২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

করোনা রোগীতে ঠাসা ঢামেক : চিকিৎসার জন্য হাহাকার

করোনা রোগীতে ঠাসা ঢামেক : চিকিৎসার জন্য হাহাকার - ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে করোনা রোগী নিয়ে হিমশিম কর্তৃপক্ষের। দূর-দূরান্ত থেকে করোনা রোগী এসে বেশির ভাগ রোগীকে ফেরত যেতে হচ্ছে। হাসপাতালে সিটের জন্য এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছে তাদের স্বজনরা। পথে পথে রোগী নিয়ে স্বজনদের ভোগান্তির শেষ নেই। সাধারণ সিট নিয়ে এত ভোগান্তি। আর আইসিইউ তো আরো পরের ব্যাপার। আইসিইউতে একটি সিটের জন্য ২০০’র বেশি রোগীর সিরিয়াল। তবুও রোগীর স্বজনরা আশায় থাকে যদি কখনো সিটটি পাওয়া যায়। আবার অনেকে সিটের জন্য বিভিন্নভাবে তদবির করছেন। তবুও অনেক সময় সিট মিলে না। যেন সোনার হরিণ!

ঢাকা দোহার নবাবগঞ্জ থেকে আবুল হাসেম নামের একজন করোনা রোগীকে তার ছেলে রাকিব আহমেদ গত শনিবার হাসপাতালে এনে অনেক তদবিরের পর করোনা ইউনিটে ভর্তি করেন। চিকিৎসকরা গতকাল সোমবার সকালে রোগীকে আইসিইউতে নেয়ার জন্য ছেলেকে বলেন। সে হাসপাতালের আইসিইউতে গিয়ে সিরিয়াল দেন তার রোগীর সিরিয়াল পড়েছে ২২৩ জনের পরে। তিনি দুঃখ করে বলেন, এই সিরিয়াল আসতে আসতে আমার রোগী বাঁচবে কী না একমাত্র আল্লাহই জানেন। তিনি আরো বলেন, আমাদের মতো গরিব অসহায় মানুষ বাইরের আইসিইউ খরচ বইতে পারমো না বলে সেখানে যেতে পারছি না। এ জন্য গরিব অসহায় রোগীরা সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ পাওয়ার জন্য দিনের পর দিন অপেক্ষা করেন। আবার দেখা যায় তারাই বেশি মারা যাচ্ছেন। কী আর বলবো এই হলো আমাদের ভাগ্য। হাসপাতালে রোগীদের এমন করুণ অবস্থা দেখে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

হাসপাতালের একটি সূত্রে জানা গেছে, এখন ৮০ ভাগ রোগী বিভিন্ন জেলা থেকে ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসে। আর ২০ ভাগ রোগী রাজধানী ও আশপাশ থেকে এসেছেন। এদিকে ঢামেক মর্গে কর্তব্যরত ওয়ার্ড মাস্টার আব্দুল গফুর জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মারা গেছেন ১৯ জন। তিনি বলেন, হাসপাতালে একদিক দিয়ে লাশ বের করা হচ্ছে, আরেক দিক দিয়ে রোগী ঢোকানো হচ্ছে। কেউ আবার আইসিইউর জন্য দিনের পর দিন অপেক্ষা করছেন। চিকিৎসক যখন আইসিইউর কথা বলেন তখন রোগীর স্বজনদের মাথা ঠিক থাকে না। ছুটছেন এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে। অনেকেই আবার সিট পাওয়ার আসায় অপেক্ষা করছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। অন্য দিকে রোগীর স্বজনরা অপেক্ষা করছেন কেউ রিলিজ নিয়ে চলে গেলে সেই সিটটা যদি পায়। এই নিয়ে স্বজনদের আহাজারি। গতকাল দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের জরুরি বিভাগ ও ওয়ার্ডগুলোতে গিয়ে এমনই চিত্র দেখা গেছে।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে দিয়ে বের করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল একটি লাশ। স্বজনদের কান্নায় ভারী পরিবেশ। পরে মৃতের স্বজন রফিকুলের কাছে জানা গেল তার নাম খালিকুজ্জান (৬৬)। তিনি নরসিংদী জেলার আড়াই হাজার এলাকা থেকে করোনা আক্রান্ত হয়ে গত সপ্তাহে ভর্তি হন। কামরাঙ্গীরচর খলিফাঘাট এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম জানান। তার মেয়ে জান্নাত আক্তার (৩০) দুই সপ্তাহ ধরে জ্বরে ভুগছেন। আবার শুরু হয়েছে শ্বাসকষ্ট। স্থানীয়ভাবে অনেক ডাক্তার দেখানো হয়। কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে না। পরে তাকে মিটফোর্ড হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে দেখেন তার করোনা। পরে গত শনিবার বিকেলে ঢামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটে নিয়ে আসেন। এখানে চিকিৎসকরা তাকে ভর্তি করানোর পর অক্সিজেন দিয়ে ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হয়।

