২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ড্যাবের করোনা মনিটরিং কমিটির প্রতিবেদন

করোনা এবং করোনা উপসর্গে ২২ চিকিৎসকের মৃত্যু

-

করোনাভাইরাস ইস্যুতে মনিটরিং কমিটি গঠন করেছে চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)।

ড্যাবের কোভিড-১৯ মনিটরিং কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী সারা দেশে ৫ জুন (শুক্রবার) ভোর পর্যন্ত ১০৪১ জন চিকিৎসক এবং ১৪০০ জন নার্স, হেলথ টেকনোলজিস্ট, স্যাকমোসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা এবং পরীক্ষা করতে আক্রান্ত হয়েছেন। এই সময়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১৮ জন এবং করোনা উপসর্গ নিয়ে চারজনসহ সর্বমোট ২২ জন চিকিৎসক মৃত্যুবরণ করেছেন। মৃত্যুযাত্রায় নবীণ থেকে প্রবীণ চিকিৎসকও রয়েছেন।

এমতাবস্থায় চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা এবং জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে ড্যাবের কোভিড-১৯ মনিটরিং কমিটি।

ড্যাবের করোনা মনিটরিং কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছেন ডা: এ কে এম মহিউদ্দীন ভুঁইয়া মাসুমকে ও সদস্য সচিব ডা: সায়ীদ মেহবুব উল কাদির।

ডা: মেহবুব উল কাদির স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত ১৬ এপ্রিল করোনাভাইরাসে বাংলাদেশে প্রথম মৃত্যুবরণ করেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা: মঈন উদ্দিন আহমেদ। এরপর ৩ মে অধ্যাপক (অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল) ডা: মো: মনিরুজ্জামান, ১১ মে ফরেনসিক মেডিসিনের স্বনামধন্য অধ্যাপক ডা: আনিসুর রহমান, ১২ মে ইবনে সিনা হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা: আবুল মুকারিম এবং কিংবদন্তিতুল্য স্বনামধন্য সার্জন অধ্যাপক ডা. মীর মাহবুবুল আলম। পরবর্তীতে ডা: সারোয়ার ইবনে আজিজ, ডা: আজিজুর রহমান রাজু, ডা: এম এ মতিন, ডা: দিলরুবা খানম, ডা: আমিনা খান, অর্থোপেডিক সার্জারির অধ্যাপক মো: মোশাররফ হোসেন, রংপুরের ডা: আব্দুর রহমান, ডা: সাইদুর ইসলাম, বক্ষব্যাধী বিশেষজ্ঞ ডা: ওয়াহিদুজ্জামান আকন্দ, ইউরোলজিস্ট ডা: মঞ্জুর রাশিদ চোধুরী, ডিজি হেলথের সাবেক ইভালুয়েটর ডা: কে এম ওয়াহিদুল হক, বারডেম মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা: মহিউদ্দিন, চট্টগ্রামের ডা: সৈয়দ জাফর হোসাইন রুমি এবং ডা: এহসানুল করিম। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার মারা যান বিএসএমএমইউ’র ইউরোলজি বিভাগের ডা: গোলাম কিবরিয়া।

প্রতিবেদনে বলা হয়- প্রতিদিন করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে স্বাস্থ্যসেবায় জড়িত ব্যক্তিদের আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যাও বাড়ছে। ত্রুটিপূর্ণ পিপিই, মানহীন মাস্ক, ফেসশিল্ডসহ মানহীন সুরক্ষা সামগ্রী, পিপিই ব্যবহারের পর ডিসপোজাল করার জন্য বায়োহ্যাজার্ড ব্যাগ অপ্রতুলতা, চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের পিপিই পরিধান এবং খোলা যাকে ডোনিং-ডোফিং বলা হয় এ বিষয়ে কোনো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হয়নি। কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী এবং অন্যান্য জরুরী রোগীর চিকিৎসার সঠিক ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত গাইডলাইন না থাকায় স্বাস্থ্যসেবার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আক্রান্ত হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে রোগী উপসর্গ গোপন করাও অন্যতম একটি কারণ। প্রতিটি হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে, আইসিইউ বেড রোগীর চাহিদার তুলনায় স্বল্পতা আছে। বেসরকারি হাসতালগুলোকে এখনো একটি কাঠামোর মধ্যে এনে কোভিড চিকিৎসায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

ড্যাবের মনিটরিং কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়- আমরা প্রথম থেকেই বলছি- টেস্ট, টেস্ট এবং ট্রেসিং। সরকার কোনো একগুয়ে কারণে প্রথম থেকেই টেস্ট কম করছে এবং টেস্ট করার কেন্দ্র সীমিত রেখেছিল। পরবর্তীতে নানাবিধ চাপে টেস্ট করার সেন্টার এবং টেস্ট করার সংখ্যা বৃদ্ধি করে, যা এখন পর্যন্ত যথেষ্ট নয়। ৩০ মার্চ পর্যন্ত শুধু একটি প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা করেছে, মোট নমুনা সংগ্রহ করেছিল ১৩৩৮ জনের এবং করোনা শনাক্ত হয়েছিল ৪৯ জনের, ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করেছিল ৬৪ হাজার ৬৬৬ জনের, করোনা শনাক্ত হয়েছিল ৭ হাজার ৬৬৭ জনের, এবং ৩ জুন পর্যন্ত ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৫৮৩ জনের করোনা পরীক্ষা হয়েছে, করোনা শনাক্ত হয়েছে ৫৫ হাজার ১৪০ জনের এবং এ পর্যন্ত মৃতুবরণ করেছেন ৭৪৬ জন। সুতরাং আমরা হয়রানিমূলক এবং দীর্ঘসূত্রিতা নয়, আরটি-পিসিআর অর্থাৎ করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা সহজিকরণ করা এবং একদিনের মধ্যেই পরীক্ষার রিপোর্ট প্রদানের ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছি। চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের চিকিৎসার একটি ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতাল এখন পর্যন্ত করা হয়নি।


আরো সংবাদ



premium cement