২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঘূর্ণিঝড় ও করোনায় উপকূলের মানুষের ঈদ উৎসব ম্লান

ঘূর্ণিঝড় ও করোনায় উপকূলের মানুষের ঈদ উৎসব ম্লান - ছবি : সংগৃহীত

ঘূর্ণিঝড় আমফান আর করোনাভাইরাসের কারণে বাগেরহাটের উপকূলবর্তী এলাকায় দুর্গতদের মধ্যে পবিত্র ঈদুল ফিতরের কোনো আনন্দ-উৎসব দেখা যায়নি।

শরণখোলা ও মোংলায় নদী পাড়ের গ্রামের মানুষের ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িতে এখনও পানি জমে আছে। ভাটায় পানি নামলেও জলোচ্ছ্বাসে ভেঙে যাওয়া বাঁধের ফাঁক দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করছে গ্রামগুলোতে।

তবে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে নানা ধরনের ঈদসামগ্রী বিতারণ করা হয়েছে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে এ বছর দেশবাসী অন্যরকম ঈদ পালন করেছেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে আর সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মসজিদগুলোতে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। নামাজ শেষে কোলাকুলি আর হাত মেলানো থেকে বিরত ছিলেন মুসল্লিরা। কুশল বিনিময় হয়েছে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে।

গত বুধবার সন্ধ্যায় ঘূর্ণিঝড় আমফান উপকূলে তাণ্ডব চালিয়েছে। ঝড়ে বাড়িঘর, গাছপালা, ফসল, মাছের ঘের, রাস্তাঘাট ও গ্রামীণ অবকাঠামোসহ বিভিন্ন খাতে ক্ষতি হয়েছে। বাগেরহাট সদরে ভৈরব নদের পাড়ের বাঁধ ভেঙে মাঝিডাঙ্গা ও রাধাবল্লব এবং শরণখোলায় বলেশ্বর পাড়ের বগী এলাকায় রিং বাঁধ ভেঙে ও পানি উপচে বগী, দক্ষিণ চালিতাবুনিয়া, দক্ষিণ খুড়িয়াখালী, মোংলার দক্ষিণ কাইনমারী ও কানাইগর গ্রামের বিভিন্ন অংশে পানি প্রবেশ করে।

বগী গ্রামের তহমীনা বেগম বলেন, ‘আমাদের কিসের ঈদ উৎসব? বাড়িঘরে এখনও পানি জমে আছে। রাস্তাঘাট পানির নিচে। প্রতিদিন জোয়ারে বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করছে। এভাবে আমাদের পানিতে ভাসতে হয়। সরকার টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে দিলে আমাদের ভাসতে হত না।’

একই এলাকার মারুফা বেগম বলেন, ‘বাড়িতে এখনও পানি জমে আছে। চুলা বা রান্নাবান্না করার কোনো ব্যবস্থা নেই। এর মধ্যে কিসের ঈদ?’

তাদের প্রতিবেশী কামাল হাওলাদার বলেন, ‘জোয়ারে পানিতে চুলা ডুবে আছে। ঈদ উৎসব বড়লোকদের জন্য। আমরা গরিব মানুষ, আমরা ভাত খেতে পাই না। আমাদের জন্য কিসের ঈদ!’

বাড়িঘরে পানি জমে থাকা দুর্গত সব মানুষের ঈদ নিয়ে প্রায় একই রকম অনুভূতি। নদী পাড়ের এসব মানুষ সরকারের কাছে শিগগিরই টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।

জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ জানান, ঘূর্ণিঝড় আমফানে ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারিভাবে নানা ধরনের মানবিক সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে ৩০০ মেট্রিক টন চাল এবং ১০ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়িঘর নির্মাণের জন্য ঢেউটিন এবং নগদ টাকা দেয়া হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে এসব ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে।

‘বাঁধ ভেঙে গ্রামে পানি প্রবেশ করার পর দ্রুত তা নিষ্কাশনের উদ্যোগ নেয়া হয়। যেসব গ্রামে পানি প্রবেশ করেছিল তার অধিকাংশ এলাকা থেকে পানি নেমে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ নির্মাণ এবং সংস্কারের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। উপকূলবাসী শিগগিরই এর সুফল পাবেন,’ যোগ করেন তিনি।

জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, বাগেরহাটে ৪ হাজার ৩৪৯টি বাড়িঘর আংশিক এবং ৩৭৪টি বাড়িঘর সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলার ৭৫টি ইউনিয়ন এবং তিনটি পৌরসভা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মোট ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৫ হাজার ৩৩১ জন। জেলায় বিভিন্ন খাত মিলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৪০০ কোটি টাকা।

সূত্র : ইউএনবি


আরো সংবাদ



premium cement