২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

অরক্ষিত হয়ে যাবেন সবাই

করোনাভাইরাস - ছবি : সংগৃহীত

দেশের ৭০ শতাংশ মানুষকে করোনার (কোভিড-১৯) টিকার আওতায় না আনতে পারলে যারা ইতোমধ্যে টিকা নিয়েছেন এক সময় তাদের অরক্ষিত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। করোনার টিকা নিলে শরীরে ভাইরাসটির বিরুদ্ধে কত দিন প্রতিরোধ ব্যবস্থা টিকে থাকে এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো গবেষণা নেই।

কোনো কোনো গবেষণায় বলা হচ্ছে, প্রতিরোধ ব্যবস্থা টিকে থাকে ৬ মাস, আবার কোনো কোনো গবেষণায় বলা হচ্ছে এক বছর টিকা থাকতে পারে। কিন্তু এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত সর্বসম্মত কোনো সিদ্ধান্তে বিজ্ঞানীরা পৌঁছতে পারেননি। তবে সাধারণভাবে বলা হচ্ছে, করোনার টিকা প্রতিরোধ ক্ষমতা চিরদিনের জন্য নয়। এটা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করবে এবং একটা সময় মানুষকে আর সুরক্ষা দিতে পারবে না। ফলে একদিন টিকাপ্রাপ্ত ব্যক্তিটিও আবার করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন।

জনস্বাস্থ্যবিদ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা: মোজাহেরুল হক বলেছেন, করোনা টিকার মেয়াদ এক বছর বা তার চেয়ে বেশি দিনের হবে এমন সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ নেই। তবে এটা ধরে নেয়া উচিত, সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে টিকার প্রতিরোধ ক্ষমতাও ধীরে ধীরে কমে আসবে। ফলে জনসংখ্যার ৭০ শতাংশকে ২ বছরের মধ্যে টিকা দিতে না পারলে আগে যারা টিকা পেয়েছেন তারাও অরক্ষিত হয়ে যাবেন।

তিনি বলেন, ভাইরাসটি সম্বন্ধে আমার যতটুকু পড়াশোনা আছে তা থেকে বলতে পারি, ১ থেকে ২ বছরের মধ্যে হার্ড ইমিউনিটি (৭০ শতাংশের মধ্যে প্রতিরোধ ব্যবস্থা) গড়ে তুলতে না পারলে ১ বছর বা ২ বছর বা তার আগে যারা টিকা নিয়েছেন তাদের হয়তো একটি বুস্টার ডোজ দিতে হতে পারে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে সাড়ে ১২ কোটি মানুষকে যেভাবেই হোক ২৫ কোটি ডোজ টিকা দিতে হবে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। এটা হতে পারে ১ বছর অথবা ২ বছরের মধ্যে। এই হিসাবে প্রতি মাসে কমপক্ষে ১ কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনতে হবে।’

কিন্তু বাংলাদেশে গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত মাত্র ১ কোটি ১৪ লাখ ডোজ টিকা এসেছে। এর মধ্যে অ্যাস্ট্রাজেনেকার (ভারতের সেরাম থেকে প্রাপ্ত) টিকা পাওয়া গেছে ১ কোটি ৩ লাখ ডোজ, ফাইজারের ১ লাখ ডোজ এবং সিনোফার্মের ১০ লাখ ডোজ। আগামী জুলাই মাসে হয়তো আরো ১০ লাখ ডোজ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা আসতে পারে। এর বাইরে এখন পর্যন্ত অন্য কোনো টিকা আসার মতো ব্যবস্থা সরকার করতে পারেনি।

চীনের সিনোফার্ম ও রাশিয়ার গামালিয়া ইনস্টিটিউটের স্পুটনিক-ভি টিকার ব্যাপারে আলোচনা চলছে। এখন পর্যন্ত আরো টিকা আসার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই।

এ ব্যাপারে অধ্যাপক মোজাহেরুল হক বলেন, আমাদের দেশে পাউডার এনে অথবা বাল্ক এনে এখানে ভায়াল করতে পারে। এই প্রসেসটি খুব তাড়াতাড়ি করা সম্ভব। যেভাবেই হোক, সরকার যত তাড়াতাড়ি টিকা এনে মানুষকে দিতে পারে তত তাড়াতাড়ি মানুষকে সুরক্ষিত করা যাবে।

ইতোমধ্যে টিকা তৈরির মূল কোম্পানির সাথে চুক্তি করে ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর টিকা উৎপাদন করছে। বাংলাদেশ সে দেশগুলোর সাথেও যোগাযোগ করে টিকা নিয়ে আসতে পারে। বিশেষ করে সিঙ্গাপুর হতে পারে বাংলাদেশের টিকা প্রাপ্তির অন্যতম স্থান। কারণ দেশটির লোকসংখ্যা একেবারে কম। তারা সহজেই টিকা রফতানি করতে পারবে।

হার্ড ইমিউনিটি কী : অধ্যাপক মোজাহেরুল হক বলেন, ইংরেজি হার্ড অর্থ ভেড়ার পাল। ইমিউনিটি হচ্ছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। তিনি বলেন, ভেড়ার পালকে সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে টিকা দেয়া হতো। ১০০টি ভেড়ার মধ্যে যদি ৮০টিকে টিকা দেয়া হতো তাহলে ওই ভেড়ার পাল আর সংক্রমিত হতো না। সবগুলোকে টিকা দিতে না পারলেও সবার মধ্যে এক ধরনের সুরক্ষা বলয় তৈরি হতো। এটাই হচ্ছে হার্ড ইমিউনিটি। মানুষের ক্ষেত্রে বলা যায়, একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর মধ্যে নির্দিষ্ট অনুপাতে টিকা দেয়া হলে ওই জনগোষ্ঠীতে আর সংক্রমণ হয় না। একেই বলে হার্ড ইমিউনিটি।

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ভ্যাকসিন নলেজ প্রজেক্টের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, একটি এলাকার বেশির ভাগ মানুষকে কোনো একটি সংক্রামক রোগের প্রতিষেধক দেয়া হলে ওই এলাকায় ওই রোগটি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে না। ওই এলাকায় সংক্রমিত হওয়ার মতো মানুষ থাকে না। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, একটি সম্প্রদায়ের কারো মধ্যে হাম দেখা দিলে সে সম্প্রদায়ের বেশির ভাগ মানুষের যদি টিকা দেয়া থাকে তাহলে ওই রোগটি আর কারো মধ্যে ছড়াতে পারে না। জনগোষ্ঠীর বেশির ভাগকে প্রতিষেধক দেয়া না হলে ইমিউনিটি গড়ে উঠবে না। রোগটি ছড়িয়ে পড়তে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল