১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ০৮ রমজান ১৪৪৫
`

করোনার দ্বিতীয় ওয়েভের হিসাব মেলাতে পারছেন না বিশেষজ্ঞরা

করোনার দ্বিতীয় ওয়েভের হিসাব মেলাতে পারছেন না বিশেষজ্ঞরা - ছবি : সংগৃহীত

করোনাভাইরাসের সেকেন্ড ওয়েভ বা দ্বিতীয় দফা সংক্রমণ চলছে বলে মনে করেন না বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেকের বক্তব্যকে খণ্ডন করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, করোনার দ্বিতীয় দফা সংক্রমণ বা সেকেন্ড ওয়েভ এসেছে বলতে হলে কমপক্ষে ১৫ দিনের ডাটা থাকবে, যেখানে গত ১৫ দিন ধরে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে এমন তথ্য নির্দেশ করবে। কিন্তু বাংলাদেশে স্বাস্থ্য অধিদফতর দৈনিক করোনার যে তথ্য দিচ্ছে তাতে দেখা যাচ্ছে যে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ কমছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য থেকে ভাইরোলজিস্টরা বলছেন, বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের সেকেন্ড ওয়েভ এখনো শুরু হয়নি। আবার তারা বলছেন, করোনার দ্বিতীয় দফা সংক্রমণ যে আসবেই, ধরাবাঁধা এমন কোনো কিছু নেই। মানুষের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর নির্ভর করবে দ্বিতীয় দফা সংক্রমণ বা সেকেন্ড ওয়েভ আসবে কি না। 

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে গতকাল বুধবার করোনা সন্দেহে পরীক্ষিত মোট নমুনার ১১.৭৭ শতাংশ করোনা সংক্রমিত হিসেবে শনাক্ত হয়েছে। গত ২২ সেপ্টেম্বর পরীক্ষিত মোট নমুনার ১০.৯৯ শতাংশ করোনা শনাক্ত হয়েছে। আবার ২১ সেপ্টেম্বর মোট নমুনার ১৩.৬ শতাংশ করোনা আক্রান্ত ছিল। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, এপিডেমিওলজিস্ট অথবা ভাইরোলজিস্টরা হিসাব মেলাতে পারছে না যে বাংলাদেশে গত ১ থেকে ২ সপ্তাহ করোনা সংক্রমণের হার কম-বেশি ১২ শতাংশের মতো সেখানে মন্ত্রী কিসের ভিত্তিতে বলছেন যে করোনার দ্বিতীয় ওয়েভ চলছে। 

বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা: মো: নজরুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, যে তথ্য আছে তাতে দেখা যাচ্ছে করোনা সংক্রমণ কমছে। সংক্রমণ যেখানে কমছে সেখানে করোনার দ্বিতীয় ওয়েভ শুরু হয়েছে, তা স্বাস্থ্যমন্ত্রী কিভাবে বলছেন, তা আমার বুঝে আসছে না। সেকেন্ড ওয়েভ শুরু হয়ে গেছে তা বলতে হলে মোট সংক্রমণ বাড়তে হবে। তিনি জানান, করোনার দ্বিতীয় সংক্রমণ বা সেকেন্ড ওয়েভ যে আসবেই, এমন কোনো কথা নেই। আসতেও পারে আবার না-ও আসতে পারে। এ ব্যাপারে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম জানান, তবে বাংলাদেশের মানুষের চাল-চলন ও আচার-আচরণ দেখলে মনে হয় যে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস মহামারী নামে কোনো রোগ নেই। শুরুতে মাস্ক পরলেও এখন মানুষ মাস্ক পরছেন না, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাফেরা করছেন না। সরকার যে যে স্থানে লকডাউন ঘোষণা করেছিল সেখানকার বাসিন্দারা লকডাউন মেনে চলেননি। মানুষ আগের মতো স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে শুরু করছেন। করোনার দ্বিতীয় ওয়েভ এখনো শুরু হয়নি। কিন্তু মানুষের এ ধরনের উদাসীন আচরণে হয়তো দ্বিতীয় ওয়েভ শুরু হলে হতেও পারে। 
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, যাই হোক এই মুহূর্তে এটা বলা যায় যে আমাদের দেশের করোনার সেকেন্ড ওয়েভ শুরু হয়নি। মোটা দাগে বলতে গেলে বলতে হয় সেকেন্ড ওয়েভ শুরু হতে হলে সংক্রমণের সংখ্যা বাড়তে হবে।

