২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

গরমে করোনার উচ্চ সংক্রমণ

-

করোনা সংক্রমণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে। একদিনের সংক্রমণ গত বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। সামনের দিনগুলোতে সংক্রমণ আরো বাড়ার আশঙ্কা করছেন সরকারি ও বেসরকারি সব পর্যায় থেকে। গত সোমবার সর্বোচ্চ ৫ হাজার ১৮১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সোমবারের চেয়ে সামান্য কিছু কম ৫ হাজার ৪২ জন আক্রান্ত হয়েছে। গতকাল করোনার কারণে মৃত্যুবরণ করেছে ৪৫ জন এবং আগের দিন সোমবারও ৪৫ জন মৃত্যুবরণ করেছে। গত বছর করোনায় সর্বোচ্চ শনাক্ত ছিল ২ জুলাই ৪ হাজার ১৯ জন। সোমবারের চেয়ে গতকাল শনাক্ত কম হলেও নমুনা পরীক্ষা সাপেক্ষে সোমবারের চেয়ে গতকাল শনাক্তের হার ছিল বেশি।

গতকাল ২৬ হাজার ৬২০টি নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয়েছে ১৮.৯৪ শতাংশ এবং মঙ্গলবার সারা দেশে ২৮ হাজার ১৯৫টি নমুনা পরীক্ষা করে শনাক্ত হয়েছে ১৮.৩৮ শতাংশ। জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, দেশব্যাপী আরো বেশি নমুনা পরীক্ষা করতে পারলে এমনিতেই আরো বেশি করোনা শনাক্ত হবে। কারণ করোনা পরীক্ষার মেশিন বাড়লেও সারা দেশে নুমনা সংগ্রহ এখনো সহজ হয়নি। সবাই চাইলেও নমুনা দিতে পারছে না এখনো। এ ছাড়া গরম বাড়ার সাথে সাথে সংক্রমণ বেড়ে গেছে। এখন এটা বলা যায়, বাংলাদেশে গরমে করোনা বৃদ্ধি পায়। সামনের দিনগুলোতে গরম আরো বাড়বে এবং ধরে নেয়া যায় এখনই নিয়ন্ত্রণে কঠোর না হলে সংক্রমণ আরো অনেক বাড়বে।

ইতোমধ্যে করোনা নিয়ন্ত্রণে সরকার গত সোমবার ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করেছে। নির্দেশনাগুলো না মানলে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর হওয়ার ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। জনস্বাস্থ্যবিদ অধ্যাপক ডা: মোজাহেরুল হক জানান, ‘বিপজ্জনক এ ভাইরাসটি থেকে বাঁচা এবং তা নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যবিধি মানতেই হবে। ভাইরাসটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে থাকে ফুসফুসের। এ ছাড়া ব্রেইন, হার্ট, কিডনিসহ অন্যান্য অঙ্গেরও ক্ষতি করে থাকে।’

তিনি বলছেন, ‘এমন কেউ কি আছেন যে তারা চান তাদের এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হোক? আবার ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হলে সবাইকে নয় কাউকে কাউকে কিছুদিন হাসপাতালে থাকতে হয়। নতুন করে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসপাতালে সিটও পাওয়া যাচ্ছে না এখন। এই অবস্থায় কারো উচিত হবে না এই ভাইরাসটিকে নিজের শরীরে ডেকে নিয়ে আসা এবং হাসপাতালে অবস্থান করে হাজার হাজার টাকা খরচ করা। তা না চাইলে সবারই উচিত স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলা।’

এ দিকে করোনা নিয়ন্ত্রণে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের টিকার অবশিষ্ট চালান কবে আসবে কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না। গত সোমবার সকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ‘টিকার পরবর্তী চালান কবে আসবে সে ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত নন’ বলে জানান সাংবাদিকদের। যথাসময়ে টিকার পরবর্তী চালান না এলে অন্য পরিকল্পনা করার কথাও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। টিকার ব্যাপারে জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, জনগোষ্ঠীর ৭০ শতাংশকে টিকা দিতে পারলে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হবে এবং এতে দেশ থেকে করোনা বিদায় করা সম্ভব হবে।

কিন্তু বাংলাদেশে এ পর্যন্ত টিকা এসেছে মাত্র এক কোটি দুই লাখ ডোজ। এর মধ্যে ৭০ লাখ ডোজ টিকা টাকা দিয়ে কেনা আর অবশিষ্ট ৩২ লাখ ডোজ ভারত সরকারের উপহার হিসেবে পাওয়া। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সারা দেশে গত সোমবার পর্যন্ত ৫৩ লাখ ১৯ হাজার ৬৭৯ জনকে টিকা দিয়েছে। সে হিসাবে গতকাল পর্যন্ত সরকারের কাছে ৪৮ লাখ ৮০ হাজার ৩২১ ডোজ টিকা রয়েছে।

জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, প্রথম ডোজ টিকা নেয়ার পর শরীরে অ্যান্টিবডি সৃষ্টির জন্য অবশ্যই দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিতে হবে। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিলেই টিকা গ্রহণকারী ৮৩ শতাংশ পর্যন্ত সুরক্ষিত থাকবেন। এই টিকা শতভাগ সুরক্ষা দেবে না। অবশ্য এ পর্যন্ত উদ্ভাবিত কোনো টিকাই গ্রহণকারীকে শতভাগ সুরক্ষা দিতে পারছে না বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে।

হঠাৎ করোনা আগের রেকর্ড অতিক্রম করায় গত সোমবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ভিডিও কনফারেন্স করেন দেশবাসীকে বিষয়টি অবহিত করার জন্য। এ সময় সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, প্রথম ডোজ দেয়ার পর আগামী ৮ এপ্রিল যাদের দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেয়ার সময় হবে তাদের জন্য টিকা সংরক্ষণ করা হয়েছে। তবে যত মানুষ প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন তাদের সবার জন্য এখন দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার মতো টিকা সরকারের হাতে নেই। সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, দ্বিতীয় ডোজ টিকা শুরু করার পর আরো চালান যেন আসে আমরা সে জন্য কাজ করছি। আমরা আশাবাদী দ্বিতীয় ডোজের টিকা শুরু করার পর আরো টিকা এসে যাবে।


আরো সংবাদ



premium cement