যেখানে টিসিবির পণ্য কিনতে করোনা টেস্ট বাধ্যতামূলক

দেশের স্বল্প আয়ের মানুষেরা যাতে কম মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পেতে পারে, এজন্য সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবির মাধ্যমে খোলাবাজারে চাল, ডাল, চিনি, তেল, পেঁয়াজের মতো কিছু পণ্য বিক্রি করা হয়। কিন্তু রাজশাহী অঞ্চলের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্থানীয় অধিবাসীদের উদ্বুদ্ধ করার কর্মসূচির অংশ হিসেবে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ বা টিসিবির পণ্য ক্রেতাদের করোনার নমুনা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের বক্তব্য হচ্ছে, দেশের উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে করোনাভাইরাস শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বেড়ে চলা সত্ত্বেও স্থানীয় লোকজনের মধ্যে তেমন কোনো উদ্বেগ বা উৎকণ্ঠা দেখা যাচ্ছে না। কোথাও কোথাও বিশেষ লকডাউন ঘোষণা করেও লোকজনকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বাধ্য করা যাচ্ছে না। এরকম পরিস্থিতির কারণে লোকজনকে সচেতন করতে রাজশাহী অঞ্চলে টিসিবির পণ্য কিনতে করোনার পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করে দেয়া হলো।

রাজশাহীর পরিস্থিতি
করোনাভাইরাস সংক্রমণের দিক থেকে যেসব জায়গা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে এর মধ্যে রাজশাহী রয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাজশাহীতে যাদের আরটিপিসিআরের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হচ্ছে তাদের মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্তের হার ৪০ ভাগের বেশি।

স্বাস্থ্য বিভাগের রাজশাহী অঞ্চলের সহকারী পরিচালক নাজমা আক্তার বলেছেন, এখানকার পরিস্থিতি এখন উচ্চ সংক্রমণের দিকে। মানুষ তো স্বাস্থ্যবিধি মানতে চায় না। কিন্তু তাদের বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কখনো কখনো বাধ্য করার চেষ্টা করা হয়।

রাজশাহী শহরে র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাজশাহীতে টিসিবির পণ্য ক্রয় করতে হলে করোনা টেস্ট বাধ্যমূলক করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে নাজমা আক্তার বলেন, লোকজনকে বলা হচ্ছে, টেস্ট করলে টিসিবির পণ্য কিনতে পারবে। এভাবে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাজশাহীতে বর্তমানে প্রতিদিন এক হাজার র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করা হচ্ছে। এর সংখ্যা বাড়িয়ে প্রতিদিন দুই হাজার করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে কর্মকর্তারা বলছেন। কর্মকর্তারা বলছেন, করোনাভাইরাসের লক্ষণ বা উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় যাদের নেগেটিভ আসছে তাদের জন্য আরটিপিসিআর পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। হটস্পট জায়গাগুলোকে সবার অ্যান্টিজেন টেস্ট করা হচ্ছে। কারণ ধরেই নেয়া হচ্ছে যে ওখানে সবাই সংক্রমিত।

নাজমা আক্তার বলেন, রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকার মধ্যে যেখানে বাণিজ্যিকভাবে মানুষের চলাচল বেশি সেখানে প্রায় সবাইকে র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের আওতায় আনা হচ্ছে।

যশোরের পরিস্থিতি
সীমান্তবর্তী যেসব জেলায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে তার মধ্যে যশোর অন্যতম। গত তিন দিনের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, সেখানে করোনাভাইরাস শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী যশোর জেলায় করোনাভাইরাস শনাক্তের হার ৩৭ ভাগ।

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনোম সেন্টারের সহযোগী অধ্যাপক ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, যশোরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়লেও বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিপদ সম্পর্কে যারা অবগত আছেন তারাও বিষয়টিকে কোনো গুরুত্ব দিচ্ছেন না।

যশোরের সাধারণ মানুষের মনোভাব বর্ণনা করতে গিয়ে অধ্যাপক জাহিদ বলেন, ‘বিষয়টি এরকম যে আপনি আপনার শত্রুকে দেখে ভয় পাচ্ছেন, কিন্তু তাকে মোকাবিলা করার কোনো ইচ্ছে নেই।’

‘করোনা বড়লোকের রোগ’
গবেষণার কাজে অধ্যাপক জাহিদ যশোর জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় প্রতিনিয়ত ঘুরছেন। এমন অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণকে গ্রামাঞ্চলের অনেক মানুষ ‘বড়লোকের রোগ’ মনে করে।

সাতক্ষীরার অবস্থা

এ দিকে বাংলাদেশের উচ্চ সংক্রমণের মধ্যে আরেকটি জায়গা হচ্ছে সাতক্ষীরা। যেখানে রোগী শনাক্তের হার ৫০ ভাগ ছাড়িয়েছিল। পরিস্থিতি বিবেচনা করে সাতক্ষীরা জেলায় ‘কঠোর’ বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

স্থানীয় সাংবাদিক এস এম আকরামুল ইসলাম বলেন, অধিকাংশ মানুষ মাস্ক পরে না ও এটা নিয়ে তাদের কোনো চিন্তাও নেই। সাধারণ মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে কোনো ভীতি নেই বলে উল্লেখ করেন আকরামুল ইসলাম। তিনি বলেন, মানুষজন বলে যে করোনা আমাদের হবে না। ওটা ‘বড়লোকদের হয়।

সাতক্ষীরা শহরে মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন করে সংসার চালান ববির ইসলাম। তার রোজগারের ওপর পরিবারের ছয়জন নির্ভরশীল। তিনি বলেন, সবকিছু যদি আটকিয়ে রাখি তাহলে তো আমাদের খাওয়া-চলা হবে না। যদি আমাদের কিছু চাউলের ব্যবস্থা করতো, তাহলে আমরা করোনাটা বেশি মানতে পারতাম।

সূত্র : বিবিসি