২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

করোনাভাইরাস কি বাতাসে ছড়ায়?

করোনাভাইরাস কি বাতাসে ছড়ায়? - ছবি : সংগৃহীত

কয়েকদিন আগে পর্যন্ত করোনাভাইরাসের উপস্থিতি থাকা কোনো সমতলে স্পর্শ করার মাধ্যমেই কেবল কোভিড-১৯ সংক্রমণ হতে পারে বলে ধারণা করছিলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। শুরুর দিকে ধারণা করা হতো যে হাঁচি বা কাশির ফলে ছড়ানো ড্রপলেটের মাধ্যমেই করোনাভাইরাস ছড়ানো সম্ভব।

সে কারণেই মহামারীর শুরুর দিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তারা কোভিড-১৯ থেকে সুরক্ষার জন্য হাত ধোয়াকে অন্যতম একটি পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন। কিন্তু এখন তারা বলছেন, বিশেষ পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাসের ‘বায়ুবাহিত সংক্রমণের’ আশঙ্কা থাকতে পারে।

যেখানে মানুষের ভিড় বেশি, ঘর বন্ধ কিংবা যেখানে বাতাস চলাচলের ভালো ব্যবস্থা নেই, সেসব জায়গায় বাতাসের মাধ্যমে করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিষয়টি উড়িয়ে দেয়া যায় না, এমন কথাই এখন বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

অর্থাৎ শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় বা কথা বলার সময় মুখ থেকে বের হওয়া অতি ক্ষুদ্র কণার মাধ্যমেও করোনাভাইরাস সংক্রমণ হতে পারে।

আর এই ধরণের সংক্রমণের প্রমাণ সম্পর্কে যদি নিশ্চিত হওয়া যায়, তাহলে বদ্ধ জায়গায় কীভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, সেই সংক্রান্ত গাইডলাইনে পরিবর্তন আসতে পারে।

বায়ুবাহিত সংক্রমণ কী?
ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া-বাহিত যেসব কণা বাতাসে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত ভেসে থাকতে পারে, তেমন কণা নিশ্বাসের সাথে গ্রহণ করার মাধ্যমে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার বায়ুবাহিত সংক্রমণ হয়ে থাকে। অতি ক্ষুদ্র এসব ড্রপলেট বড় পরিসরের জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে থাকতে পারে। বায়ুবাহিত রোগের উদাহরণ হলো যক্ষ্মা, ফ্লু এবং নিউমোনিয়া।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মনে করছে, বদ্ধ জায়গায় বা যেসব জায়গায় ভিড় আছে, এরকম স্থানে বাতাসের মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়ানো সম্ভব।

বাতাসে কতক্ষণ এটি টিকে থাকে?
গবেষণায় দেখা গেছে, কৃত্রিমভাবে বাতাসে ছড়িয়ে দেয়া করোনাভাইরাস তিন ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। তবে এই পরীক্ষাটি ল্যাবরেটরিতে করা হয়েছে, আর বাস্তব জীবনে পরিস্থিতি ল্যাবরেটরির চেয়ে ভিন্ন হতে পারে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। তাই বাস্তব জীবনে ভাইরাস বেঁচে থাকার সময়ে তারতম্য হতে পারে।

বাতাসের মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়ানোকে ‘সুপারস্প্রেডিং’ হিসেবে বলা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের মাউন্ট ভারমন শহরে একজন নারী ৪৫ জনের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওই নারী সংক্রমিতদের সাথে একই গায়ক দলের অংশ হয়ে অনুষ্ঠানে গান গেয়েছিলেন।

সংক্রমিতদের মধ্যে অনেকেই সামাজিক দূরত্ব মানা সংক্রান্ত কোনো নিয়ম ভাঙ্গেননি। চীনের গুয়াংজুতে জানুয়ারিতে একই ধরণের একটি ঘটনার কথা জানা যায়। ওই ঘটনায় একজন ভাইরাস বহনকারী ব্যক্তি রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়ে নয় জনকে সংক্রমিত করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়।

বিজ্ঞানীদের মতে, ওই ঘটনায় সংক্রমিতদের একজন ভাইরাস বাহকের চেয়ে ছয় মিটার দূরে অবস্থান করছিলেন।

কী করণীয়?
একটি রোগ যেভাবে সংক্রমিত হয়, তার উপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হয় সেটির সংক্রমণ কীভাবে থামানো যাবে। কোভিড-১৯ নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বর্তমান গাইডলাইনে অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া ছাড়াও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

তবে বিজ্ঞানীদের অনেকে এখন বলছেন যে এই কাজগুলো জরুরি হলেও বাতাসে করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে নিরাপত্তা দিতে শুধু এই পদক্ষেপগুলোই যথেষ্ট নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের সবশেষ গাইডলাইনে এখনও পরিবর্তন না আনলেও নতুন পাওয়া তথ্য-উপাত্তগুলো যাচাই করে দেখছে তারা।

নুতন পাওয়া প্রমাণের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেলে গাইডলাইনে পরিবর্তন আসতে পারে, যেখানে মাস্কের আরো ব্যাপক ব্যবহার, দূরত্ব মানার ক্ষেত্রে আরো কঠোরতা অবলম্বনের - বিশেষ করে রেস্টুরেন্ট, পানশালা এবং গণপরিবহণে - বিষয়গুলোতে জোর দেয়া হতে পারে।

কেন গাইডলাইনে পরিবর্তন আনার কথা ভাবছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা?
সম্প্রতি ৩২টি দেশের ২৩৯ জন বিজ্ঞানী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে একটি উন্মুক্ত চিঠি লিখেছেন, যেখানে বায়ুবাহিত সংক্রমণের বিষয়টিকে মাথায় রেখে করোনাভাইরাস গাইডলাইন আপডেট করার আহ্বান জানান তারা।

ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করা রসায়নবিদ এবং কোলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোসে জিমেনেজ বলেন, ‘আমরা চেয়েছি যেন তারা প্রমাণগুলোকে স্বীকৃতি দেয়।’

‘এমন না যে এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিরুদ্ধে আক্রমণ। এটি একটি বৈজ্ঞানিক বিতর্ক। আমরা এটি জনসম্মুখে নিয়ে এসেছি, কারণ আমাদের মনে হয়েছে বেশ কয়েকবার বলার পরও তারা আমাদের কথা শুনছে না।’

চিঠির জবাবে বিশ‌্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ণ্ত্রণ বিভাগের কারিগরী বিষয়ক প্রধান বেনেডেটা আলেগ্রানজি বলেন, ‘জনবহুল, বদ্ধ জায়গায় করোনাভাইরাসের বায়ুবাহিত সংক্রণের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না।’


আরো সংবাদ



premium cement