২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

কোয়ারেন্টাইনের সময়সীমা বারবার বদলে যাচ্ছে কেন

চীন থেকে ফেরত আসা বাংলাদেশিদের অনেককে আশকোনার ক্যাম্পে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছিল - ফাইল ছবি

বাংলাদেশে কোভিড-১৯ জাতীয় পরামর্শক কমিটি ব্রিটেন থেকে আসা যাত্রীদের চার দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকার পর পরীক্ষায় নেগেটিভ এলে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানোর সরকারি সিদ্ধান্ত পুনঃবিবেচনার সুপারিশ করেছে।

কমিটি বরং কোভিড-১৯ এর নতুন স্ট্রেইনের জীবাণু অন্য দেশেও ছড়িয়ে পড়েছে এ যুক্তি তুলে ধরে যুক্তরাজ্যসহ অন্য সব দেশ থেকে আসা যাত্রীদের ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থার আওতায় আনার পরামর্শ দিয়েছে সরকারকে।

জাতীয় পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা: মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, কোয়ারেন্টাইন ১৫ দিনেরই হওয়া উচিত। কারণ ৩/৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন কোনোভাবেই বিজ্ঞানসম্মত নয়।

তিনি বলেন, ‘চার দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকার পর কেউ নেগেটিভ হলেও তার মানে এই নয় যে, তিনি ঝুঁকিমুক্ত। বরং ওই চার দিনের পরেও তার লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। আর তেমনটি হলে করোনা নিয়ে এখন যে স্বস্তিতে বাংলাদেশ আছে সেটিও ঝুঁকিতে পড়তে পারে।’

তবে বিশেষজ্ঞ কমিটি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, কোয়ারেন্টাইন সময়সীমা সময়ে সময়ে পরিবর্তন হয় বাস্তব অবস্থা পর্যালোচনা করে এবং এটি সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে চূড়ান্ত করা হয়।

কোভিড-১৯ জাতীয় পরামর্শক কমিটির সর্বশেষ সভায় যোগ দিয়েছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মহিবুর রহমান।

তিনি বলছেন, ‘বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা করেই এসব বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। তাই এ নিয়ে উদ্বেগ বা বিতর্কের কিছু নেই।’

যদিও কর্মকর্তারা বলছেন কোয়ারেন্টাইন বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের করণীয় কিছু নেই বরং এটি কেবিনেট বিভাগ দেখভাল করে। কারণ এর সাথে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলে তারা মনে করেন।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেবে এ মুহূর্তে কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৩৬ হাজারের বেশি মানুষ।

তবে এর প্রায় সবাই অপ্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন অর্থাৎ নিজ ব্যবস্থাপনায় তাদের কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা।

অবশ্য নিজ ব্যবস্থাপনায় কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিরা কতটা কোয়ারেন্টাইনে থাকেন বা নিয়ম মেনে চলেন তা নিয়েও শুরু থেকেই বিতর্ক হচ্ছে।

বাংলাদেশে গত বছর মার্চের শুরু থেকেই কোয়ারেন্টাইন নিয়ে বিতর্ক চলছে বিশেষ করে কোয়ারেন্টাইনে চরম অব্যবস্থাপনা বা অবকাঠামোগত দুর্বলতার কারণে।

এর জের ধরে একদল ইটালি প্রবাসীর বিক্ষোভের কারণে শেষ পর্যন্ত তাদের নির্ধারিত সময়ের আগেই আনুষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন থেকে ছেড়ে দেয়ার ঘটনা ঘটেছিল গত জুলাইতে।

তারও আগে ফেব্রুয়ারিতে করোনাভাইরাসের উৎসস্থল চীনের উহান থেকে আসা একদল বাংলাদেশীকে যেভাবে হজ্ব ক্যাম্পের ফ্লোরে রাখা হয়েছিলো সেসব ছবি গণমাধ্যমে আসার পর তীব্র সমালোচনাও তৈরি হয়েছিল।

বাংলাদেশে মার্চের শেষ দিকে স্বাস্থ্য বিভাগ প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য তিন শতাধিক প্রতিষ্ঠানকে প্রস্তুত করার কথা জানিয়েছিল।

তখনি সরকারিভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো যে, বিদেশ থেকে ফেরা মানুষদের উপসর্গ থাকুক বা না-থাকুক ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। এই নির্দেশ না মানলে জেল-জরিমানার কথাও বলা হয়েছিল।

