২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

হাসপাতালে রোগীদের সাথে ঈদ আনন্দ ভাগ করে নিচ্ছেন ডাক্তার-নার্স-কর্মচারীরা

ঈদুল ফিতরের দিনেও করোনা রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তানিয়া। - ছবি : নয়া দিগন্ত

করোনা মহামারীর মাঝে সীমিত পরিসরে হলেও ঈদ আনন্দ ভোগ করছেন দেশবাসী। কিন্তু বিরামহীন ভাবে রোগীদেরকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন দেশের বিভিন্ন হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স, কর্মচারী ও কর্মকর্তারা। আর এর মাঝেই ঈদ আনন্দ ভাগ করে নিচ্ছেন রোগীদের সাথে।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা: কামরুল হাসান জানান, ‘বছরের একটা খুশির দিন ঈদ আনন্দ। সেই আনন্দকে পরিবারের সাথে না করে হাসপাতালে এসে রোগীদের সাথে ঈদ আনন্দ ভাগ করে নিয়ে তাদেরকে সেবা করে যাচ্ছি। তাদের খুশি মানেই আমাদের আনন্দ।’

সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে কর্মরত তানিয়া ইসলাম জানান, ‘দু’মাস আগে বিয়ে করে স্বপ্নের সংসার শুরু করি। কিন্তু গত মাসে করোনা হানা দেয় আমাদের সংসারে। তিন দফায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছি। সুস্থ হয়ে আবারো কাজে ফিরেছি। হাসপাতালে রোগীদের বিরামহীন সেবায় নিয়োজিত থাকতে পেরে নিজেকে অনেক ধন্য মনে করছি।’

আজ ঈদুল ফিতরের দিনেও করোনা রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

তানিয়া ইসলামের মতো এমন সম্মুখসারির যোদ্ধা কয়েক হাজার নার্স। তারা ঈদের আনন্দকে জলাঞ্জলি দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রোগীদের কাছে গিয়েই চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। মৃত্যুভয়কে জয় করে প্রতিটি হাসপাতালে সাহসিকতার সাথে করোনাযুদ্ধে লড়ে যাচ্ছেন সম্মুখসারির এই যোদ্ধারা। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন। আবার অনেকে মৃত্যুবরণ করেছেন। তবুও তারা থেমে নেই, পরিবারের সদস্যদের ফেলে ঈদের দিনেও হাসপাতালে রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। পরিবারের সাথে নয়, ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন রোগীদের সাথে।

তানিয়া ইসলাম বলেন, ‘আন্তরিকভাবে সেবা প্রদানের মধ্য দিয়ে একজন রোগীকে সুস্থ করে তোলা হয়। আর সেবা দিতে গিয়ে রোগীদের পরিবারের সদস্য মনে করি আমরা। আমাদের পরিবারের সদস্যরাই মানসিকভাবে সাহস দেয়। তাই করোনা রোগীদের কাছাকাছি যেতে ভয় পাই না। কর্মদক্ষতা ও মানবিক আচরণ দিয়ে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার রোগীর সেবা দিয়ে যাচ্ছি।’

বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএনএ) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইসমত আরা পারভীন বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে মানুষ আজ দিশেহারা। প্রতি মুহূর্তে না ফেরার দেশে চলে যাচ্ছে মানুষ। তবুও প্রতিটি নার্স করোনা আক্রান্ত রোগীদের কাছে গিয়ে চিকিৎসা সেবা দিতে ভয় পাচ্ছে না। মানুষের মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ডাক্তার ও নার্স একমাত্র ভরসা। আর তারাই হচ্ছে সম্মুখসারির যোদ্ধা।’

তিনি বলেন, ‘ভয়-ভীতি দূরে ঠেলে নার্সরা জীবনের মায়া ত্যাগ করে সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। তারা নিবেদিতভাবে রোগীদের সেবার কাজ করে যাচ্ছেন।’

এ দিকে হাসপাতালের কর্মচারীদের নেতা আবু সাঈদ বলেন, ‘আমাদের সহকর্মীরা দিনে-রাতে রোগীদেরকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এই করোনার ঝুঁকিতেও তারা সেবা দিতে বিন্দুমাত্র পিছপা হয়নি। এমন একটা ঈদ আনন্দের দিনেও পরিবার-পরিজনকে রেখে তারা রোগীদেরকে সেবা দেয়ার জন্য হাসপাতালে ডিউটি করছেন। এই আমাদের জীবন।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের সেবায় রোগীরা যদি খুশি হন তাহলে আমরা আনন্দিত।’


আরো সংবাদ



premium cement