করোনা ইউনিটের জরুরি বিভাগে ভর্তি রেজিস্টারে কর্তব্যরত এক সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দেড়শতাধিক রোগী হাসপাতালে আসেন এর মধ্যে যেসব রোগীর অবস্থা বেশি খারাপ তাদেরকে ভর্তি করা হয়। এ সময়ে ৩২ জনকে ভর্তি করা হয়েছে।

করোনা ইউনিটের ওয়ার্ড মাস্টার রিয়াজউদ্দিন বলেন, তাদের এখানে কোনো সিট ফাঁকা নেই, কিন্তু রোগীর চাপ খুবই বেশি। তাই হাসপাতাল পরিচালকের নির্দেশে অতিরিক্ত সিট বসিয়ে অনেক রোগী ভর্তি করা হচ্ছে। আবার অনেক রোগীকে ফ্লোরে সিট দিয়ে রাখা হচ্ছে। হাসপাতালের করোনা ইউনিটে সাড়ে ৭০০ সিট আছে। আর রোগী বর্তমানে সাড়ে ৮০০।
তিনি আরো জানান, রোগীদের এই করুণ অবস্থা দেখে আমাদেরও খারাপ লাগে কিন্তু আমরা কিছু করতে চেষ্টা করেও পারছি না। আমরা অসহায়।

করোনা ইউনিটের নার্স খাদিজা আক্তার জানান, যেসব রোগীর এক থেকে দুই লিটার অক্সিজেন প্রয়োজন, তাদের সিলিন্ডার দিয়ে অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি যাদের বেশি লাগছে তাদের সেন্ট্রাল অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে। তারপর যাদের অবস্থা বেশি খারাপ হয়ে যায়, তাদের হাইফ্লো মেশিনের মাধ্যমে দেয়া হয়।

হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক আশরাফুল আলম জানান, কিছু দিন ধরে কোনো বেড ফাঁকা থাকছে না। একটি বেড ফাঁকা হতেই আরেকজন রোগী ভর্তি হচ্ছেন।’ রোগীরা অপেক্ষায় থাকেন কখন বেড খালি হবে। আমাদেরকে বলতে হয় না। তারাই বেড খালির খবর নিয়ে আসেন। আমরা অপারগ হয়ে রোগীদেরকে অন্য হাসপাতালে যেতে অনুরোধ করি। বেড খালি থাকলে রোগী ভর্তি নেয়া হয়।

রোগীর স্বজনরা আইসিইউ না পাওয়ার বিষয়ে অভিযোগ করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা এখন সোনার হরিণ। এখানে তো সিরিয়াল লেগেই থাকে। একটি সিট ফাঁকা হতেই সিরিয়াল দেয়া রোগীদের স্থানান্তরিত করা হয়। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। খারাপ রোগীদের জন্য সিটের বাইরেও অনেক রোগী ভর্তি দিয়েছি।


আরো সংবাদ



premium cement