লন্ডনের শেফিল্ড ইউনিভার্সিটির রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট ড. খোন্দকার মেহেদী আকরাম ফোনে নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের ফার্স্ট ওয়েভই তো শেষ হলো না। ফার্স্ট ওয়েভ শেষ হয়ে যাওয়ার পর যখন নতুন করে ক্রমেই সংক্রমণ বেড়ে যেতে থাকে এবং তা একনাগাড়ে ১৫ দিন বেড়ে যেতে থাকলে তখনই বলা যাবে করোনার সেকেন্ড ওয়েভ চলছে। 

তিনি বলেন, এ ব্যাপারটি আনুষ্ঠানিকভাবে বলতে গেলে অবশ্যই গত ১৫ দিনে সংক্রমণ বৃদ্ধি সংক্রান্ত ড্যাটার পর্যবেক্ষণ থাকতে হবে। ড. খোন্দকার মেহেদী আকরাম বলেন, শীতের মধ্যে হয়তো করোনার আরেক দফা সংক্রমণ বাড়তে পারে। চীন, ইউরোপ ও আমেরিকার সংক্রমণের ঘটনা থেকে এটা বলা যায় যে ঠাণ্ডার মধ্যে এ ভাইরাস অ্যাক্টিভ হয়ে থাকে বেশি। খোন্দকার মেহেদী আকরাম বলেন, বাংলাদেশের মন্ত্রী হয়তো ইউরোপ ও আমেরিকার করোনা সংক্রমণের ঘটনা দেখে প্রভাবিত হয়ে এমন মন্তব্য করে থাকতে পারেন। তবে তার বক্তব্যের কোনো প্রমাণ তিনি দেননি। আমরাও তার বক্তব্যের সপক্ষে কিছু পাচ্ছি না। 

করোনার সেকেন্ড ওয়েভ চলছে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এমন বক্তব্যে একজন বিশিষ্ট এপিডেমিওলজিস্ট নাম প্রকাশ না করার শর্তে নয়া দিগন্তকে জানান, করোনা যেভাবে শুরু হয়েছে সেভাবে শেষ হয়ে কিছু দিন বিরতি দিয়ে আবার ঠিক একই রকমভাবে শুরু হয়ে সংক্রমণ বেড়ে যেতে থাকলে কেবল তখনই বলা যাবে যে, ‘বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় দফা সংক্রমণ অথবা করোনার সেকেন্ড ওয়েভ চলছে।’ কিন্তু বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের এমন ঘটনা এখনো ঘটেনি। ফলে করোনা সংক্রমণের সেকেন্ড ওয়েভ চলছে তা প্রমাণ হচ্ছে না। বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের শেষ পর্যায়ের মাঝামাঝি অবস্থানে রয়েছে। তিনি দ্ব্যর্থহীনভাবে জানান যে, বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের সেকেন্ড ওয়েভ শুরু হয়নি। তিনি জানান, দ্বিতীয় দফা সংক্রমণ শুরু হলেও এখন থেকে কমপক্ষে দুই সপ্তাহ পর বলা যাবে।

তিনি জানান, বাংলাদেশে একটা সময় মোট নমুনা পরীক্ষার ২০ থেকে ২২ শতাংশ পর্যন্ত করোনা শনাক্ত হয়েছে। বর্তমানে মোট নমুনা পরীক্ষার ১২ শতাংশের মতো আক্রান্ত হয়েছে বলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যে দেখা যাচ্ছে। তবে তিনি বলেন, দেশের অন্যান্য এলাকার চেয়ে ঢাকায় সংক্রমণের হার বাড়ছে ধীরে ধীরে। ঢাকার এই অবস্থা থেকেও এটা বলা যাবে না যে, এখানে করোনা সংক্রমণের সেকেন্ড ওয়েভ চলছে। তিনি জানান, এটা মন্ত্রী মহোদয়ই বলতে পারবেন। তার বক্তব্যের ব্যাখ্যা তার কাছ থেকে এলেই ভালো হয়।


আরো সংবাদ



premium cement