২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`
ভারতে ভয়াবহ রূপ

দ. এশিয়ায় করোনা সংক্রমণ দেড় কোটি ছাড়িয়েছে

দ. এশিয়ায় করোনা সংক্রমণ দেড় কোটি ছাড়িয়েছে - ছবি- সংগৃহীত

করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো অনেকটা বেকায়দায় পরেছে। করোনা বা কোভিড-১৯ সংক্রমণে সবচেয়ে ভয়বহ রূপ দেখা দিয়েছে ভারতে। দেশটিতে এখন দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা দেড় লাখ ছুঁই ছুঁই করছে। এরপর পাকিস্তান ও বাংলাদেশের পরিস্থিতি বেশি খারাপ। হিসাব অনুযায়ী শনিবার এই অঞ্চলের দেশগুলোতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দেড় কোটি ছাড়িয়েছে। ঊর্ধ্বমুখী এই সংক্রমণে শুধু ভারতেই আক্রান্ত এক কোটির বেশি। রেকর্ড করোনা সংক্রমণের সাথে দেশটিতে এখন দেখা দিয়েছে করোনার টিকা সঙ্কট।

একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিশ্বের মোট করোনায় আক্রান্তের ১১ ভাগ ও মোট মৃত্যুর ছয় ভাগ রেকর্ড করা হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার সাত দেশে। দেশগুলো হলো ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভুটান, নেপাল, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কা। বিশ্বের মোট ৭৫৯ কোটি জনসংখ্যার ২৩ ভাগের বাস দক্ষিণ এশিয়ার এই সাত দেশে।

দক্ষিণ এশিয়ায় করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুতে শীর্ষে রয়েছে ভারত। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি করোনা রোগীর হিসেবে প্রতিবেশী দেশটির অবস্থান তৃতীয়। দক্ষিণ এশিয়ার মোট করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর ৮৪ ভাগই ভারতে।

বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বাধিক জনবহুল এই দেশটিতে শনিবার সকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে এক লাখ ৪৫ হাজার ৩৮৪ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে। এই সংখ্যা এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ রেকর্ড। একই সময়ে দেশটিতে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৭৯৪ জন। চলতি সপ্তাহে টানা পাঁচ দিন ভারতে করোনার রেকর্ড সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। বিধি না মেনে জনসমাগম আর মাস্ক পরায় অনীহাকে দায়ী করছে সরকার।

এ দিকে টিকাদান কর্মসূচির গতি বাড়িয়ে প্রতিদিন প্রায় ৪০ লাখ মানুষকে করোনার টিকা দেয়া হলেও দেশটির বেশ কিছু রাজ্যে টিকার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এজন্য মহারাষ্ট্রের মুম্বাই শহরসহ বিভিন্ন রাজ্যে বন্ধ হচ্ছে টিকাদান কেন্দ্র। রাজ্য সরকারগুলোর অভিযোগ কেন্দ্র সরকার তাদের কাছে যেসব টিকা সরবরাহ করার কথা তা করছে না। ফলে টিকাদান কেন্দ্র বন্ধ করা হচ্ছে। সূত্র বলছে, ভারতের সেরাম কোম্পানি চুক্তি অনুযায়ী টিকা উৎপাদনে ব্যর্থ হচ্ছে। এতে দেশে যেমন চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করতে পারছে না, একইভাবে বিদেশেও চুক্তি অনুযায়ী টিকা রফতানি করতে কোম্পানিটি ব্যর্থ হচ্ছে। এর ফলে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ।

দক্ষিণ এশিয়ায় পাকিস্তান দ্বিতীয়
এ দিকে ভারতের পশ্চিম সীমান্তে অবস্থিত প্রতিবেশী পাকিস্তান করোনা সংক্রমণে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। সবশেষ হিসাব অনুযায়ী দেশটিতে সাত লাখের বেশি কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ হাজারের বেশি মৃত্যু হয়েছে।

ভারতের তুলনায় পাকিস্তানে আক্রান্ত ও মৃত্যুর পরিমাণ অনেক কম হলেও গত ১০ দিনে পাকিস্তানে করোনার সংক্রমণের গতি বেড়ে গেছে। স্ত্রীসহ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান নিজেও আক্রান্ত হয়েছেন করোনায়। দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, মহামারি শুরুর পর এখন হাসপাতালে যত মানুষ নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রয়েছেন এর আগে এত মানুষ আইসিইউতে ছিল না।

দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত ও পাকিস্তানের পরই শনাক্তের হিসেবে তৃতীয় অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। বিশ্ব তালিকায় যদিও বাংলাদেশের অবস্থান ৩৩, যেখানে পাকিস্তান ৩১ ও ভারত তৃতীয়। এমন পরিস্থিতিতে গত এক সপ্তাহ ধরে রেকর্ড করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে বাংলাদেশে। এই সংখ্যা সাত হাজারের বেশি। এ ছাড়া রেকর্ড সর্বাধিক মৃত্যু হচ্ছে করোনায়। প্রতিদিনই আগের রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড তৈরি হচ্ছে। এখন পর্যন্ত দেশে ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৯৩৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মোট প্রাণহানী হয়েছে নয় হাজার ৬৬১ জনের। এর মধ্যে শনিবার এক দিনে ৭৭ জন মৃত্যু হয়েছে, যা এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ রেকর্ড।

দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশেই করোনার টিকাদান কর্মসূচি চলমান থাকলেও এখনো ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে রেকর্ড সংক্রমণ ও মৃত্যু হচ্ছে করোনায়। এতে করোনার টিকা দেয়ার মাধ্যমে সংক্রমণের লাগাম টানা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশে করোনার দক্ষিণ আফ্রিকার যে ধরনটিতে বেশি আক্রান্ত হওয়ার প্রমাণ পাওয় গেছে, এতে উদ্বেগ আরো বেড়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে লকডাউনসহ বিভিন্ন ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে। কিন্তু এর সুফল এখনো দৃশ্যমান নয়।

সূত্র : রয়টার্স ও ওয়ার্ল্ডওমিটার


আরো সংবাদ



premium cement