২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

এক বছর পর করোনা টিকার কার্যকারিতা থাকবে তো!

প্রয়োগ হতে থাকা করোনার টিকা সর্বোচ্চ এক বছর কার্যকর থাকবে, দাবি গবেষকদের। - ছবি : সংগৃহীত

করোনাভাইরাস মহামারীতে বিশ্বে ২৮ লাখ ৩০ হাজারের বেশি মানুষ গত এক বছরে প্রাণ হারিয়েছেন। এখনো প্রতিদিন মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। একই সময়ে বিশ্বের ২২১ দেশ ও অঞ্চলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ১২ কোটি ৯৬ লাখ মানুষ। এ সংখ্যাও প্রতিদিন বাড়ছে। যদিও করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে বিজ্ঞানীরা একাধিক টিকা আবিষ্কার করেছেন। এসব টিকা প্রয়োগও শুরু হয়েছে চলতি বছরের শুরুর দিকে। এতে কিছুটা আশার আলো দেখা গেলেও নতুন এক গবেষণা হতাশার কথা শুনিয়েছে বিশ্ববাসীকে।

বিশ্বের একদল বিজ্ঞানী গবেষণায় দেখেছেন, এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রয়োগ হতে থাকা করোনার টিকা সর্বোচ্চ এক বছর কার্যকর থাকবে। এরপর এই টিকা আর কোনো কাজে আসবে না। কারণ করোনার স্ট্রেনগুলো দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। ফলে এসব টিকা নতুন স্ট্রেনের করোনা প্রতিরোধে সক্ষম হবে না বলে গবেষকদের ধারণা।

এমনটিই দাবি করেছেন এপিডিমিয়োলজিস্ট ও ভাইরোলজিস্ট গবেষকরা। তাদের আশঙ্কা, এক বছরেরও আগে অকেজো হয়ে পড়তে পারে কোভিড টিকার ‘ফার্স্ট জেনারেশন’। কারণ ভাইরাসের মিউটেশন।

তিনটি স্বাস্থ্যবিষয়ক আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে গবেষণাটি হয়েছে। এতে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, দ্রুতগতিতে নিজেদের বদলে ফেলছে করোনাভাইরাস। নতুন স্ট্রেনগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চীনের উহানের প্রথম ভাইরাসটির থেকে অনেক বেশি সংক্রামক। ভাইরাসটি এতই বদলে যাচ্ছে যে, বর্তমানে বাজারে থাকা ভ্যাকসিনগুলো আদৌ কতটা কার্যকরী থাকবে, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

গবেষণার অংশ নিয়েছিলেন ২৮টি দেশের ৭৭ জন বিজ্ঞানী। এর তিনের দু'ভাগ বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, তাদের সন্দেহ, বর্তমান টিকাগুলো আর এক বছর কাজ করবে। গবেষক দলের তিনের একভাগের মতে, এক বছরও নয়, বড়জোর ৯ মাস এসব টিকা কার্যকর থাকবে।

গবেষণায় অংশগ্রহণকারী বিজ্ঞানীদের বেশিরভাগ যুক্ত রয়েছেন ইয়েল, যুক্তরাষ্ট্রের জন্স হপকিন্স, লন্ডনের ইম্পিরিয়াল কলেজের মতো বিশ্বখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। গবেষকদের ৮৮ ভাগের ধারণা, বর্তমান করোনাভাইরাসের টিকাগুলোর কার্যকারিতা এড়িয়ে ভাইরাসের নতুন মিউটেশন হচ্ছে। এমনটি যদি হতে থাকে, গণটিকাদানের মাধ্যমে বর্তমান স্ট্রেনগুলোকে একসাথে শেষ করে দেয়াই হলো তা থেকে মুক্তি। নয়তো নতুন স্ট্রেন তৈরি হতেই থাকবে।

কিন্তু যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে যখন তাদের জনসংখ্যার চার ভাগের এক ভাগকে টিকা দেয়া হয়েছে, তখন দক্ষিণ আফ্রিকা, থাইল্যান্ডে এই হার মোট জনসংখ্যার মাত্র এক শতাংশ।

এ দিকে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার আশঙ্কায় ৫৫ বছরের কমবয়সীদের অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা প্রয়োগ বন্ধ করে দিয়েছে কানাডার বেশ কিছু প্রদেশ। যেমন- অন্টারিয়ো, কেবেক, ব্রিটিশ কলম্বিয়া ও আলবার্টা। কানাডায় এমনিতেই টিকাদানের গতি বেশ শ্লথ। তার মধ্যে এই প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে আরো বেশ কিছুটা ধাক্কা খেল প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর উদ্যোগ।

টিকাদানে পিছিয়ে রয়েছে এশিয়ার দেশগুলোও। দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনের মতো দেশে কোভিড টিকা কোভিশিল্ড পাঠাচ্ছে ভারত। কিন্তু ভারত সরকারের পক্ষ থেকে টিকা রফতানিতে কড়াকড়ি শুরু হওয়ায় এই দেশগুলো বিপাকে পড়েছে। তারা বিকল্প টিকার কথা ভাবছে। এর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়া জানিয়েছে, প্রায় সাত লাখ ডোজ টিকা ভারত থেকে পাওয়ার কথা ছিল তাদের। তারা পেয়েছে মাত্র ৪ লাখ ৩২ হাজার ডোজ। ফিলিপাইন জানিয়েছে, পরিকল্পনামাফিক কিছুই হচ্ছে না।

ভারতের টিকা প্রস্তুতকারী সংস্থা সিরাম ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, আপাতত দেশে টিকার চাহিদা খুব বেশি। তা সামাল দিতে গিয়ে তারা রফতানি কিছুটা কম রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা ও ওয়ার্ল্ডোমিটার


আরো সংবাদ



premium cement