গত বছরের ১৬ মার্চ মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছিল।

অবশ্য চীন, ইটালি, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, ইরান ও থাইল্যান্ড থেকে কেউ বাংলাদেশে এলে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে বলা হয়েছিল ৮ মার্চ থেকেই।

এরপর থেকে মাঝে মধ্যে ভারত ও ইটালি থেকে আগত যাত্রীদের অনেককে হজ্ব ক্যাম্পে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়েছিল।

এভাবে একেক সময় কোয়ারেন্টাইন নিয়ে একেক পদক্ষেপের মধ্যেই গত বছরের শেষ দিকে বিশ্বজুড়ে আবারো করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে গত ২৮ ডিসেম্বর সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশে এলেই বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।

আবার পরে এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে বলা হয়েছে, ১৫ জানুয়ারি থেকে যুক্তরাজ্য ফেরত যাত্রীদের মাত্র চার দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকার পর পরীক্ষায় নেগেটিভ এলে তারা হোম কোয়ারেন্টাইনে যেতে পারবেন।

অন্যদিকে বাংলাদেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে ঢাকায় আসা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলকে হোটেলে মাত্র তিন দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হয়েছে।

এসব নিয়ে সরকারের ওপর মহল থেকে সিদ্ধান্ত হয় বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের কর্মকর্তারা কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

তবে আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা: মুশতাক হোসেন বলছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইনেই বলা হয়েছে, জনস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু ঝুঁকি না থাকলে যাতায়াত যত কম বাধাগ্রস্ত করা যায় সেটিই করতে হবে।

তিনি বলেন, প্রথমত ঝুঁকি পরিমাপ করতে হবে এবং দ্বিতীয়ত দেখতে হবে কোয়ারেন্টাইন জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে কি-না।

‘কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়ে গেছে যেখানে সেখানে কোয়ারেন্টাইন খুব একটা কাজে দেয় না। তবে যাত্রী যে দেশ থেকে আসবে সেখানে যদি ঝুঁকি বেশি থাকে তাহলে কোয়ারেন্টাইনের মতো ব্যবস্থা নেয়া হবে কিন্তু সেটি নিয়ে যেন বাড়াবাড়ি না হয়।’

তিনি বলেন, এখন সব দেশেই কমিউনিটি ট্রান্সমিশন চলছে তাহলে শুধু বিমানযাত্রীদের কেন কোয়ারেন্টাইন করা হবে-এই আলোচনাও আছে।

তাছাড়া কোয়ারেন্টাইন সুবিধার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা ও ব্যবস্থাপনা অবকাঠামো সুবিধা না থাকায় শুরু থেকে সবাইকে কোয়ারেন্টাইন করা যায়নি।

‘তবে জনস্বাস্থ্য সর্বাগ্রে এটি যেমন সত্য, তেমনি দেখতে হবে যে অর্থনৈতিক সামাজিক কর্মকাণ্ড যত কম বাধাগ্রস্ত করা যায়। কারণ জরুরি কাজ বিঘ্নিত হওয়া জনস্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর হতে পারে। এসব কারণেই সরকার সময়ে সময়ে পর্যালোচনা করে কোয়ারেন্টাইনের ক্ষেত্রে নানা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বলে আমার মনে হয়,’ বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

মুশতাক হোসেন অবশ্য কোভিড কারিগরি কমিটির সাথে একমত পোষণ করে বলেন, শুধু ব্রিটেন না সব দেশের জন্যই কোয়ারেন্টাইনের জন্য একটি নিয়মই প্রযোজ্য হওয়া উচিত।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
শাস্তি কমিয়ে সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনে উদ্বেগ টিআইবির যখন দলকে আর সহযোগিতা করতে পারবো না তখন অবসরে যাব : মেসি ইভ্যালির রাসেল-শামীমার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড্যানিয়েল কাহনেম্যান আর নেই বিএনপি নেতাকর্মীদের সম্পত্তি দখলের অভিযোগ খণ্ডালেন ওবায়দুল কাদের আটকের পর নাশকতা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হলো ইউপি চেয়ারম্যানকে বদর যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন পণবন্দী জাহাজ ও ক্রুদের মুক্ত করার প্রচেষ্টায় অগ্রগতি হয়েছে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঝালকাঠিতে নিখোঁজের ২ দিন পর নদীতে মিলল ভ্যানচালকের লাশ বাল্টিমোর সেতু ভেঙে নদীতে পড়া ট্রাক থেকে ২ জনের লাশ উদ্ধার যুক্তরাষ্ট্রে ছুরিকাঘাতে নিহত ৪

সকল