়া আর বিকল্প কোনো পথ খোলা নেই এ ইন্ডাস্ট্রিজকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য। তিনি বলেন, বিদেশীদের অনেক রেসট্রিকশন আছে। এখানে গভর্মেন্টের কোনো হাত নেই (বাই লেটারার অ্যাগ্রিমেন্ট), তবে ডমেস্টিকে তো সরকারের সংশ্লিষ্টদের ডিশিসন দেয়ার ক্ষমতা আছে।

অপর এক প্রশ্নের উত্তরে মোঃ কামরুল ইসলাম বলেন, আমরা তো গত বছরের জুন থেকেই করোনার মধ্যেই ফ্লাইট অপারেট করেছি। গভর্মেন্টের নির্দেশনাগুলো আমরা মাথায় রেখেই ফ্লাইট পরিচালনা করেছি। এক্ষেত্রে প্যাসেঞ্জাররাও সেগুলো মেইনটেন করেছেন, এয়ারলাইন্স কোম্পানিগুলোও মেইনটেন করেছে। এয়ারপোর্ট অথরিটিও মেইনটেন করেছে।

গতকাল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একজন কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে বিমানের টিকিটের দাম বাড়তি নেয়া প্রসঙ্গে বলেন, সপ্তাহে একটি রুটে একটা ফ্লাইট চলছে। এর জন্য কিন্তু একটা স্টেশন ওপেন রাখতে হচ্ছে। ওয়ানওয়ে প্যাসেঞ্জার পাওয়া যায়। রিটার্ন ফ্লাইটে জিরো প্যাসেঞ্জার হলে তখন কী হবে? এর সাথে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনের অর্থটা জড়িত। সেটি কোত্থেকে আসবে। বিমানে বর্তমানে পাঁচ হাজারের বেশি স্টাফ রয়েছে। তাদের বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জেদ্দা, রিয়াদ দাম্মাম, লন্ডন, মাস্কাট, আবুধাবি, কাতারসহ মোটামুটি সব রুটেই ফ্লাইট চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। ডমেস্টিকেও ট্রানজিট প্যাসেঞ্জার নিয়ে ফ্লাইট চলছে। তবে বেসরকারি এয়ারলাইন্স নভোএয়ারের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সব রুটের ফ্লাইটই বন্ধ হয়ে রয়েছে।

গতকাল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল করোনার মধ্যে বিমানের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে নয়া দিগন্তকে বলেন, প্রত্যেকটা এভিয়েশন সেক্টরের মতো বিমান এভিয়েশন সেক্টরও একই। ব্যতিক্রম বলে কিছু নেই। তবে আমরা এখন পর্যন্ত সাময়িকভাবে ব্রেক ইভেন্ট পয়েন্টের নিচে অবস্থান করছি না, এইটুকু বলা যায়।

বিমান ম্যানেজমেন্টের করণীয় সম্পর্কিত অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা আমাদের সেফটি কর্নার থেকে, ফিন্যান্সসিয়াল-এনভায়রনমেন্ট দিক থেকে যতগুলো সাইট রয়েছে তার প্রত্যেকটি সাইট কাভারেজ দেয়ার চেষ্টা করছি প্রাণান্তকরভাবে এবং সবারই ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়। একেবারে টপ টু বটম।

উল্লেখ্য, বিশ্বের বৃহৎ এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠানগুলো করোনায় অর্থসঙ্কটে পড়ে কর্মচারী ছাঁটাই করতে বাধ্য হয়েছে। এর মধ্যে ভারতীয় বিমানবন্দরগুলো ৬৩ শতাংশ যাত্রী হারিয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে তাদের লোকসান দাঁড়িয়েছে সাত হাজার কোটি রুপি। সম্প্রতি বিদেশী একটি সংবাদমাধ্যমের উদ্ধৃতি দিয়ে গণমাধ্যমে এ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।


আরো সংবাদ



premium cement