২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

‘কঠোর লকডাউনে কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ’

শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজার সার্ক ফোয়ারা চত্বর থেকে তোলা - ছবি- নয়া দিগন্ত

দেশে কঠোর লকডাউন চলছে। শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শুরু হওয়া এই লকডাউনকে ‘কঠোর’ থেকে ‘কঠোরতম’ বিধিনিষেধও বলা হচ্ছে। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, এই বিধিনিষেধ চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। কঠোরতম এই বিধিনিষেধ শুরুর পর রাজধানীসহ সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বেশ তৎপর রয়েছে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে পুলিশের চেক পোস্ট। পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব ও সেনাবাহিনীর টহল গাড়িও রয়েছে। রাজধানীসহ সারাদেশে গণপরিবহন বন্ধ। একইসাথে শপিংমলসহ বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। রাস্তায় খুব প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বের হচ্ছে না। তবে যারা প্রয়োজনে বের হচ্ছেন তাদের ভোগান্তির সীমা নেই।

শুক্রবার সকাল থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ঘুরে অনেকের সাথে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।

রাজধানীতে সীমাহীন ভোগান্তি
মাসুমা আক্তার বিউটি (৪৫)। থাকেন রাজধানীর মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায়। জুনের প্রথম দিকে ৭ বছরের মেয়ে রাফেয়াকে নিয়ে পটুয়াখালী গ্রামের বাড়িতে যান। যখন ঢাকায় ফেরবেন তখনই সারাদেশে কঠোর বিধিনিষেধ শুরু হয়। দুই সপ্তাহ এই বিধিনিষেধ শেষে ঈদুল আজহার আগমন। তাই বাবার বাড়িতে ঈদ উদযাপন করে বিউটি পটুয়াখালী থেকে বৃহস্পতিবার লঞ্চে ওঠেন মেয়েকে নিয়ে। শুক্রবার সকালে ঢাকার সদরঘাটে নেমে ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে মহাবিপদে পড়েন বিউটি। গণপরিবহন বন্ধ। কিভাবে আসবেন মোহাম্মদপুর? শেষ পর্যন্ত একটি রিকশায় বাসায় পৌঁছান তিনি।

তবে বিউটি রিকশা পেলেও শুক্রবার সকালে যারা লঞ্চে আর বাসে ঢাকায় পৌঁছেছেন সবার সেই সুযোগ হয়নি। লাখ লাখ মানুষ এদিন সকালে রাজধানীতে পৌঁছান। কিন্তু এত রিকশা বা ভ্যান ছিল না সদরঘাট আর গুলিস্তানে। ফলে রিকশাওয়ালা আর ভ্যানওয়ালারা যার কাছ থেকে যা পেরেছেন ভাড়া আদায় করেছেন। আর রিকশা-ভ্যান কিছুই না পেয়ে বেশিরভাগ মানুষ পায়ে হেঁটে বাসার উদ্দেশে রওনা হন।

সকাল সাড়ে ৮টার দিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজার সার্ক ফোয়ারা চেক পোস্টে দেখা যায়, রিকশা-ভ্যানে যারা উঠেছেন তাদেরকেও নামিয়ে দিচ্ছে পুলিশ। চেক পোস্ট থেকে রিকশা ও ভ্যান ঘুরিয়ে দেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তারা কেউ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

ঢাকায় ফেরাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হয়েছেন নারী ও শিশুরা। দীর্ঘ পথ হেঁটে নারী-শিশুদের পাশাপাশি তরুণরাও অনেকেই ক্লান্ত। তাই রাস্তায় বসেই কিছুটা সময় বিশ্রাম করে নিতে দেখা গেছে তাদেরকে। বিশ্রাম শেষে ফের গন্তব্যের উদ্দেশে হাঁটতে শুরু করেন তারা।

রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মগবাজার, মালিবাগ, মৌচাক, কাকরাইল, বাংলামটর, পান্থপথ, ধানমন্ডি ও মিরপুরসহ প্রতিটি সড়কে শুক্রবার সকাল থেকে এমন ভোগান্তির দৃশ্য দেখা গেছে।

সকালে কারওয়ান বাজারের সার্ক ফোয়ারা চত্বরে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের পক্ষ থেকে মানুষের ভোগান্তির চিত্র ধারণ করা হচ্ছিল। তখন মাথায় ভারী বোস্তা নিয়ে হাঁটতে থাকা একজন বলেন, ‘ভাই ভিডিও করে লাভ কী? তার চেয়ে সরকারকে বলেন, যেন গাড়ি চালু করে দেয়।’ তখন পাশ থেকে আরেকজন বলেন, ‘গাড়ি বন্ধ। জেনেও আসছেন কেন?’ জবাব ছিল, ‘ঢাকা না এসে আমাদের কি উপায় আছে?’

‘কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ’
গণপরিবহন বন্ধ থাকায় রাজধানীতে রিকশাওয়ালাদের কদর বেড়েছে। বেড়েছে ভাড়াও। অনেকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, করোনার শুরুতে মানুষ রিকশায় চড়তো না খুব একটা। ফলে তখন রিকশাওয়ালাদের আয়-রোজগার বেশ কমে যায়। কিন্তু কঠোর বিধিনিষেধের সময় ব্যক্তিগত গাড়িও নিষিদ্ধ থাকায় যারা রাস্তায় বের হচ্ছেন রিকশাই তারা একমাত্র বাহন হিসেবে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। এই সুযোগে রিকশার ভাড়া বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে কয়েকগুণ। বিশেষ করে শুক্রবার কঠোরতম বিধিনিষেধের প্রথম দিন সকালে এমনটাই অভিযোগ করেছেন অনেকে। তারা বলছেন, ৮০-১০০ টাকার পথে এখন ভাড়া চাওয়া হচ্ছে ৫০০-৬০০ টাকা পর্যন্ত। তাদের মন্তব্য, ‘কারো পৌষ মাস আর কারো সর্বোনাশ’।

কঠোর বিধিনিষেধের কারণে গণপরিবহন বন্ধ। আর ব্যক্তিগত গাড়িও সীমিত আকারে চলছে। ফলে রাজধানীর রাস্তাঘাট বেশ ফাঁকা। এতে জরুরি সেবায় জড়িতরা গাড়ি নিয়ে বের হয়ে বেশ ফুর ফুরে মেজাজে ছিলেন। কোথাও যানজট নেই। পুলিশের সিগ্নালেও দাঁড়াতে হচ্ছে না। ফলে তাদের জন্য এমন পরিবেশ বেশ ভালোই লাগছে।

রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি করেন সাজেদা আক্তার মনি। থাকেন মোহাম্মদপুর এলাকায়। মোটরবাইকেলে স্বামীর সাথে অফিসে যেতে মনির স্বাভাবিক অবস্থায় সময় লাগে ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট। আর লকডাউন থাকলে তিনি ১৫-১৮ মিনিটেই অফিসে পৌঁছাতে পারেন। তার বক্তব্য হচ্ছে, ‘লকডাউনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয় না। এটা ভালোই লাগে।’


আরো সংবাদ



premium cement